Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মোমোর গণহিড়িকে পোয়াবারো ভুয়ো গেমের

ইচ্ছে মতো ভিডিও দেখা, গেম নামানোর জন্য তার অনুমতির প্রয়োজন হয় না। সে-ই দাদুকে মাঝেমধ্যে বোঝায়, কোন গেম খেলতে হয় কী ভাবে!

অ্যাপ-স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে এমনই ভুয়ো গেম।

অ্যাপ-স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে এমনই ভুয়ো গেম।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৮ ০১:১৩
Share: Save:

স্মার্ট ফোনটির মালিকের বয়স ষাটের কোঠায়। সদ্য কেনা ফোনটিতে তিনি তেমন সড়গ়়ড়ও নন। তুলনায় ফোনটি বেশি থাকে বাড়ির সবচেয়ে ছোট সদস্য বছর ছ’য়েকের নাতনির কাছে। ইচ্ছে মতো ভিডিও দেখা, গেম নামানোর জন্য তার অনুমতির প্রয়োজন হয় না। সে-ই দাদুকে মাঝেমধ্যে বোঝায়, কোন গেম খেলতে হয় কী ভাবে!

সম্প্রতি ফোন হাতে পেয়ে সেই ভদ্রলোকের চক্ষু চড়কগাছ! তাতে ‘মোমো চ্যালেঞ্জ’ খ্যাত মোমোর ছবি দেখে তিনি প্রচণ্ড উত্তেজিত। কী ব্যবস্থা নেবেন বুঝেই উঠতে পারছেন না। তবে কি নাতনিই এই মারণ খেলার খপ্পরে পড়েছে? রহস্য ভাঙল নাতনি স্কুল থেকে ফেরার পরে। সে জানাল, ওটা আসলে ‘মোমো পাজ্‌ল গেম’! মোমোর ছবি পরপর সাজাতে হয়। সাজাতে পারলে পরের রাউন্ডে! এতে মৃত্যুর কোনও ব্যাপার নেই!

সাইবার বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ‘মোমো চ্যালেঞ্জ’ নিয়ে গত কয়েক দিনে গণ-হিস্টিরিয়া এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কী ভাবে গেমটি মোবাইলে ডাউনলোড করতে হয়, কী ভাবে খেলতে হয়— ইত্যাদি জানতে গিয়ে আরও বেশি করে ‘মোমো চ্যালেঞ্জে’র খপ্পরে পড়ছেন অনেকে। মোমো গেম নিয়ে উৎসাহ মেটাতে মোবাইলে ডাউনলোড করছেন একের পর এক ভুয়ো গেম, ম্যালওয়্যার। এক সাইবার বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘মোমোর পাহাড়-প্রমাণ জনপ্রিয়তা দেখে মোবাইল গেম প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলিও একের পর এক মোমো-গেম বানাচ্ছে। যার কোনওটিই মৃত্যু ঘটানোর মতো বিপজ্জনক নয়। তবে মোমোকে জিইয়ে রাখতে এই সব গেম ষোলো আনা সাহায্য করছে! ঢুকছে ভাইরাসও।’’

অ্যানড্রয়েড এবং আইওএস-সহ একাধিক মোবাইল অপারেটিং সংস্থার অ্যাপ-স্টোরে এখন মোমো গেমের ছড়াছড়ি। ‘মোমো’ নাম দিয়ে সার্চ করলেই খুলে যাবে ওই গেমের তালিকা। কয়েকটি ডাউনলোড করে দেখা গেল, তার সঙ্গে অন্তত মৃত্যুর কোনও যোগ নেই। ‘মোমো দ্য হরর কল’ নামে একটি গেম অ্যানড্রয়েড ফোনে ডাউনলোড করা মাত্র বিকট শব্দে ফোন বাজতে শুরু করল। ফোন ‘রিসিভ’ করার পরে একের পর এক বিজ্ঞাপনের ভিডিও চলল বেশ কিছুক্ষণ। মিনিট পনেরো পরে বোঝা গেল, ওই গেমের ‘মজা’ ওই পর্যন্তই। ‘ইনকামিং কল ফর স্কেয়ারি মোমো’ গেমটিও একই গোত্রের। এরকমই রয়েছে ‘মোমো কলড মি’, ‘মোমো কল হরর ১৮’, ‘ফাইন্ড দ্য মোমো’ গেম। ‘মোমো ক্লিকার’ নামে একটি গেমের কার্যকারিতা আবার ফোন ব্যবহারকারীর বিকট ছবি তুলে দেওয়া পর্যন্ত। ‘মোমো’ নামে একটি গেমে আবার বাঁচাতে হবে মোমো’কেই! ব্যবহারকারীর মৃত্যুর কোনও আভাস তাতে নেই।

আরও পড়ুন: মোমো কি সত্যি, সংশয়ে সিআইডি

‘ইন্ডিয়ান স্কুল অব অ্যান্টি হ্যাকিং’য়ের ডিরেক্টর সন্দীপ সেনগুপ্ত বললেন, ‘‘এ ভাবে মোমো গেম ছড়ায় না। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে যাঁরা নিজেদের অবসাদের কথা জানান তাঁদেরই মোমো গেমের কুশীলবেরা নিশানা করে। তাদের ফোনে হুমকি দিয়ে মোমো গেম খেলার লিঙ্ক পাঠানো হয়। লিঙ্কে ক্লিক করলেই ফোনে স্পাইওয়্যার ঢুকে যায়। তার পরে ফোন ওই মোমো কুশীলবদের দখলে! ফোনের ক্যামেরার মাধ্যমে মুহূর্তে এমএমএস, বা ভয়েজ রেকর্ডিং বানিয়ে ফেলতে পারে ওরা। তা দিয়ে পরে ব্ল্যাকমেল শুরু করে।’’ সন্দীপবাবু বলছেন, ‘‘লিঙ্কে ক্লিক না করলে মোমোর কিছু করার ক্ষমতা নেই।’’

তা হলে অ্যাপ-স্টোরের এই গেমগুলি কি নিরাপদ? সন্দীপবাবু বলেন, ‘‘একেবারেই নয়। নানা গেমে নানা রকমের ভাইরাস থাকতে পারে। এগুলি এড়িয়ে চলাই ভাল।’’ লালবাজারের সাইবার শাখার এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘মোমো নিয়ে বহু কিছু ঘটছে। শুধু গেম খেলা নয়, গেম নিয়ে আতঙ্ক ছড়ানোও অপরাধ। কেউ যদি ওই সব গেম থেকে আতঙ্কিত হন, নিশ্চই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ ওই আধিকারিকের পরামর্শ, ‘‘আপাতত যে কোনও রকমের মোমো গেম এড়িয়ে চলাই ভাল।’’

সিআইডির এক আধিকারিক বলেন, ‘‘মোমো গেম নিয়ে সেরকম কোনও অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যায় না। প্লে-স্টোরের গেমগুলি ক্ষতিকারক বলে আমাদের কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Momo Fake Games CID
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE