মাতলার চরে কেটে ফেলা হয়েছে গাছ। ডাবুতে তোলা নিজস্ব চিত্র।
চোরাগোপ্তা ম্যানগ্রোভ কেটে ফেলায় প্রতি মুহূর্তে বিপজ্জনক পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সুন্দরবন। এক দিকে যেমন নদীবাঁধের ক্ষতি হচ্ছে, অন্য দিকে বিপন্ন হচ্ছে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশ। অনেক জায়গায় নদীর চরে ম্যানগ্রোভ কেটে তৈরি হচ্ছে বেআইনি মেছোভেড়ি। তা ছাড়া, গাছ কেটে কাঠ চুরিও করে অনেকে। পুলিশ-প্রশাসনের সে দিকে নজর নেই বলেও অভিযোগ উঠছে।
সুন্দরবনের মাতলা, বিদ্যা, গোমর, হোগল নদীর পাড়ে রাতের অন্ধকারে ম্যানগ্রোভ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরিবেশবিদেরা বার বারই বলছেন, সুন্দরবনে এ ভাবে গাছ কাটা চলতে থাকলে শুধু অরণ্য ধ্বংসই হবে না, বিপন্ন হবে বিস্তীর্ণ এলাকার পরিবেশ। গাছের অভাবে নদীবাঁধ দুর্বল হলে আয়লার মতো জলোচ্ছ্বাসে বহু মানুষের প্রাণ নিয়ে টানাটানি হওয়ারও আশঙ্কা আছে। সুন্দরবনের ৩২০০ কিলোমিটার নদীবাঁধের মধ্যে আয়লার দাপটে ৭৭৮ কিলোমিটার অংশ ভেঙে গিয়েছিল। তার উপরে নদীর তীরবর্তী বাদাবন ধ্বংস হওয়ায় ভূমিক্ষয় বাড়ছে বলে পরিবেশ-সংক্রান্ত নানা সমীক্ষায় প্রকাশ পেয়েছে।
বনসৃজন প্রকল্পে প্রতি বছর সুন্দরবনের বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় নদীর চরে গাছ লাগানো হয়। আয়লার পর থেকে এই কাজ আরও বড়েছে। কিন্তু স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, সে সব গাছ একটু বড় হলে কেটেও নেওয়া হচ্ছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে গাছ বাঁচানো যাচ্ছে না। ক’দিন আগেই ম্যানগ্রোভ কাটার প্রতিবাদ করায় কুলতলিতে প্রহৃত হয়েছেন এক ব্যক্তি। বন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, ম্যানগ্রোভ কাটার খবর পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অনেক সময়ে স্থানীয় পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে গাছ লাগানো হয়। সেগুলির দেখভাল ওই পঞ্চায়েতই করে থাকে।
ক্যানিংয়ের মহকুমাশাসক প্রদীপ আচার্য বলেন, ‘‘কয়েকটি জায়গায় গাছ কাটার খবর আসার সঙ্গে সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট দফতর বা পুলিশকে বলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’ সুন্দরবন উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরার দাবি, ম্যানগ্রোভ কেটে মেছোভেরি তৈরির খবর তাঁর কাছে নেই। খোঁজ নিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। তবে ম্যানগ্রোভ ধ্বংস করা পরিবেশের স্বার্থে যে খুবই অন্যায়, সে কথা মানছেন তিনি। মন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘সাধারণ মানুষকেও এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।’’
বাসন্তী পঞ্চায়েতের প্রধান ছিদাম মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা পঞ্চায়েতের তরফে ভাবে বিভিন্ন এলাকায় গাছ বাঁচানোর জন্য প্রচার চালাই। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থারও সাহায্য নিই। জানতে পারলে পুলিশকেও বলি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। অনেক ক্ষেত্রে ফাইনও করা হয়।’’
ক্যানিংয়ের নিকারিঘাটা পঞ্চায়েতের প্রধান বিশ্বনাথ নস্কর বলেন, ‘‘আমরা এ ব্যাপারে মাইকে প্রচার চালাই। অভিযোগ পেলে সব সময়ে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করি। গ্রামে স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়েও নজর রাখার ব্যবস্থা করা হয়।’’
বেআইনি মেছোভেড়ির পিছনে রাজনৈতিক দলগুলিরও মদত থাকে বলে অভিযোগ। যদিও সব দলেরই নেতাদের মতে, তাঁরা কখনওই বেআইনি ব্যবসার সঙ্গে জড়ান না। তবে দলের কেউ কোথায় ব্যক্তিগত ভাবে এই কারবারে জড়িয়ে পড়লে সে সব দিকে নজর রাখাও সব সময়ে সম্ভব হয় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy