আসানসোল রেল হাসপাতালে অসুস্থ শিশু। শৈলেন সরকারের তোলা ছবি।
দূরপাল্লার ট্রেনের কামরাতেই মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েছিল কোলের শিশুটি। মা-বাবা দিশাহারা। বড় স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ালে নেমে যাবেন বলেই ভাবছেন। ইতিমধ্যে ফোনে খবরটা পেয়ে উদ্যোগী হলেন এক বন্ধু। রেলমন্ত্রীকে টুইট করে সাহায্য চেয়ে পাঠালেন। কাজ হল ম্যাজিকের মতো।
বুধবার বিকেলে ঝাড়খণ্ডের কিউল স্টেশন থেকে ১২২৫৪ ডাউন অঙ্গ এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার শঙ্কর পণ্ডিত। সঙ্গে স্ত্রী ও দু’বছরের মেয়ে বহ্নিশিখা। ট্রেনটি কিউল থেকে ছেড়ে হাওড়া হয়ে যশোবন্তপুর যায়। শঙ্করবাবুদের গন্তব্য বেঙ্গালুরু। সন্ধের একটু পর থেকেই হঠাৎ প্রবল বমি আর পায়খানা শুরু হয়ে গেল ছোট্ট মেয়েটির। অল্প সময়ের মধ্যে একেবারে নেতিয়ে পড়ল সে। অসহায় শঙ্করবাবু তখন ভাবছেন, সামনে মধুপুর স্টেশনে নেমে যেতে হবে। বেঙ্গালুরুতে ফোন করে সব বললেন এক বন্ধুকে। সেই বন্ধুই তখন বললেন, ‘‘ট্রেনে ইদানীং অনেক ধরনের জরুরি পরিষেবা চালু হয়েছে। রেলমন্ত্রীকে টুইট করছি। আশা করি একটা উপায় হবে।’’ বন্ধুর কথা শুনে মধুপুরে আর নামেননি শঙ্করবাবুরা। এক রাশ উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন।
ইতিমধ্যে রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর টুইটারে ঘটনাটা জানিয়ে সাহায্য চাইলেন শঙ্করবাবুর বন্ধু। টুইটারেই দিয়ে দিলেন শঙ্করবাবুর মোবাইল নম্বর। মিনিট পনেরোর মধ্যে রেলের তরফে ফোন এল শঙ্করবাবুর কাছে। রাত পৌনে ৯টা নাগাদ ট্রেন থামল আসানসোলে। শঙ্করবাবুরা ছিলেন এ-ওয়ান কামরায়। সেখানে হাজির হলেন রেলের চিকিৎসকদল। শিশুটিকে পরীক্ষা করে তাঁরা বললেন, এখনই হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। স্টেশনে আগে থেকেই এনে রাখা হয়েছিল অ্যাম্বুল্যান্স। তাতে চাপিয়েই শঙ্করবাবুদের নিয়ে যাওয়া হল আসানসোল রেল হাসপাতালে। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হল চিকিৎসা।
বৃহস্পতিবার শঙ্করবাবু জানালেন, বহ্নিশিখা এখন অনেকটাই ভাল আছে। হাসপাতালের বিছানায় বসে খেলাধুলো করছে। রেল হাসপাতালের চিকিৎসক সুখেন গরাই বললেন, ‘‘শিশুটির শরীর থেকে এত জল বেরিয়ে গিয়েছিল যে, সময় মতো হাসপাতালে না আনলে বড় বিপদ হতে পারত।’’ শঙ্করবাবু এখন অনেকটাই নিশ্চিন্ত। বললেন, ‘‘বিপদে রেলকে এমন ভাবে পাশে পাব ভাবতেই পারিনি।’’
রেলের নিয়মই হল, চলন্ত ট্রেনে যাত্রীরা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু এত দিন অসুস্থতার খবর দেওয়া-নেওয়ার কোনও চটজলদি বন্দোবস্ত ছিল না। ফলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সুরাহা হতো না। এ বছর রেল বাজেটে রেলমন্ত্রী এই বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। তার পরেই ওয়েবসাইট, টুইটার ও ফেসবুকের মাধ্যমে সহায়তা চাওয়ার ব্যবস্থা করেছে রেল। মন্ত্রী নিজে একাধিক বার টুইট দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। দিন কুড়ি আগেই বারাণসী থেকে দিল্লিগামী একটি ট্রেন কুয়াশায় দীর্ঘক্ষণ আটকে ছিল। খিদেয় অস্থির হয়ে উঠেছিল পাঁচ বছরের একটি বাচ্চা। তার বাবা টুইট করা মাত্র দুধ আর বিস্কুটের ব্যবস্থা করে রেল। নভেম্বর মাসের শেষের দিকে আর একটি ঘটনায় এক ভদ্রলোক বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে যাচ্ছিলেন রাজস্থান। যাওয়ার পথেই টুইট করে বলেন, নামার পরে বাবাকে স্টেশন থেকে বের করার সময় সাহায্য পেলে ভাল হয়। নির্দিষ্ট স্টেশনে ট্রেন থামতেই ভদ্রলোক দেখেন, স্টেশনমাস্টার নিজে আরও লোকজন এবং একটি হুইলচেয়ার নিয়ে অপেক্ষা করছেন।
শুধু কি এই? কিছু দিন আগে মহারাষ্ট্রে ট্রেনে হেনস্থার শিকার হয়ে টুইট করেছিলেন এক মহিলা। মন্ত্রীর তৎপরতায় দ্রুত ওই মহিলাকে উদ্ধার করেন রেল কর্তৃপক্ষ। আবার খড়্গপুরে সৌরভ কুমার নামে রেলের এক ইঞ্জিনিয়ার খুনের ঘটনায় দোষীদের ধরার দাবি ওঠে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে। তখনও টুইট করে তদন্তের নির্দেশ দেন রেলমন্ত্রী। তদন্তে গতি আসে, দু’জন গ্রেফতারও হয়।
টুইট দেখে ঠিক কী ভাবে সক্রিয় হয় রেল? বহ্নিশিখার ক্ষেত্রে যা ঘটেছে, তা এই রকম। নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে শঙ্করবাবুর বন্ধুর আর্তি দেখে সচিবালয়কে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে নির্দেশ দেন রেলমন্ত্রী। দিল্লিতে রেল বোর্ডের অফিসে আছে মাস্টার কন্ট্রোল রুম। সেখানে যোগাযোগ করে সচিবালয়ের কর্তারা তৎক্ষণাৎ জানতে পারেন, ট্রেনটি আসানসোলের কাছাকাছি রয়েছে। বিষয়টি জানানো হয় পূর্ব রেলকে। তারা আবার জানায় আসানসোলের ডিআরএম-কে। তিনিই খবর দেন আসানসোল রেলওয়ে হাসপাতালে। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, ‘‘এই পরিষেবাকে এখন যাত্রীদের অধিকার হিসেবেই দেখছে রেল। শিশুটি সুস্থ হয়ে ওঠায় রেল পরিবার খুব খুশি।’’ তিনিই জানান, রাজধানী বা দুরন্ত এক্সপ্রেসে প্রথমে ট্রেনের মধ্যেই ঘোষণা করে জানতে চাওয়া হয়, কোনও চিকিৎসক যাত্রী রয়েছেন কি না। না-পেলে কাছে নিকটবর্তী যে হাসপাতাল রয়েছে, সেখান থেকে চিকিৎসক এনে অসুস্থ যাত্রীকে পরীক্ষা করানো হয়। প্রয়োজনে তাঁকে হাসপাতালেও পাঠানো হয়। এর জন্য যাত্রীদের টাকা গুনতে হয় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy