আবহাওয়া দফতর তো ঘটা করে বর্ষার আগমন বার্তা জানিয়েছিল। কিন্তু সে গেল কোথায়? প্রশ্ন অনেকের। —ফাইল চিত্র।
আষাঢ়ের প্রথম দিন। কিন্তু তাপপ্রবাহ যেন হার মানাচ্ছে ভরা বৈশাখকেও! রে়ডার-উপগ্রহ চিত্রে তন্নতন্ন করে খুঁজেও এক চিলতে মেঘের দেখা পাচ্ছেন না আলিপুর হাওয়া অফিসের আবহবিদেরা। উল্টে পশ্চিমী গরম হাওয়ার (লু) দাপটে পুড়ে খাক হওয়ার দশা কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের!
হাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, শনিবার কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে ৬ ডিগ্রি বেশি। দমদম ৪০.৩ ডিগ্রি। বাঁকু়ড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম-সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির বেশির ভাগ জায়গাতেই দিনের তাপমাত্রা ৩৭ থেকে ৪০ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। আলিপুরেরই তথ্য বলছে, অন্তত গত ১০ বছরে বর্ষা ঢোকার পরে এমন গরম দেখা যায়নি। জুন মাসে এ যাবৎকালে সব থেকে বেশি গরম পড়েছিল ১৯২৪ সালের ১ জুন (৪৩.৯ ডিগ্রি)। সেটাও বর্ষা আসার আগে। ‘‘কিন্তু বর্ষা ঢোকার পরে তাপপ্রবাহ আগে দেখেছি বলে মনে প়়ড়ছে না,’’ বলছেন এক প্রবীণ আবহবিজ্ঞানী।
এ সব দেখে আমনাগরিকদের অনেকেই বলছেন, আবহাওয়া দফতর তো ঘটা করে বর্ষার আগমন বার্তা জানিয়েছিল। কিন্তু সে গেল কোথায়? বর্ষা আদৌ এসেছে তো, এক ধাপ এগিয়ে তা নিয়েও প্রশ্ন করছেন কেউ কেউ। পরিবেশবিদদের একাংশ অবশ্য এ সব বিতর্ক সরিয়ে রেখে বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে বর্ষার চরিত্র যে বদলাচ্ছে, এটা তারই প্রমাণ। ‘‘এমন ইঙ্গিত তো আগে থেকেই মিলছিল। এ বার তা আরও প্রকট হচ্ছে,’’ মন্তব্য এক পরিবেশবিজ্ঞানীর।
আবহাওয়া দফতর কিন্তু বলছে, নিম্নচাপের হাত ধরেই ১১ জুন বর্ষা ঢুকেছিল রাজ্যে। তার পরে তা ছড়িয়েছে। উত্তরবঙ্গে তো জোরালো বর্ষা মিলছে। তা হলে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বর্ষা ঢোকার পরেও এমন অবস্থা কেন?
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বলেন, ‘‘মৌসুমি বায়ুর জোর নেই বললেই চলে। সাগরে কোনও ঘূর্ণাবর্ত বা নিম্নচাপও নেই। তার ফলে বিহার-ঝাড়খণ্ড থেকে গরম হাওয়া ঢুকছে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে।’’ কিন্তু অনেকেই বলছেন, বর্ষা তো একটানা সক্রিয় থাকে না। এক দফা মৌসুমি বায়ুর জোর বাড়ে, আবার কয়েক দিন ঝিমিয়ে থাকে সে। আগেও প্রায় প্রতি বছরই তেমন হয়েছে। কিন্তু এমন তাপপ্রবাহ তো দেখা যায়নি।
হাওয়া অফিসের অধিকর্তার ব্যাখ্যা, নিম্নচাপের টানে গাঙ্গেয় বঙ্গে ঢুকলেও বর্ষা খুবই দুর্বল। ফলে সে পূর্ব ভারতেই ঠিক মতো ছ়়ড়ায়নি। এই আটকে থাকার ফলে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে প্রবল গরম রয়েছে। তার ফলেই সেখান থেকে গরম হাওয়া বইছে। পুবালি হাওয়া বন্ধ হওয়ায় সেই লু-এর সামনে কোনও বাধাও নেই।
তা হলে বৃষ্টি আসবে কবে? কোনও আশার আলো নেই হাওয়া অফিসের কাছে। গণেশবাবু বলছেন, ‘‘বৃষ্টির কোনও আশা দেখছি না। গরম আপাতত চলবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy