Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

ক্ষতিপূরণ পায়নি মৃত মৎস্যজীবীর পরিবার

ভিক্ষে করে দিন কাটাচ্ছেন মোহনলাল হালদার ও তাঁর স্ত্রী রাধারানি। কাকদ্বীপের পূর্ব গঙ্গাধরপুর গ্রামের বাসিন্দা হালদার দম্পতির ছেলে বছর বাইশের মঙ্গল মারা গিয়েছেন মাস দু’য়েক আগে। ট্রলারডুবিতে ছেলের মৃত্যুর পরে মাকে ভিক্ষে করে সংসার চালাতে হচ্ছে।

একমাত্র ছেলের মৃত্যুর পর কোনও মতে বেঁচে মোহনলাল ও রাধারানি। ছবি: দিলীপ নস্কর

একমাত্র ছেলের মৃত্যুর পর কোনও মতে বেঁচে মোহনলাল ও রাধারানি। ছবি: দিলীপ নস্কর

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৪১
Share: Save:

প্রিয়জনের মৃত্যুতে চোখের জল শুকিয়ে এসেছে। এখন চিন্তা শুধু পেট চালানোর। গত তিন মাসে পাঁচটি ট্রলার ডুবে কাকদ্বীপের ৩৬ জন মৎস্যজীবীর মৃত্যু হয়েছে। জনা দশেক এখনও নিখোঁজ। এ দিক ও দিক থেকে কুড়িয়ে-বাড়িয়ে মৃতের পরিবারগুলি ৩০-৫০ হাজার টাকা করে পেয়েছিল শ্রাদ্ধশান্তির কাজটুকু সারার জন্য। সেই ভাঁড়ার তলানিতে। এখন অপেক্ষা সরকারি সাহায্যের।

এর আগে ২০১০ সালে নৌকাডুবিতে মৃতের পরিবারগুলিকে ৪ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছিল। তবে এ বার সরকার এই পরিবারগুলিকে দেয়নি কিছুই।

এই অবস্থায় ভিক্ষে করে দিন কাটাচ্ছেন মোহনলাল হালদার ও তাঁর স্ত্রী রাধারানি। কাকদ্বীপের পূর্ব গঙ্গাধরপুর গ্রামের বাসিন্দা হালদার দম্পতির ছেলে বছর বাইশের মঙ্গল মারা গিয়েছেন মাস দু’য়েক আগে। ট্রলারডুবিতে ছেলের মৃত্যুর পরে মাকে ভিক্ষে করে সংসার চালাতে হচ্ছে।

এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, এক চিলতে দরমার বাড়ির বাইরে বসে বৃদ্ধ দম্পতি। বেলা আ়ড়াইটে বেজে গেলেও হাঁড়ি চড়েনি। মোহনলাল চোখে দেখেন না। রাধারানির কথায়, ‘‘ছেলে মারা যাওয়ার পরে ট্রলার মালিক হাজার তিরিশ টাকা দিয়েছিল। অধিকাংশ টাকাই শ্রাদ্ধের কাজে খরচ হয়ে গিয়েছে। বাকি টাকা বৌমা বাপের বাড়িতে নিয়ে চলে গিয়েছে।’’ পড়শি সুনীতা হালদার জানালেন, গোটা পাড়ায় সকলেরই অভাবের সংসার। তবু হালদারদের অবস্থা দেখে যে যা পারেন, সাহায্য করেন। রাধারানি কথায়, ‘‘আমাদের খাওয়া জোটে না। সরকারও কিছু দিল না।’’

রাধারানিদের বাড়ি থেকে কিছুটা এগোলেই চিত্ত দাসের বাড়ি। চিত্তও মারা গিয়েছেন। প্লাস্টিক দিয়ে ঘেরা একটা ছাউনির নীচে দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে থাকেন তাঁর স্ত্রী বিট্টু। স্বামীর মৃত্যুর পরে সাত বছরের ছেলে সুমনকে ইটভাটায় কাজে পাঠাতে হয়েছে। দিনে ৬০- ৭০ টাকা মেলে। বিট্টুর আক্ষেপ, ‘‘ওই টাকায় তিনটে
পেট চলে কখনও!’’

কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী সংগঠনের নেতারা জানান, ২০১০ সালে কাকদ্বীপ থেকে পূর্ব মেদিনীপুরে যাওয়ার পথে নৌকাডুবিতে ৮৩ জন মারা গিয়েছিলেন। সাত দিনের মধ্যে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের তরফে ৪ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ মিলেছিল। সংগঠনের সম্পাদক বিজন মাইতির কথায়, ‘‘তিন মাসে এত জন মৎস্যজীবী মারা গেলেন। অথচ, কেউ সরকারি সাহায্য পেল না!’’

দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও অবশ্য বলেন, ‘‘তালিকা অনুযায়ী, ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ মঞ্জুর হয়েছে। চেকও তৈরি হয়েছে।’’ কাকদ্বীপের মহকুমাশাসক রাহুল নাথ বলেন, ‘‘চেক বিলির ক্ষেত্রে কিছু আইনি জটিলতা দেখা দিয়েছে। তবে কয়েক দিনের মধ্যেই মৃতের পরিজনদের হাতে চেক তুলে দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fisherman Government Compensation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE