লক্ষ্মণ শেঠ। —ফাইল চিত্র।
ধাক্কা খেল বিজেপি। অনুগামীদের নিয়ে দল ছাড়লেন বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ। সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ছাড়া আর কিছুই করছে না, দলের মধ্যে কোনও গণতন্ত্রও নেই— অভিযোগ লক্ষ্ণণের। সেই কারণেই বিজেপি ছেড়েছেন বলে জানালেন। লক্ষ্মণ শেঠ সপার্ষদ কংগ্রেসে যাচ্ছেন বলে জল্পনা শুরু হয়েছে। তবে সে বিষয়ে এখনও স্পষ্ট করে কিছু জানাতে রাজি হননি তিনি।
রবিবার অনুগামীদের নিয়ে হলদিয়ায় একটি বৈঠক করেন লক্ষ্মণ শেঠ। সেই বৈঠকেই বিজেপি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন তমলুকের প্রাক্তন সাংসদ। ‘‘যে দল কারও একক মতের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়, সে দলে গণতন্ত্র থাকে না, সে দলে থেকে মানুষের জন্য কাজ করা যায় না,’’ দল ছেড়েই তোপ লক্ষ্মণের।
বাম জমানায় পূর্ব মেদিনীপুরে সিপিএমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা ছিলেন লক্ষ্মণ শেঠ। তমলুক লোকসভা কেন্দ্র থেকে টানা তিন বার জিতে ১১ বছর সাংসদ থেকেছেন। হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে সে সময়ে তাঁর একচ্ছত্র আধিপত্য চলত। তাঁর স্ত্রী তমালিকা পণ্ডা শেঠ ছিলেন হলদিয়া পুরসভার চেয়ারপার্সন, ছিলেন মহিষাদলের বিধায়কও। বামেদের পতনের পরে লক্ষ্মণের ‘সাম্রাজ্য’ও খান খান হয়ে যায়। তবু হলদিয়া শহরে লক্ষ্মণ শেঠের প্রভাব দীর্ঘদিন অক্ষুণ্ণ ছিল। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে হওয়া পুর নির্বাচনেও হলদিয়া পুরসভার দখল ধরে রেখেছিলেন লক্ষ্মণ-জায়া তমালিকা। কিন্তু পরবর্তী কালে দলের সঙ্গে লক্ষ্মণের দূরত্ব বাড়ে, বিচ্ছেদ হয়, লক্ষ্মণ নিজের পৃথক দলও তৈরি করেন। সে দল খুব একটা দাগ কাটতে পারেনি পূর্ব মেদিনীপুর বা হলদিয়ার রাজনীতিতে।
আরও পড়ুন: জ্বলছে বাগরি, বিরোধী-নিশানায় মমতা, ব্যবসায়ীদের দিকে আঙুল তুললেন শোভন
এককালের দোর্দণ্ডপ্রতাপ বাম নেতা অবশেষে যোগ দিয়েছিলেন বিজেপি-তে। গত কয়েক বছর বিজেপি-তেই ছিলেন। কিন্তু নিজের জেলায় বা হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে বিজেপির সংগঠনে লক্ষ্মণ একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করতে পারেননি। রাজ্য বিজেপির বর্তমান নেতৃত্ব লক্ষ্মণকে ঠিক মতো কাজে লাগাননি বলেও বিজেপিরই একাংশের মত।
লক্ষ্মণ শেঠ বিজেপি ছাড়তে পারেন বলে সম্প্রতি জল্পনা শুরু হয়েছিল। রবিবার দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করার পরে লক্ষ্মণ বলেন, ‘‘কোনও কিছুই আর জল্পনা নয়। আমরা যে বিজেপি ছেড়ে দিয়েছি, সেটা এখন ঘোষিত।’’ শুধু অগণতান্ত্রিকতা নয়, বিজেপির বিরুদ্ধে এ দিন সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগও তুলেছেন লক্ষ্মণ শেঠ। তিনি বলেছেন, ‘‘রামের সঙ্গে রহিমের অশান্তি লাগিয়ে দেওয়ার রাজনীতি আমরা করতে পারব না। বিজেপি শুধু সাম্প্রদায়িকতা ছাড়া আর কিছু বোঝে না। বিজেপি অস্ত্র নিয়ে রাজনীতি, হিংসার রাজনীতি ছাড়া আর কিছু বোঝে না।’’
আরও পড়ুন: নীতীশের দলে যোগ দিলেন প্রশান্ত কিশোর
বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য লক্ষ্মণ শেঠের দলত্যাগকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে নারাজ। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র সায়ন্তন বসু কটাক্ষের সুরে বলেন, ‘‘উনি নিজেই তো বিজেপি-তে আসার আবেদন করেছিলেন। আমরা তো ডাকিনি। সাম্প্রদায়িক দলে আসার আবেদন কেন করেছিলেন?বিজেপি যদি সাম্প্রদায়িক হয়, তা হলে তো অনেক দিন আগে থেকেই সাম্প্রদায়িক। এই দলে যোগ দেওয়ার আবেদন করার সময় কি তিনি সেটা জানতেন না? অপরিণত কথাবার্তা বলে লাভ নেই।’’
বিজেপি-ত্যাগী লক্ষ্মণ এ বার কংগ্রেসে যোগ দিতে পারেন বলে জল্পনা রয়েছে। তবে প্রাক্তন বাম সাংসদ সে বিষয়ে কোনও স্পষ্ট মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘‘এক দিনে তো সব সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। আমরা যাঁরা এক সময় সিপিএম ছেড়ে এসেছিলাম, তাঁরাই আজ সবাই মিলে বৈঠকে বসে ঠিক করেছি, বিজেপি আর করব না। তাড়াতাড়িই আবার বৈঠকে বসব। সেই বৈঠকে স্থির করব, কোন দলে যাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy