—প্রতীকী ছবি।
এ বার মাধ্যমিকের প্রায় সব পরীক্ষাই শাবানা খাতুনকে দিতে হয়েছে নার্সিংহোম থেকে। পাশে সদ্যোজাত শিশুকন্যাকে নিয়ে।
গত বছর তার বয়সি আর সবাই যখন মাধ্যমিকের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনতলার শাবানা খাতুনকে বসতে হয়েছিল বিয়েতে। জানতই না পুলিশ প্রশাসন। আর মাধ্যমিকের শুরুতেই প্রসবযন্ত্রণা টের পেল ১৭ বছরের মেয়েটি!
এখন সন্তান পালনের দায়িত্ব বেড়েছে শাবানার। মাধ্যমিক পাশ করলেও পড়াশোনা বন্ধ করে এখন সে ঘোর সংসারী! এখন যে তাঁদের আর কিছু করার নেই ঠারেঠোরে তা মানছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা।
রাজ্যের সর্বত্রই নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করতে পুলিশ প্রশাসন, চাইল্ড লাইনের তৎপরতা বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের সচেতনতার নজিরও সামনে আসছে। কোনও ছাত্রী নিজের বিয়ে নিজেই রুখে দিচ্ছে— এমন উদাহরণও কম নেই। পুরুলিয়ার রেখা কালিন্দী, বীণা কালিন্দী থেকে শুরু করে বহরমপুরের কাছে নবগ্রামের জুলেখা খাতুন বা হরিহরপাড়ার সাকিনা খাতুন— নিজের বিয়ে রুখে এরা নজির গড়েছে। সামাজিক সচেতনতার এটা যদি একটি দিক হয়, অন্য দিকটায় কিন্তু এখনও আঁধার। যেখানে বাস শাবানাদের।
শাবানার মা, সন্দেশখালির জেলিয়াখালির বাসিন্দা ছায়রা বিবির দাবি, অল্প বয়সে মেয়েদের যে বিয়ে দিতে নেই, তা তিনি জানতেন না। জানলে দিতেন না। অনেকে আবার অভাব-অনটনের কারণ দেখান। রাজ্যের শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রচুর বাল্যবিবাহ আটকানো যাচ্ছে। কিন্তু কিছু রক্ষণশীল পরিবার এখনও রয়েছে যারা মনে করে, ভাল পাত্র পেলে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেওয়া ভাল। আর কিছু ক্ষেত্রে মেয়েরা নিজেরা সম্পর্ক তৈরি করে পালাচ্ছে। সমস্যা এই দুই জায়গাতেই।’’
আরও পড়ুন: বন্দুক ছেড়ে কলম ধরলেন অর্ণব, জেল থেকেই ‘সেট’ দিয়ে ছাত্র পড়াতে চান এই মাওবাদী
সমস্যা যে কত গভীর হতে পারে, তা টের পাচ্ছেন হরিণঘাটার বসন্তপুর গ্রামের গৌরাঙ্গ শিকদার। সোশ্যাল মিডিয়ায় আলাপ করে তাঁর মেয়ে পূজা (১৭) মাসদুয়েক আগে বাড়ি থেকে পালিয়ে গাইঘাটার এক যুবককে বিয়ে করে। ক’দিন আগে শ্বশুরবাড়িতে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় পূজার। গৌরাঙ্গবাবু টাকার দাবিতে শ্বশুরবাড়িতে মেয়েকে খুনের অভিযোগ দায়ের করায় পুলিশ পূজার স্বামী উজ্জ্বল, শ্বশুর বিশ্বনাথ এবং শাশুড়ি আরতিকে গ্রেফতার করেছে। এখন গৌরাঙ্গের আক্ষেপ, ‘‘স্বপ্ন ছিল পূজাকে লেখাপড়া শিখিয়ে নিজের পায়ে দাঁড় করানোর। একটা ভুলে সব শেষ হয়ে গেল।’’
এ ক্ষেত্রেও ওই নাবালিকার বিয়ের কথা পুলিশ জেনেছে তার মৃত্যুর পরে। একটি জেলা প্রশাসনের এক কর্তা মানছেন, নাবালিকা বিয়ে বন্ধে সচেতনতা বাড়ানোর কর্মসূচি নেওয়া হলেও কিছু ক্ষেত্রে ফাঁক থেকেই যাচ্ছে। সেই ফাঁক গলেই নাবালিকা বিয়ে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে পরিণতি খারাপ হচ্ছে। কিন্তু যখন তা জানা যাচ্ছে, কিছুই করার থাকছে না।
একই আফসোস রাজ্যের নারী ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী শশী পাঁজারও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy