Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Visva Bharati

উপাসনায় উপাচার্যের আসনে সাফাইকর্মী

করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে চলা কর্মীদের সম্মান জ্ঞাপনবিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, করোনা সংক্রমণের সঙ্গে লড়াইয়ে যাঁরা নিজেরা ঝুঁকি নিয়ে সমাজ ও পরিবেশকে সুস্থ রাখার কাজ নিরন্তর করে যাচ্ছেন, সাপ্তাহিক উপাসনার মধ্য দিয়ে বিশ্বভারতী ধারাবাহিক ভাবে তাদের সম্মান জ্ঞাপন করে চলেছে।

আদিবাসী সাফাইকর্মীকে আচার্যের আসনে বসিয়ে হল কাচমন্দিরের সাপ্তাহিক উপাসনা। কালীচরণ হেমব্রম নামে ওই সাফাইকর্মী সাত বছর ধরে বিশ্বভারতীতে কর্মরত।— নিজস্ব চিত্র

আদিবাসী সাফাইকর্মীকে আচার্যের আসনে বসিয়ে হল কাচমন্দিরের সাপ্তাহিক উপাসনা। কালীচরণ হেমব্রম নামে ওই সাফাইকর্মী সাত বছর ধরে বিশ্বভারতীতে কর্মরত।— নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২০ ০৩:১৭
Share: Save:

“দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে, যাবে না ফিরে/ এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে।” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই মহামিলনের বার্তাকে প্রতিষ্ঠা দিয়েই কাচমন্দিরে বুধবারের সাপ্তাহিক উপাসনায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের এক সাফাই কর্মীকে আচার্যের আসনে বসিয়ে উপাসনা হল বিশ্বভারতীতে। কালীচরণ হেমব্রম নামে ওই সাফাই কর্মী সাত বছর ধরে বিশ্বভারতীর কাচমন্দির এবং উদ্যান বিভাগে সাফাইয়ের কাজে কর্মরত। এমন একটি সম্মান পেয়ে আপ্লুত কালীচরণবাবু। তিনি বলেন, “কোনও দিন ভাবতেও পারিনি যে মন্দির আমি রোজ পরিষ্কার করি, একদিন সেখানেই আচার্যের আসনে বসার স্বীকৃতি পাব। বিশ্বভারতীর আজকের এই সম্মান আমার সারা জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওনা হিসেবে থাকবে।”

বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, করোনা সংক্রমণের সঙ্গে লড়াইয়ে যাঁরা নিজেরা ঝুঁকি নিয়ে সমাজ ও পরিবেশকে সুস্থ রাখার কাজ নিরন্তর করে যাচ্ছেন, সাপ্তাহিক উপাসনার মধ্য দিয়ে বিশ্বভারতী ধারাবাহিক ভাবে তাদের সম্মান জ্ঞাপন করে চলেছে। এ দিনের সিদ্ধান্ত সেই প্রক্রিয়ারই অঙ্গ। এর আগে এই প্রক্রিয়ারই অঙ্গ হিসেবে চিকিৎসক অনির্বাণ দাশগুপ্ত, বিশ্বভারতীর নিরাপত্তাকর্মীর রূপা পাল এবং শান্তিনিকেতন থানার ওসি কস্তুরী মুখোপাধ্যায়কেও আচার্যের আসনে বসানো হয়েছিল। এ বার সেই আসনে বসলেন কালীচরণবাবু।

বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৭ সালে উপাচার্য সুজিতকুমার বসুর আমলে ১০ জন সদস্যকে নিয়ে বিশ্বভারতীতে সাফাইয়ের কাজ শুরু করেছিল আদিবাসী স্বনির্ভর সংগঠন ‘মহাদল’। এই ‘মহাদলে’রই সদস্য কালীচরণবাবু। বর্তমানে বিশ্বভারতীর উদ্যোগ বিভাগ ও অন্য ভবনগুলি মিলিয়ে মোট ১৬০ জন কর্মী ‘মহাদলে’র হয়ে বিশ্বভারতীতে কাজ করেন।

লকডাউনের সময় গোটা বিশ্বভারতী চত্বর বন্ধ থাকা সত্ত্বেও ‘মহাদলে’র কর্মীরা নিয়মিত কাজ করে গিয়েছে। ক্যাম্পাস চত্বরের আবর্জনা পরিষ্কার করে এবং গাছের পরিচর্যা করে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য তাঁরা বজায় রেখেছিলেন। তারই স্বীকৃতি স্বরূপ কালীচরণবাবুকে এ দিন সাপ্তাহিক উপাসনায় আচার্যের আসনে বসিয়ে সম্মান জানানো হয়।

বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্বভারতীর বর্তমান ছাত্র, অধ্যাপক, প্রাক্তনী, আশ্রমিক সকলেই। এমন ঘটনা বিশ্বভারতীর ইতিহাসে নজিরবিহীন বলে স্বীকার করেছেন সকলেই। মহাদলের প্রতিষ্ঠাতা তথা সভাপতি সুকুল মাড্ডি বলেন, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আমল থেকেই বিশ্বভারতীর উন্নতিকল্পে স্থানীয় আদিবাসীরা সবসময় সহায়তা করেছেন। বর্তমান উপাচার্য যেভাবে আমাদের সহায়তাকে আজ স্বীকৃতি দিলেন তার জন্য কোনও ধন্যবাদই যথেষ্ট নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Visva Bharati Shantiniketan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE