Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ধান চাষের জন্য জল কিনতে হচ্ছে চড়া দামে

পূর্ব বর্ধমানে বেশির ভাগ চাষিই ‘লাল স্বর্ণ’ প্রজাতির ধানের চাষ করেন। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এক কেজি ধান উৎপাদনের জন্য বীজ তলা করা, চারা রোয়া ইত্যাদিতে লাগে ১,৬০০ থেকে ২,২০০ লিটার জল।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব প্রতিবেদন 
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৯ ০৩:৩০
Share: Save:

শ্রাবণ মাসে জলাভাব। তাই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে কার্যত পৌষ মাস চলছে শ্যালো বা সাব-মার্সিবল পাম্প মালিকদের একাংশের। মাটির নীচের জল তুলে চড়া দাম হাঁকছেন তাঁরা। আমন ধানের বীজতলা করা বা তা বাঁচানোর জন্য মাথা নুইয়ে সে দরই মানতে হচ্ছে চাষিদের। কিন্তু এ ভাবে জল তোলায় অদূর ভবিষ্যতে পানীয় জলের অভাব দেখা দিতে পারে। কারণ, তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় ভূগর্ভের জলের ভাঁড়ার পূরণ হওয়ার রাস্তা বন্ধ।

পূর্ব বর্ধমানে প্রায় ৩ লক্ষ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এ বার। বুধবার পর্যন্ত সেখানে চাষ হয়েছে হাজার ৫০ হেক্টরে। কারণ, জুলাই মাসে গড়ে যেখানে ৩০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হওয়ার কথা, তার অর্ধেকও হয়নি।

পূর্ব বর্ধমানে বেশির ভাগ চাষিই ‘লাল স্বর্ণ’ প্রজাতির ধানের চাষ করেন। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এক কেজি ধান উৎপাদনের জন্য বীজ তলা করা, চারা রোয়া ইত্যাদিতে লাগে ১,৬০০ থেকে ২,২০০ লিটার জল। এই জল জোগাড়ে মন্তেশ্বর, মেমারির মতো বহু ব্লকেই চড়া দামে শ্যালো বা সাব-মার্সিবল পাম্পের মালিকদের দ্বারস্থ হচ্ছেন চাষিরা। মন্তেশ্বরের খাঁদরা গ্রামের চাষি দীপঙ্কর চক্রবর্তী, পিপলন গ্রামের অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়রা জানাচ্ছেন, বিঘা প্রতি দু’হাজার টাকার চুক্তিতে জল কিনছেন তাঁরা। চুক্তির মেয়াদ ধান পাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ, ধান পাকতে যদি ১৩৫ থেকে ১৪৫ দিন সময় লাগে, পুরো সময়টাই (বৃষ্টি হলেও) পাম্প মালিককে টাকা দিয়ে জল কিনতে হবে তাঁদের।

বাঁকুড়াতেও পুরো মরসুমের জন্য জল নিতে হবে—চাষিদের এমনই চুক্তি করতে বলা হচ্ছে। দর বিঘা প্রতি দেড় হাজার থেকে সতেরোশো টাকা। ঘণ্টা প্রতি দর ১৫০-২০০ টাকা। চারা রোয়ার জন্য এক বিঘা জমিতে কাদা করতে ঘণ্টা সাত-আটেক জল দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তার পরে জমিতে জল জমিয়ে রাখার প্রশ্ন। ফলে, টাকার অঙ্কটা সে হিসেবেও কম হচ্ছে না।

পূর্ব মেদিনীপুরে বৃষ্টির ঘাটতি ৪০ শতাংশ। এখনও ২৫ শতাংশ বীজতলা তৈরির কাজ বাকি। পাঁশকুড়া, কোলাঘাট, পটাশপুর, এগরা, কাঁথি ইত্যাদি এলাকায় পাম্পে ভূগর্ভস্থ জল তুলে দেওয়া হচ্ছে জমিতে। পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা রোড, গোয়ালতোড় প্রভৃতি এলাকায় বিক্ষিপ্ত ভাবে পাম্প চালিয়ে জল নিচ্ছেন চাষিরা। বিঘা প্রতি ছ’শো-সাতশো টাকা খরচ বাড়ছে জলের জন্য। প্রতি ঘণ্টার চুক্তিতেও জল কেনা চলছে।

পূর্ব বর্ধমানের একাধিক সাব-মার্সিবল পাম্প মালিক জানাচ্ছেন, আমন ধানের মরসুমে সেচ সেবিত নয়, এমন এলাকায় অন্য বার তাঁরা গড়ে বিঘা প্রতি ২০০ টাকা দরে জল বিক্রি করেন। কোনও চাষি এক বিঘা জমির জন্য জল নিলে গোটা মরসুমে জলের জন্য খরচ ৬০০ টাকা। যেখানে কৃষি সমবায়ের মাধ্যমে চাষিরা জল নেন, সেখানে ওই খরচটাই গোটা মরসুমে ৪০০ টাকা। এ বার বৃষ্টির অভাব পাম্প মালিকদের কপাল খুলে দিয়েছে।

‘স্টেট ওয়াটার ইনভেস্টিগেশন ডিরেক্টরেট’-এর কর্তাদের বক্তব্য, ইতিমধ্যেই মাটির নীচে জলের অবস্থার নিরিখে পূর্ব বর্ধমানের ১১টি ব্লককে ‘সেমিক্রিটিকাল’ চিহ্নিত করা হয়েছে। অর্থাৎ, মাটির নীচে পর্যাপ্ত জল নেই। জল তোলা মানে বিপদ বাড়ানো।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Monsoon Farmers Rain Water
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE