Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

অভাবের পাহাড় ডিঙিয়ে মেধার জয়জয়কার

কেউ পড়ার ফাঁকে ধান কেটেছেন। কেউ বাবার সঙ্গে তাঁতের কাজে হাত লাগিয়েছেন। অভাবের সঙ্গে লড়াই ওঁদের প্রতিদিনের। তার মধ্যেও উচ্চ মাধ্যমিকের মেধা-তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন রাজ্যের কয়েকজন ছাত্রছাত্রী। এখন তাঁদের উচ্চশিক্ষার খরচ নিয়ে চিন্তায় পড়েছে পরিবার।

(বাঁ-দিকে থেকে উপরে) কুন্তল বীট, কৃষ্ণেন্দু কুণ্ডু, রাজশেখর চট্টোপাধ্যায়, (বাঁ-দিকে থেকে নীচে) সর্বাণী দত্ত ও অনুকূল বর্মণ। —নিজস্ব চিত্র

(বাঁ-দিকে থেকে উপরে) কুন্তল বীট, কৃষ্ণেন্দু কুণ্ডু, রাজশেখর চট্টোপাধ্যায়, (বাঁ-দিকে থেকে নীচে) সর্বাণী দত্ত ও অনুকূল বর্মণ। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৮ ০৫:৪৮
Share: Save:

কেউ পড়ার ফাঁকে ধান কেটেছেন। কেউ বাবার সঙ্গে তাঁতের কাজে হাত লাগিয়েছেন। অভাবের সঙ্গে লড়াই ওঁদের প্রতিদিনের। তার মধ্যেও উচ্চ মাধ্যমিকের মেধা-তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন রাজ্যের কয়েকজন ছাত্রছাত্রী। এখন তাঁদের উচ্চশিক্ষার খরচ নিয়ে চিন্তায় পড়েছে পরিবার।

কুন্তল বীটের কথাই ধরা যাক। আরামবাগ বয়েজ হাইস্কুলের ছাত্রটি ষষ্ঠ হয়েছে। বাঁকুড়ার কোতলপুরের ডিঙ্গল গ্রামের বাসিন্দা কুন্তল। এতদিন বিঘাতিনেক জমি চাষ করে তাঁর বাবা কার্তিকবাবু ছেলের পড়াশোনার খরচ চালিয়েছেন। মাধ্যমিকে এক নম্বরের জন্য প্রথম দশে ঠাঁই পায়নি কুন্তল। এ বার সেই আক্ষেপ গিয়েছে। কিন্তু এখন কুন্তলের উচ্চশিক্ষা নিয়ে চিন্তায় পরিবার। কুন্তল চিকিৎসক হতে চান। কার্তিকবাবু বলেন, ‘‘ওকে পড়াতে আরও বেশি খাটব। দরকার হলে এক বিঘে জমি বেঁচে দেব।’’

বাঁকুড়ার ওন্দা রামসাগর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র কৃষ্ণেন্দু কুণ্ডু অষ্টম হয়েছেন। পড়ার ফাঁকে গরুর গাড়ি চালিয়ে ফসল তুলে এনেছেন ঘরে। পরিবারের সম্বল দেড় বিঘা জমি। ওন্দার রানিখামার গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণেন্দু পদার্থবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করতে চান। তাঁর গলাতেও প্রত্যয়ের সুর, ‘‘আরও খাটব। আমি পড়বই।’’

মেধা-তালিকায় নবম, ধনেখালির ইচ্ছাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র রাজশেখর চট্টোপাধ্যায় চান ইঞ্জিনিয়ার হতে। গোপীনগরে তাঁদের টালির চালের বাড়ি। বাবা সলিলবাবুর সাইকেল সারানোর একফালি দোকান আছে। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও রকমে ছেলের পড়া চালিয়েছি। এর পরে কী হবে জানি না।’’

চিন্তায় দুই দশমের পরিবারও। জাঙ্গিপাড়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সর্বাণী দত্তের স্বপ্ন শিক্ষিকা হওয়ার। বাবা মধুসূদনবাবু তাঁত বোনেন। যৎসামান্য আয়। মধুসূদনবাবুর কথায়, ‘‘তাঁতের যা অবস্থা, তাতে সংসার চলে না। মেয়ের উচ্চশিক্ষার খরচ বইব কী করে!’’ কোচবিহারের বড়শাকদলের অনুকূল বর্মণ ঠিক করেছিলেন, পরীক্ষায় এমন ফল করতে হবে, যাতে সামনে চলার পথ মসৃণ হয়। তিনিও দশম হয়েছেন। দিনহাটা সাহেবগঞ্জ হাইস্কুলের কলা বিভাগের ছাত্রটির বাবা অটো চালান। অনুকূল অধ্যাপক হতে চান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE