Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Supreme Court

নাবালিকা ধর্ষণ: সুপ্রিম কোর্টে মুক্ত বৃদ্ধ ফৌজি

বৃদ্ধের আইনজীবী জানান, তাঁরা ক্ষতিপূরণ বাবদ রাজ্য সরকারের কাছে পাঁচ কোটি টাকা চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করতে চলেছেন।

সুপ্রিম কোর্টে ধর্ষণের অভিযোগ থেকে মুক্তি পেলেন বৃদ্ধ।

সুপ্রিম কোর্টে ধর্ষণের অভিযোগ থেকে মুক্তি পেলেন বৃদ্ধ।

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২০ ০৫:১২
Share: Save:

দীর্ঘদিন দেশের সেবা করেছেন, এমন এক অশীতিপর প্রাক্তন ফৌজি অফিসারের বিরুদ্ধে নাবালিকা ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল। মেয়েটির একটি কন্যাসন্তানও হয়। সোমবার সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী ওই বৃদ্ধ ফৌজি মেয়েটির সন্তানের বাবা নন। বৃদ্ধকে জেল থেকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতি সঞ্জয়কৃষ্ণ কল ও অজয় রাস্তোগি। বৃদ্ধের আইনজীবী জানান, তাঁরা ক্ষতিপূরণ বাবদ রাজ্য সরকারের কাছে পাঁচ কোটি টাকা চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করতে চলেছেন।

গত ১১ মে শিলিগুড়ির মাটিগাড়া থানায় মেয়েটির বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ‘প্রোটেকশন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস’ (পকসো) আইনে মামলা করেছিল। গ্রেফতার করা হয় বৃদ্ধকে। নাবালিকা, তার সন্তান এবং অভিযুক্তের ডিএনএ পরীক্ষা করার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। ২১ অগস্ট সেই পরীক্ষার রিপোর্ট জমা পড়ে।

জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় নামে ওই বৃদ্ধ ফৌজির কৌঁসুলি রাজদীপ মজুমদার এ দিন বলেন, “আমার মক্কেলকে অবিলম্বে জেল থেকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। বাড়িওয়ালা-ভাড়াটে বিবাদের ফলেই যে ওই বৃদ্ধের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছিল, তা জানিয়ে আদালত বলেছে, এ ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করা যেতে পারে।’’

কিন্তু ক্ষতিপূরণের মামলা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে করা হচ্ছে কেন?

রাজদীপবাবু বলেন, “ধর্ষণের মামলায় ৮০ বছরের বৃদ্ধকে গ্রেফতার করার আগে পুলিশের ভাবা উচিত ছিল। সঙ্গে সঙ্গে যদি ডিএনএ পরীক্ষা করানো হত, আমার মক্কেলকে তিন মাসের বেশি সময় ধরে জেলে থাকতে হত না। তদন্ত করলেই জানা যেত, বৃদ্ধা স্ত্রী, ছেলে, বৌমা, নাতিকে নিয়ে বাড়িতে থাকেন জয়ন্তবাবু। সেখানে নাবালিকাকে ডেকে ধর্ষণ করা সম্ভব ছিল না। যে-মেয়েটির বাবা অভিযোগ এনেছিলেন, তাঁরা এক সময় ওই বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ২০১৯-এ জয়ন্তবাবু তাঁদের তুলে দেন।”

অভিযোগ উঠেছিল, নাবালিকা প্রায়ই ওই বৃদ্ধের বাড়িতে যেত এবং তাকে বার বার ধর্ষণ করা হয়েছে। মেয়েটি যখন প্রায় ছ’মাসের অন্তঃসত্ত্বা, তখন থানায় অভিযোগ জানানো হয়। তখন আর গর্ভপাতের উপায় ছিল না। অভিযোগ জমা পড়ার দিনেই বৃদ্ধকে গ্রেফতার করা হয় এবং সেই থেকে তিনি জেলে আছেন। ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে গোপন জবানবন্দি দেয় নাবালিকা।

হাইকোর্টে যায় বৃদ্ধের পরিবার। সেখানে জামিনের আবেদন বাতিল হয়ে যায়। ডিএনএ পরীক্ষা চেয়ে হাইকোর্টেই রিট আবেদন করেন বৃদ্ধের ছেলে। হাইকোর্ট ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দেয় রাজ্যকে। রাজদীপবাবু জানান, হাইকোর্টের নির্দেশ মানেনি রাজ্য সরকার। তখন সুপ্রিম কোর্টে ছোটেন তাঁরা। তত দিনে কন্যাসন্তান হয়েছে ওই নাবালিকার। পুরো মামলাই চলে অনলাইনে। জয়ন্তবাবুর হয়ে রাজদীপবাবু ছাড়াও সওয়াল করেন কপিল সিব্বল।

প্রশ্ন উঠছে, মেয়েটি তা হলে কার অত্যাচারের শিকার? রাজদীপবাবু জানান, এই বিষয়ে শীর্ষ আদালত কিছু বলেনি। মামলাটা হয়েছিল মূলত বৃদ্ধের জামিন নিয়ে। শিলিগুড়ি কমিশনারেটের ডিসি (পশ্চিম) কুঁয়রভূষণ সিংহ বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের কথা এখনও জানা নেই। তবে তদন্ত চলায় এ ব্যাপারে আপাতত কিছু বলতে পারছি না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Supreme Court Minor Rape
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE