Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

পুলিশের প্রবল চাপে সাত্তোর-মামলা প্রত্যাহার করছে নির্যাতিতার পরিবার

শাসকের প্রবল চাপে শেষ পর্যন্ত সাত্তোর-কাণ্ডে পিছিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে নির্যাতিতার পরিবার। পুলিশের হুমকির মুখে নতি স্বীকার করে শারীরিক নির্যাতন এবং যৌন নিগ্রহের মামলা প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন ওই মহিলার স্বামী। বুধবার বীরভূমের সাত্তোরে নিজের বাড়িতেই এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তিনি। সব কিছু ঠিক থাকলে, আগামিকাল বৃহস্পতিবার মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। যদিও এ ব্যাপারে নির্যাতিতার কোনও মতামত জানা যায়নি। এই মুহুর্তে তিনি মুরারইয়ে নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত রয়েছেন। ফোনে বেশ কয়েক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু, তাঁর মোবাইল বেজে গিয়েছে।

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়
সাত্তোর শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৬ ১৪:০৪
Share: Save:

শাসকের প্রবল চাপে শেষ পর্যন্ত সাত্তোর-কাণ্ডে পিছিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে নির্যাতিতার পরিবার। পুলিশের হুমকির মুখে নতি স্বীকার করে শারীরিক নির্যাতন এবং যৌন নিগ্রহের মামলা প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন ওই মহিলার স্বামী। বুধবার বীরভূমের সাত্তোরে নিজের বাড়িতে বসে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তিনি। সব কিছু ঠিক থাকলে, আগামিকাল বৃহস্পতিবার মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। যদিও এ ব্যাপারে নির্যাতিতার কোনও মতামত জানা যায়নি। এই মুহুর্তে তিনি মুরারইয়ে নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত রয়েছেন। ফোনে বেশ কয়েক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু, তাঁর মোবাইল বেজে গিয়েছে।

সাত্তোরে পুলিশের হাতে নির্যাতিতা ওই মহিলাকে এ বার বীরভূমেরই মুরারই বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী করেছে বিজেপি। পুলিশি নিরাপত্তা নিয়ে তিনি প্রচারে সামিল হয়েছেন। কিন্তু তাঁর পরিবারের দাবি, দু’বেলা হুমকি দিচ্ছে পুলিশ। পরিবারের সবাইকে ফের জেলে ভরে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে। সাত্তোর মামলার মূল অভিযোগকারী তথা নির্যাতিতার স্বামী এ দিন বলেন, ‘‘আমরা আর কত দিন জেলে কাটাব? কত বার জেলে ঢুকব? বিজেপি-র কাছ থেকেও কোনও সাহায্য পাচ্ছি না। তাই পুলিশের কথা মেনে নিয়ে, অভিযোগ তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’

প্রথম থেকেই নির্যাতিতার পাশে ছিলেন বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। মামলা প্রত্যাহারের খবর শুনে তিনি ফের অভিযোগ করেন, শুধু পুলিশ নয়, তৃণমূলও বার বার ওই পরিবারকে নানা রকম ভাবে হুমকি দেখিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘এক দিকে টাকার প্রলোভন, অন্য দিকে বিভিন্ন রকমের হুমকি দেওয়া হয়েছে নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবারকে। এক জন নির্যাতিতার সঙ্গে এমনটা করা যেতে পারে ভাবতেই পারছি না।’’ দলের তরফে কী পদক্ষেপ করা হবে, তা আলোচনা করেই জানানো হবে বলে জানিয়েছেন রূপা।

মূলত নিরাপত্তার কারণেই যে ওই মামলা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এ দিন বারে বারে সে কথাই জানিয়েছে ওই পরিবার। তাঁদের অভিযোগ, প্রার্থী হিসেবে নির্যাতিতা পুলিশি নিরাপত্তা পাচ্ছেন। তিনি প্রচারেও যাচ্ছেন। কিন্তু, সমস্যায় পড়েছেন পরিবারের বাকি সদস্যেরা। নির্যাতিতার স্বামীর কথায়, ‘‘আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? বাড়ির সবাই এক বার করে জেল খেটেছে। অনেকে আট-নয় মাস করেও খেটে এসেছে। আবার নতুন করে জেলে যেতে চাই না।’’ কিন্তু, তাঁদের কেন জেলে যেতে হবে? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ বলছে, আমাদের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছো তা তুলে নাও, তা হলে কোনও ক্ষতি হবে না। না হলে, আবার জেলে ভরে দেব।’’ তাঁর দাবি অনুযায়ী, পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে তাঁরা কেউই বাইরে বেরোতে পারছেন না। আভিযোগ, বাইরে বেরোলেই জেলে ভরে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। এই অবস্থায় তাঁরা বিজেপি-র কাছ থেকেও কোনও সাহায্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। নির্যাতিতার স্বামীর কথায়, ‘‘বিজেপি তো কোনও ভাবেই পাশে দাঁড়াচ্ছে না। আমার স্ত্রীকে প্রার্থী করে তাঁকে প্রচারে নিয়ে বেরোচ্ছে তাঁরা। কিন্তু, আমাদের পরিবারের যে কী হবে, সে কথা কেউ ভাবছেন না। সে জন্যই পুলিশের চাপের কাছে মাথা নোয়াতে আমরা বাধ্য হয়েছি। সিদ্ধান্ত নিয়েছি, মামলা তুলে নেব।’’

আরও খবর
ব্লেড চালিয়ে, বিছুটি ঘষে নির্যাতন বধূকে

ঘটনার সূত্রপাত ২০১৫-য়। ওই বছরের জানুয়ারি মাসে সাত্তোরের নির্যাতিতা বধূ বর্ধমানের বুদবুদ থানার কলমডাঙা গ্রামে বাপের বাড়িতে গিয়েছিলেন। তাঁর ভাসুরপো শেখ মিঠুন সেই সময় সক্রিয় বিজেপি কর্মী। তৃণমূলের উপরে বোমাবাজির ঘটনায় মূল অভিযুক্তও বটে। মিঠুনের খোঁজে কলমডাঙায় তাঁর কাকিমার বাপেরবাড়িতে হানা দিয়েছিল বীরভূম জেলা পুলিশের একটি বিশেষ দল। অভিযোগ, মিঠুনকে সেখানে না পেয়ে তাঁর কাকিমাকে গাড়িতে তুলে গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে রাতভর অকথ্য নির্যাতন চালায় পুলিশের দলটি। তাঁকে গাছে বেঁধে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। হাতের তালু চিরে দেওয়া হয় ব্লেড দিয়ে। সারা শরীরে বিছুটি পাতা ঘষে দেওয়া হয়। কিছু পুলিশকর্মী তাঁর শ্লীলতাহানি করেন বলেও অভিযোগ। পুলিশের সঙ্গে পাড়ুইয়ের কিছু তৃণমূল কর্মীও অত্যাচার চালায় বলে তাঁর অভিযোগ। পরে পুলিশ তাঁকে বেহুঁশ অবস্থায় ইলামবাজার থানায় রেখে যায়। এর পরেই নির্যাতিতার স্বামী অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের সাত্তোরের ছয় তৃণমূলকর্মীর কথা বলা হয়েছিল। তার কিছু দিনের মধ্যেই সাত্তোরের নির্যাতিতা ওই বধূকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেই সময়ে, পুলিশের পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছিলেন, ‘‘নিশ্চয়ই কিছু আছে! না হলে পুলিশ কি এমনি এমনি করবে সব!’’

ঘটনার পর থেকেই নির্যাতিতার বাড়ির সামনে পুলিশি প্রহরা বসানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ওই পরিবারের অভিযোগ, প্রথম থেকে কোনও দিনই সেই প্রহরার ব্যবস্থা করা হয়নি। নির্যাতিতা নির্বাচনে দাঁড়ানোর পর থেকে তাঁদের বাড়ির সামনে অস্থায়ী ক্যাম্প করে দু’জন করে পুলিশ কর্মী প্রহরায় থাকেন। তাঁদের দাবি, আসলে নিরাপত্তা দিতে নয়, পরিবারের সকলের উপরে নজরদারি চালাতেই পুলিশ ওই প্রহরার ব্যবস্থা করেছে।

যে পুলিশের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ, সেই পুলিশের হুমকির মুখেই এ বার মামলা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হচ্ছে নির্যাতিতার পরিবার। যদিও এ ব্যাপারে বীরভূম পুলিশের কোনও মতামত জানা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sattor-case birbhum TMC Police BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE