Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Police Death

বছর ঘুরলেও বিচার অধরা, আক্ষেপ মালিক পরিবারের

২০১৭-র ১৩ অক্টোবর রঙ্গিত নদীর তীরবর্তী সিংলা জঙ্গলে ‘বিমল গুরুং পাকড়াও অভিযানে’ গিয়ে নিহত হয়েছিলেন রাজ্য পুলিশের সাব-ইনস্পেক্টর মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা অমিতাভ।

পুত্রহারা: অমিতাভ মালিকের ছবির সামনে বাবা সৌমেন মালিক এবং মা গঙ্গাদেবী। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

পুত্রহারা: অমিতাভ মালিকের ছবির সামনে বাবা সৌমেন মালিক এবং মা গঙ্গাদেবী। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:৩৮
Share: Save:

বছর ঘুরতে আর কয়েক দিন। অথচ ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের অবস্থান অজানা। কেন এমন হবে! সে প্রশ্নই তুলছেন দার্জিলিঙে নিহত পুলিশকর্মী অমিতাভ মালিকের বাবা সৌমেন মালিক। মৃত্যুর ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে থাকা সিআইডি অবশ্য ‘বিচারাধীন বিষয়’ বলে এ নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ ।

২০১৭-র ১৩ অক্টোবর রঙ্গিত নদীর তীরবর্তী সিংলা জঙ্গলে ‘বিমল গুরুং পাকড়াও অভিযানে’ গিয়ে নিহত হয়েছিলেন রাজ্য পুলিশের সাব-ইনস্পেক্টর মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা অমিতাভ। তাঁর বাড়ির অদূরেই ফাঁকা জমিতে ‘শহিদ অমিতাভ মালিক স্মৃতি রক্ষা উদ্যান’-এর কাজ শেষ হয়েছে। তবে এখনও আবরণ উন্মোচন হয়নি উদ্যানে বসানো অমিতাভের মূর্তি। সে সব পেরিয়ে পাটুলি শরৎকাননে একতলার মালিক বাড়িতে ঢুকতেই চোখ আটকাল দেওয়ালে। সেখানে রয়েছে খাকি উর্দির অমিতাভের ছবি। আর বাড়ির ইতিউতিও রয়েছে অমিতাভের নানান ছবি। সেই ছবির একটিতে হাত দিতে দিতে উত্তর ২৪ পরগনার খড়িবাড়ির একটি চিংড়ি রফতানিকারী সংস্থার কর্মী সৌমেন বললেন, ‘‘আমরা কি বিচার পাব না! আমাদের কি জানার অধিকার নেই আমার ছেলেকে যারা মারল, তারা কারা!’’ পাশে দাঁড়িয়ে চোখ ভরা জল নিয়ে সৌমেনের বক্তব্যে সম্মতি দিলেন অমিতাভের মা গঙ্গাদেবীও।

অমিতাভের মৃত্যুর ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করেছিল সিআইডি। চার্জশিটও জমা পড়েছে। তবে তাতে নাম ছিল না গুরুংয়ের। আর সেই সময়ে ‘বাংলার অখণ্ডতা রক্ষার্থে শহিদ অমিতাভ’—এমন স্লোগান বা ব্যানার-হোর্ডিং চোখেও পড়েছিল। সেই প্রসঙ্গ টেনেই সৌমেনের অভিযোগ, দার্জিলিঙের পুলিশ তাঁদের খোঁজ নেয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘কেন দার্জিলিং পুলিশের কেউ একবারও খোঁজ নেয়নি। পাহাড়ে শান্তি ফিরেছে, তা ফেরাই উচিত ছিল। কিন্তু কেন এক জন দক্ষিণবঙ্গের ছেলের প্রাণ গেল! ’’ এ সব বলতেই চোখের পাতা ভিজেছিল সন্তানহারা পিতার। এ বিষয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্রর প্রতিক্রিয়া ফোন বা এসএমএসে পাওয়া যায়নি।

১৩ অক্টোবরের প্রসঙ্গে কোনও কথা বলতে চান না উত্তর ২৪ পরগনার জেলা পুলিশে কর্মরত অমিতাভের স্ত্রী বিউটি। তিনি বলেছেন, ‘‘এই দিনটি আমার কাছে তো বিশেষ দিন নয়, বরং সর্বনাশের। তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করব না।’’ অমিতাভের মৃত্যুর কয়েক দিনের মধ্যেই শরৎকাননের বাড়ি ছেড়েছিলেন তাঁর স্ত্রী বিউটি। তার পর আর ফেরেননি। অমিতাভ-বিউটির ঘরের স্মৃতিও তাই শূন্য এখানে।

উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ অমিতাভের ভাই অরুণাভের অভিযোগ, বাড়িতে ফিরেছে শুধু অমিতাভের ব্যবহৃত উর্দি। দাদার চাকরিজীবনের নথি মেলেনি। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা শিক্ষা বিভাগে চুক্তিভিত্তিক হিসাবে কাজে যোগ দিয়েছিলেন অরুণাভ। কারণ, তাঁর বয়স ১৮ পূর্ণ হওয়ার পরেই চাকরিটি স্থায়ী হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত অগস্টে অরুণাভের ১৮ হলেও স্থায়ী চাকরি হয়নি তাঁর। কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁর চাকরি সংক্রান্ত নথিপত্র জেলা শিক্ষা বিভাগের আধিকারিকেরা বিকাশ ভবনে পাঠাতে পারেন বলে জানিয়েছেন অরুণাভ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police Death Family Justice Bimal Gurung
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE