শারীরিক পরীক্ষার জন্য নিয়মিতই কলকাতায় আসতে হয় তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে। শুক্রবার দুপুর থেকে তিনি ভর্তি ছিলেন এসএসকেএমের উডবার্ন ওয়ার্ডে। আচমকা রটে যায়— হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সঙ্ককটজনক অবস্থায় ভর্তি রয়েছেন অনুব্রত। হোয়াটসঅ্যাপে, ফেসবুকে এই খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর অসুস্থতার খবর নিয়ে যে রটনা চলছে, সে খবর অনুব্রতও শুনেছেন। শনিবার দুপুরে, বীরভূমে ফিরে যাওয়ার আগে, হাসপাতালে বসেই তিনি কথা বললেন আনন্দবাজারের সঙ্গে। লোকসভা ভোট থেকে অমিত শাহ, দিলীপ ঘোষ থেকে বিরোধী দলের হাল নিয়ে মুখ খুললেন এক্কেবারে নিজস্ব ঢঙেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বহু-বিতর্কিত সৈনিক মুখোমুখি হলেন আনন্দবাজার ডিজিটালের।
প্রশ্ন: আপনি এখন কেমন রয়েছেন?
অনুব্রত: আমার তো কোনও শারীরিক অসুস্থতা নেই! ছ’মাস অন্তর আমাকে চেক-আপ করাতে আসতে হয়। তাই এসেছিলাম। শুক্রবার বেলা ১২টায় ভর্তি হয়েছিলাম। এখন বাড়ি চলে যাচ্ছি।
প্রশ্ন: হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে তো খবর রটে গিয়েছিল?
অনুব্রত: জানি না কে এটা ফেসবুকে রটাল, কোনও বাড়াবাড়িও কিছু হয়নি। কেষ্ট মণ্ডল যেমন ছিল তেমনই রয়েছে। আমি মনে করি আগে যেমন টাট্টু ঘোড়ার মতো ছিলাম। এখনও রয়েছি। ২০১৯ সালের জন্য হার্ট ওকে রয়েছে। ভোটের মার্জিন দেড় লাখ আর আড়াই লাখ.. চাই। এটুকু বলতে পারি।
প্রশ্ন: বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বলেছেন লোকসভায় এ রাজ্যে ২২টি আসন পাবেন?
অনুব্রত: ওঁদের অনেক কিছুই বলতে হয়। একটা আসন পেয়ে দেখাক। আগে আসানসোল পাক। তার পর দেখছি।
দেখুন ভিডিয়ো
প্রশ্ন: রাজ্য নেতাদের ভোটের রণনীতি ঠিক করে দিয়ে গিয়েছেন অমিত শাহ?
অনুব্রত: ওরা বাচ্চা ছেলেপুলে। আমরা কি ভোট করতে জানি না? মিথ্যা কথা বলে ভোট হয় না।
আরও পড়ুন: এ বার কি ১৭ পুরসভাতেও প্রশাসক বসাবে রাজ্য সরকার?
প্রশ্ন: আপনারা অভিযোগ করেন বিজেপি ঝাড়খণ্ড থেকে লোক নিয়ে আসে?
অনুব্রত: ঠিকই তো। ভোটের সময়েও ঝাড়খণ্ড থেকে ওরা লোক আনবে। আর আমরা হাতে চুড়ি পরে বসে থাকব নাকি!
প্রশ্ন: লোকসভা ভোটে আপনার রণরীতি কী?
অনুব্রত: এখন থেকে বললে হবে না। অনেক চমক রয়েছে। মজা মানেই তো চমক। চমক মানেই তো মজা।
প্রশ্ন: নরেন্দ্র মোদী না অটলবিহারী বাজপেয়ী, কাকে এগিয়ে রাখবেন?
অনুব্রত: দেখুন প্রধানমন্ত্রী তো আমি অনেক দেখেছি। রাজীব গাঁধীর সঙ্গেও আমার ছবিও রয়েছে। আমি নিজে রাজীব গাঁধীকে প্রশ্ন করেছিলাম, তিনি উত্তরও দিয়েছিলেন। প্রথম কথা হচ্ছে, নরসিংহ রাওকে দেখেছি, বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহকে দেখেছি। দেবগৌড়াকেও দেখেছি, চন্দ্রশেখরকেও দেখেছি। কিন্তু ইন্দিরা গাঁধীর পর যদি কেউ থাকেন, তিনি হলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী।
আরও পড়ুন: লালগড়ে হদিস মিলছে না শাসক দলের জয়ী প্রার্থীদের
প্রশ্ন: নরেন্দ্র মোদীকে কত নম্বর দেবেন?
অনুব্রত: কোনও নম্বর দেওয়ার জায়গাতেই নেই। ওঁর কথাবার্তাই যেন কেমন। মেরে দেব, কেটে দেব, আওয়াজ করব, তুলে নিয়ে যাও, ভরে দেব...। এই ধরনের কথাবার্তা। প্রধানমন্ত্রী আস্তে আস্তে কথা বলবেন। সুন্দর ভাবে বলবেন। লোক শুনবে। দেখতেও ভাল লাগবে এই তো। উনি মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেন।
প্রশ্ন: আর রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ?
অনুব্রত: উনি তো কারখানায় কাজ করতেন। একেবারে চলে না। উনি নাকি বীরভূম গিয়ে বলে এসেছেন, আমাকে অ্যারেস্ট করাবেন। আমি জানি না আমি কী করেছি? আমি কী চুরি করেছি, না ডাকাতি করেছি? জানি না।
প্রশ্ন: বিজেপি বলছে ক্ষমতায় এলে ২ কোটি লোককে বাংলাদেশে পাঠাবে?
অনুব্রত: সে তো সব জেলাতেই আছে। বীরভূমেও আছে। দেখুন, অটলবিহারী বাজপেয়ীর মতো নেতা আর আসবে না। ও রকম লিডার হবে না। বার বার কংগ্রেস ফিরে এসেছে। বিজেপি মাত্র দু’বার এসেছে। এ বার আসবে কি না দেখুন। তার পর বাংলাদেশে পাঠাবে।
প্রশ্ন: রাজ্যে বিরোধী দল হিসাবে কাকে এগিয়ে রাখবেন, বিজেপি না সিপিএম?
অনুব্রত: বিরোধী তো সিপিএমই। বিজেপি লাফালাফি করে। সংগঠন আলাদা জিনিস, আর লাফালাফি আলাদা জিনিস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। ৩৫ বছরে কি ছিল, আর ৭ বছরে এ রাজ্যকে তিনি কি বানিয়ে দিয়েছেন। সবাই দেখছে। মমতার বিকল্প কেউ নেই।
প্রশ্ন: আপনি তো বিতর্কিত কথা বলেন বলে অভিযোগ করেন বিরোধীরা?
অনুব্রত: আমি কোনও বিতর্কিত কথা বলি না। তবে কিছু ভুল বললে, আমি স্বীকার করে নিই! আচ্ছা আপনি বলুন তো দিলীপবাবুদের কথাবার্তা আপনার ভাল লাগে?
(দুই চব্বিশ পরগনা, হাওড়া ও হুগলি, নদিয়া-মুর্শিদাবাদ, সহ দক্ষিণবঙ্গের খবর, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা খবর, বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের খবর পেয়ে জান আমাদের রাজ্য বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy