Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বটানিক্যালের দূষিত জলে ফের মরল মাছ

ওই উদ্যানে কয়েক বছর আগেও একই ঘটনা ঘটেছিল। এ দিন সেখানকার ২৪টি জলাশয়ের মধ্যে একটিতে মাছ মরে যাওয়ার খবর পেয়ে কর্তৃপক্ষ দ্রুত সাফাইয়ের কাজ শুরু করলেও জলাশয়গুলি দূষণমুক্ত করতে গঙ্গার জল ঢোকানোর ব্যবস্থা কবে হবে, সে ব্যাপারে তাঁরা কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি।

বটানিক্যাল গার্ডেনের এই জলাশয়েই ভেসে ওঠে মরা মাছ (ইনসেটে)। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

বটানিক্যাল গার্ডেনের এই জলাশয়েই ভেসে ওঠে মরা মাছ (ইনসেটে)। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিবপুর শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৯ ০১:৫৯
Share: Save:

প্রতিটি জলাশয়ই ছেয়ে গিয়েছে কচুরিপানায়। আগাছায় ঢেকে গিয়েছে পাড়। তারই মধ্যে জলে ভাসছে আধখাওয়া পাউরুটি, চিপসের প্যাকেট, সফ্‌ট ড্রিঙ্কের বোতল। শনিবার সকালে হাওড়ার বটানিক্যাল গার্ডেনের তেমনই একটি জলাশয়ে দেখা গেল, কিছু মাছ জলে খাবি খাচ্ছে। আর বেশ কয়েকটি মাছ মরে ভেসে উঠেছে।

ওই উদ্যানে কয়েক বছর আগেও একই ঘটনা ঘটেছিল। এ দিন সেখানকার ২৪টি জলাশয়ের মধ্যে একটিতে মাছ মরে যাওয়ার খবর পেয়ে কর্তৃপক্ষ দ্রুত সাফাইয়ের কাজ শুরু করলেও জলাশয়গুলি দূষণমুক্ত করতে গঙ্গার জল ঢোকানোর ব্যবস্থা কবে হবে, সে ব্যাপারে তাঁরা কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি।

উদ্যান সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানকার জীববৈচিত্রের জন্য জলাশয়গুলির গুরুত্ব অপরিসীম। আগে এই জলাশয়গুলি পরস্পরের সঙ্গে পাইপলাইনের মাধ্যমে যুক্ত ছিল। গঙ্গা থেকে আসা জোয়ারের জল একটি লকগেট দিয়ে ওই পাইপলাইনে ঢুকত-বেরোত। যার ফলে জল দূষিত হওয়ার সুযোগ থাকত না। কিন্তু ১০-১২ বছর আগে লকগেটটি খারাপ হয়ে যায়। বুজে যায় জলাশয়গুলির মধ্যে পারস্পরিক সংযোগ ব্যবস্থা। আদালতে মামলা হওয়ায় বিচারক উদ্যান কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে লকগেট সারানোর নির্দেশ দেন। কিন্তু অভিযোগ, আজ পর্যন্ত সেই নির্দেশ মানা হয়নি। এ দিন সকালে ওই উদ্যানের লেরাম লেকে একের পর এক মাছ ভেসে ওঠায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। ঘটনাটি প্রথম চোখে পড়ে ‘বটানিক্যাল গার্ডেন ডেলি ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সদস্যদের। তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে খবর দেন উদ্যান কর্তৃপক্ষকে। খবর পেয়ে ছুটে আসেন যুগ্ম অধিকর্তা উমর শরিফ। তিনি দ্রুত মরা মাছ তুলে ফেলে কচুরিপানা পরিষ্কারের ব্যবস্থা করেন।

উমর বলেন, ‘‘কচুরিপানা পরিষ্কার করা দরকার ঠিকই, কিন্তু উদ্যানে আসা ভ্রমণার্থীরা মাছেদের খাওয়াতে জলে নানা রকম খাবার ফেলেন। সেগুলি পচে গিয়ে জল দূষিত হয়। সফ্‌ট ড্রিঙ্কের বোতল থেকেও জল দূষিত হতে পারে। সেই কারণেও মাছ মরতে পারে।’’ যুগ্ম অধিকর্তা জানান, খুব শীঘ্রই উদ্যানের জলাশয় সংস্কারের কাজ শুরু হবে। তার জন্য নতুন যন্ত্র আসছে দেড়-দু’মাসের মধ্যে।

পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে। ‘বটানিক্যাল গার্ডেন ডেলি ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক তাপস দাস বলেন, ‘‘কচুরিপানা যদি নিয়মিত পরিষ্কার করা হত, তা হলে এত মাছের ক্ষতি হত না। জলে অক্সিজেনের অভাবে খাবি খাচ্ছে মাছগুলো। এত দিন মরেনি। কচুরিপানা পরিষ্কার না হলে আরও মাছ মারা যাবে।’’ ওই অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, পাউরুটি বা রুটি থেকে দূষণ হয়নি। এ সব কর্তৃপক্ষের বানানো তথ্য।

এ বিষয়ে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘এই ঘটনা জলের দূষণ থেকে ঘটে থাকতে পারে। জল কী ভাবে দূষিত হল, তা দেখতে হবে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ,

এর আগেও এ রকম হয়েছে। তখন দেখা গিয়েছিল, বাইরের উৎস থেকে জল দূষিত হয়েছিল। আমার মনে হয়, এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের আরও সতর্ক হওয়া উচিত। আমি এই বিষয়টি পরিবেশ আদালতে উত্থাপন করা যায় কি না দেখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fish Pollution Pond Botanical Garden
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE