Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

আচমকা চাল-টাকা সব বন্ধ, ক্ষোভে ফুঁসছে জমি আন্দোলনের গর্ভগৃহ সিঙ্গুর

২০১৬ সালের অগস্টে সুপ্রিম কোর্ট গাড়ি কারখানার জন্য জমি অধিগ্রহণ অবৈধ বলে ঘোষণা করে। চাষিদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশও দেয় শীর্ষ আদালত। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জমি ‘চাষযোগ্য’ করে ফেরত দিতে কাজ শুরু করে প্রশাসন। গত বছরের গোড়ার দিকে জমি ফেরানোর প্রক্রিয়া শেষ হয়।

সিঙ্গুরের সেই জমি।—ফাইল চিত্র।

সিঙ্গুরের সেই জমি।—ফাইল চিত্র।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
সিঙ্গুর শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:১২
Share: Save:

উৎসবের মরসুমে ফের ক্ষোভের মেঘ! সেই সিঙ্গুর! আদালতের নির্দেশে চাষিরা জমি ফিরে পেয়েছেন। কিন্তু অভিযোগ, আচমকা জুলাই মাস থেকে বন্ধ হয়ে গিয়েছে তাঁদের সরকারি আর্থিক সাহায্য। গত মাস থেকে মিলছে না বরাদ্দ চালও। উৎসবের মরসুমে মাথায় হাত পড়েছে ওই চাষিদের। কারণ, জমি আগাছা আর নোংরা জলে ঢেকে যাওয়ায় অনেকেই এখনও চাষ করতে নামতে পারেননি। এ বার জোড়া অপ্রাপ্তি তাঁদের ক্ষোভের মাত্রা বাড়াল।

এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সিঙ্গুরের চাষিরা যে চাল-টাকা পাচ্ছেন না, সেটা জানা ছিল না। আমি চাষিদের সঙ্গে কথা বলে প্রশাসনের কাছে জানতে চাইব।’’ জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, ‘‘সিঙ্গুরের চাষিরা যেমন চাল-টাকা পান, তেমনই পাবেন। নীতিগত কোনও পরিবর্তন হয়নি। ব্যাঙ্কের কারণে টাকা পেতে ওঁদের হয়তো কিছুটা দেরি হচ্ছে। আমি বিষয়টি দেখছি।’’

টাটাদের কারখানার জন্য সিঙ্গুরের অধিগৃহীত জমি চাষিদের ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জমির বদলে সরকারি চেক নিতে ‘অনিচ্ছুক’, এমন ৩৬০০ পরিবারের জন্য ২০১৩ সালের মাঝামাঝি থেকে অনুদান হিসেবে মাসে ২০০০ টাকা এবং পরিবারপিছু দু’টাকা কেজি দরে মাসে ১৬ কেজি করে চাল দেওয়া শুরু করে তৃণমূল সরকার। টাকা আসত সংশ্লিষ্ট চাষির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। খাদ্য দফতরের দেওয়া টোকেনের ভিত্তিতে চাল মিলত রেশনে। সেই সাহায্যেই এ বার প্রথম ছেদ পড়ল বলে অভিযোগ।

আরও পড়ুন: ‘ছুটিই ছুটি!’ নবান্নে এখন কাজের পাহাড়

চাষিদের কথায়, গত মাসে তাঁরা টোকেন পাননি। বেড়াবেড়ির রেশন ডিলার রামকৃষ্ণ দাস বলেন, ‘‘গত মাসে টোকেন জমা পড়েনি। তাই চাষিদের চাল দিতে পারিনি।’’

২০১৬ সালের অগস্টে সুপ্রিম কোর্ট গাড়ি কারখানার জন্য জমি অধিগ্রহণ অবৈধ বলে ঘোষণা করে। চাষিদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশও দেয় শীর্ষ আদালত। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জমি ‘চাষযোগ্য’ করে ফেরত দিতে কাজ শুরু করে প্রশাসন। গত বছরের গোড়ার দিকে জমি ফেরানোর প্রক্রিয়া শেষ হয়।

কিন্তু এখনও বহু চাষি নিজের জমিতে নামতে পারেননি। সরকারি সাহায্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা অথৈ জলে। তাঁদেরই একজন খাসেরভেড়ির মধুসূদন বারুই। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘চাষ থেকে কোনও আয় করতে পারছি না। সরকার যে চাল আর টাকা দিত, এখন সেটাও পাচ্ছি না। উৎসবের মাসে খরচ বেশি হয়। আর সরকার এখনই সব কিছু বন্ধ করে দিল!’’ এক সময় জমি-আন্দোলনের অন্যতম মুখ দুধকুমার ধাড়া বর্তমানে সিঙ্গুর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য। তিনি বলেন, ‘‘এখানকার চাষিদের অবস্থা এখন বেশ খারাপ। সরকার পরিস্থিতি বিবেচনা করে দ্রুত কিছু করুক।’’

জেলা সিপিএম সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘চাষিরা তৃণমূলের উপরে ভরসা করে ডুবতে বসেছেন।’’ সরকারকে বিঁধেছেন বিজেপির ওবিসি মোর্চার রাজ্য সম্পাদক স্বপন পালও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE