গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল জুলাই মাসে। কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া চলাকালীন শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে পড়ুয়াদের কাছ থেকে ‘তোলা’ আদায়ের যে অভিযোগ উঠেছিল, তার প্রেক্ষিতেই সরতে হয়েছিল জয়া দত্তকে। সংগঠনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি জয়া, এমনই মনে করেছিলেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব। কিন্তু সোমবার তৃণমূল ভবনে টিএমসিপির নতুন পদাধিকারীদের যে সংবর্ধনার আয়োজন হয়েছে, সেই কর্মসূচির চেহারাই বলে দিচ্ছে, শাসক দলের ছাত্র শাখা এখনও জয়ার নিয়ন্ত্রণেই।
সোমবার বিকেলে তৃণমূল ভবনে আয়োজিত হয় টিএমসিপির নতুন সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। শুধু তৃণাঙ্কুরকে অবশ্য নয়, সহ-সভাপতি পদে পুনরায় মনোনীত হওয়া মণিশঙ্কর মণ্ডল এবং ওই একই পদে নতুন আসা রুমানা আখতারকেও সংবর্ধনা দেওয়া হয়। নতুন দায়িত্ব পাওয়া রাজ্য নেতৃত্বকে সংবর্ধনা জানানোর এই কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ জানানো হয় সংগঠনের জেলা স্তরের নেতা-নেত্রীদের। আর নতুনদের স্বহস্তে বরণ করে নেন টিএমসিপির উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপার্সন তথা তৃণণূল যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা টিএমসিপির প্রাক্তন সভানেত্রী জয়া দত্ত।
আগে কখনও এই রকম আয়োজন কিন্তু টিএমসিপি-তে হয়নি। রাজ্য কমিটির নতুন পদাধিকারীদের সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে এবং সংবর্ধনা দিচ্ছেন প্রাক্তন সভানেত্রী— এ দৃশ্য তৃণমূল ছাত্র পরিষদে বেশ বিরল। শঙ্কুদেব পণ্ডাকে সরিয়ে অশোক রুদ্রকে সভাপতি করা হচ্ছে আর তার পরে শঙ্কু তৃণমূল ভবনে আনুষ্ঠানিক ভাবে অশোককে সংবর্ধিত করছেন— এমন দৃশ্য সংগঠনের কারও কল্পনাতেও আসেনি কখনও। কিন্তু এ বার অনেকটা তেমন দৃশ্যই তৈরি হল।
আরও পডু়ন: পুলিশ হেফাজতে অসুস্থ বিজেপির জেলা সভাপতি, জেল হেফাজতে পাঠাল আদালত
দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ যখন ক্রমশ মাত্রা ছাড়াচ্ছে, তখন দলের ছাত্র সংগঠনে এত সম্প্রীতির আবহ! টিএমসিপি-র অন্দরে যে সম্প্রীতি খুব একটা নেই, তার নমুনা তো কলেজে-কলেজে পাওয়া যাচ্ছে দীর্ঘ দিন ধরেই। কোথাও কোথাও টিএমসিপি কর্মীরা নিজেদের মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষেও জড়িয়েছেন। জয়া দত্ত অপসারিত হওয়ার পরে যে আড়াই মাস সংগঠনের মাথায় কেউ ছিলেন না, সেই সময়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়ে ওঠে। তা হলে রাতারাতি কি বদলে গেল গোটা ছবি?
টিএমসিপির একাংশ বলছে, পরিস্থিতি একটুও বদলায়নি। কিন্তু পুরনো সভানেত্রী নতুন সভাপতিকে সংবর্ধনা জানাচ্ছেন কারণ, নতুন সভাপতি পুরনো সভানেত্রীর শিবিরেরই। সংবর্ধনা সভার আয়োজনও অলিখিত ভাবে জয়া দত্তর উদ্যোগেই হয়েছে বলেও টিএমসিপি সূত্রের খবর।
আরও পডু়ন: বিজেপির বাংলা বন্ধকে বেআইনি ঘোষণা করতে হাইকোর্টে জোড়া মামলা
জয়া নিজে আর টিএমসিপি সভানেত্রী পদে নেই। কিন্তু টিএমসিপির উপদেষ্টা কমিটির আহ্বায়ক পদে রয়েছেন তিনি। অভিষেক-ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত জয়া তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পদও পেয়ে গিয়েছেন। আর সভাপতি পদে যিনি বসেছেন, সেই তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য জয়ার জেলা উত্তর ২৪ পরগনারই। শুধু তাই নয়, দীর্ঘ দিন ধরেই জয়ার অনুগামী হিসেবে পরিচিত তৃণাঙ্কুর। সহ-সভাপতি পদে ফের মনোনীত হওয়া মণিশঙ্করও উত্তর ২৪ পরগনার। ইদানীং জয়ার সঙ্গে মণিশঙ্করের ঘনিষ্ঠতাও সংগঠনে প্রায় সকলেরই জানা। এই সমীকরণগুলোর কথা তুলে ধরে টিএমসিপির জয়ি-বিরোধী শিবির বলছে, সংগঠন তো সেই জয়া দত্তের নিয়ন্ত্রণেই রয়ে গিয়েছে, না থেকেও তিনিই নেতৃত্বে রয়ে গিয়েছেন। তাই ‘সম্প্রীতি’র ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। নিজের লোকেদের নানা পদে বসিয়ে নিজেই সংবর্ধনা দিচ্ছেন।
মণিশঙ্কর অবশ্য বিষয়টিকে লঘু করার চেষ্টা করলেন। তিনি বললেন, ‘‘জয়া দত্ত এই কর্মসূচির আয়োজন করেছেন, এমন নয়। সংগঠনের তরফেই এই কর্মসূচি আয়োজিত হয়েছে। জয়া দত্ত নিজের অনুগামীদের সংবর্ধনা দিচ্ছেন, এ ভাবে আমরা দেখছি না। আমরা সংবর্ধনা চাইওনি। আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এই সংগঠন করি। আমাদের প্রত্যেকের আনুগত্যই তাঁর প্রতি।’’
তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে যাঁরা ছাত্র সংগঠন দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁরা অবশ্য এই সংবর্ধনা কর্মসূচিতে আপত্তিকর কিছু দেখছেন না। সিনিয়র নেতাদের সিলমোহর না থাকলে যে তৃণমূল ভবনে এই কর্মসূচির আয়োজন করার সাহস কারও হত না, সেটাও বলা বাহুল্য। তবে এ দিনের কর্মসূচিতে যে টিএমসিপি-তে জয়া শিবিরের দাপট অক্ষুণ্ণ থাকার ছবিই ফুটে উঠেছে, তা নিয়ে সংশয় কমই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy