উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। —নিজস্ব চিত্র।
ভর্তি-জট কাটাতে শেষপর্যন্ত প্রবেশিকা ফিরিয়ে আনা হল যাদবপুরে। কর্মসমিতির সিদ্ধান্তে ৫০:৫০ ফর্মুলাতেই ভর্তি নেওয়া হবে কলা বিভাগের ছ’টি বিষয়ে।কিন্তু কর্মসমিতির বৈঠক শেষে উপাচার্য এবং সহ-উপাচার্য জানিয়ে দিলেন, তাঁরা এই সিদ্ধান্তের অংশ নন।রাত ১১টা নাগাদ উঠে যায় পড়ুয়াদের অনশন।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই যাদবপুর ক্যাম্পাসে ছিল টানটান উত্তেজনা। বাইরে বিক্ষোভ, অনশন, বৃষ্টির মধ্যেই দফায় দফায় মিছিল। আর ভিতরে কর্মসমিতির বৈঠকে তুমুল তর্ক-বিতর্ক। দুপুর গড়িয়ে বিকেল। কলা বিভাগের ভর্তি নিয়ে তখনও সমাধনসূ্ত্র বেরোয়নি।
উপাচার্য সুর়ঞ্জন দাস নিজেই বৈঠকে উপস্থিত। এক পক্ষ বলছেন, দীর্ঘ দিনের রীতি মেনে প্রবেশিকা পরীক্ষা ফিরিয়ে আনা হোক। অন্য পক্ষ নম্বরের ভিত্তিতে পড়ুয়া ভর্তির দাবিতে নিজেদের যুক্তি সাজিয়ে চলেছেন।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। ইতিমধ্যেই রটে গিয়েছে উপাচার্য পদত্যাগ করছেন। কারণ, সমাধানসূত্র মিলছে না। আচার্য কেশরীনাথ ত্রিপাঠী আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, প্রয়োজনে ভর্তি প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারেন উপাচার্য। যখন এমন টানাপড়েন চলছে, তখনই খবর এল এক জন ডিন এবং উচ্চশিক্ষা পরিষদের প্রতিনিধি মনোজিৎ মণ্ডল ছাড়া ছাড়া বৈঠকে উপস্থিত প্রত্যেক বিভাগীয় প্রধান ৫০:৫০ ফর্মুলায় কলা বিভাগে ভর্তিতে রাজি। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘অ্যাডমিশন টেস্ট’-এর ফলের সঙ্গে বোর্ডের পরীক্ষার ফল যোগ করে মেধা তালিকা তৈরি করা হবে। অর্থাৎ বোর্ডের পরীক্ষার ৫০ শতাংশ ও প্রবেশিকা পরীক্ষার ৫০ শতাংশের যোগফল থেকে তৈরি হবে সেই মেধা তালিকা।
আরও পড়ুন: যাদবপুরে ভর্তি সম্ভবত ৫০:৫০ ফর্মুলাতেই, ঘোষণা আজই?
ক্ষমতা তো সুরঞ্জন দাসের হাতেই আছে: কেশরীনাথ
কবে ভর্তি? কিভাবে ভর্তি, সব কিছু ঠিক করতে একটি অ্যাডমিশন কমিটি গঠন করা হচ্ছে। সেই কমিটিতে ডিন অফ আর্টস এবং রেজিস্ট্রার থাকবেন।
তবে কর্মসমিতির বৈঠকের পর যে খসড়া তৈরি হয়েছে, তা থেকে উপাচার্য এবং সহ উপাচার্য নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন। তাঁদের এই ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। অনেকে বলছেন, কলা বিভাগে ভর্তি বিতর্কে ইতি টানতে উপাচার্য কৌশলী ভূমিকা নিলেন। এর জবাব অবশ্য এসেছে খোদ উপাচার্যের থেকেই।সুরঞ্জন বাবু জানিয়েছেন, ‘‘এই প্রস্তাবে আমি সহমত নই। আমি এবং সহ-উপাচার্য রাজ্যপালের কাছে অব্যাহতি চাইব।’’
কর্মসমিতির বৈঠকের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে প্রকাশ করা হয় চিঠি। নিজস্ব চিত্র।
যদিও ৫০:৫০ ফর্মুলায় মেনে নিয়েছেন যাদবপুরের আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা। এটা তাঁদের নৈতিক জয় বলেই মনে করছেন আন্দোলনকারীরা।সুরঞ্জন বাবু বৈঠকের পর অনশনরত পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা করে আন্দোলন থেকে সরে আসতে অনুরোধ করেন। কলা বিভাগে প্রবেশিকা ফেরানোর দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন অধ্যাপকদের একাংশ। নিন্দায় সরব হন শিক্ষাবিদ থেকে শুরু করে প্রাক্তনীরা। এই চাপের মুখে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার পর, রাজ্যপাল তথা আচার্য কেশরীনাথ ত্রিপাঠীকে রিপোর্ট দেন উপাচার্য।
আরও পড়ুন: কার ‘মন’ পেতে চান যাদবপুরের মনোজিৎ, প্রশ্ন পোস্ট ঘিরে
আচার্য নিজে কোনও সিদ্ধান্ত না নিয়ে, দ্রুত কর্মসমিতির বৈঠক ডাকতে বলেন। এবং প্রয়োজনে উপাচার্য হস্তক্ষেপ করতে পারেন বলে মনে করিয়ে দেন তিনি। মঙ্গলবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হল উপাচার্যকে।এর আগে অবশ্য বারবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে মত বদল করতে হয়েছে কর্ম সমিতিকে। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ইচ্ছেতেই প্রবেশিকা পরীক্ষা তুলে দিয়ে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। যদিও শেষ পর্যন্ত স্বাধিকারের প্রশ্নে পিছু হঠল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy