Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

নদী বিপদসীমার কাছে, জলমগ্ন বহু গ্রাম-রাস্তা

একে লাগাতার বৃষ্টি। তার উপর বিভিন্ন ব্যারেজ থেকে ছাড়া জলে সেচ খাল উপচে থৈ থৈ করছে খেতজমি। বিশেষত, জেলার গ্রামীণ এলাকাগুলিতে বহু মানুষ জলবন্দি। মাটির বাড়ি ধসে, রাস্তা ভেঙে, ঘরবাড়ি ছেড়ে অনেকেই উঠে এসেছেন স্কুল বা অন্য উঁচু আশ্রয়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান ও কালনা শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৫ ০০:৩৮
Share: Save:

একে লাগাতার বৃষ্টি। তার উপর বিভিন্ন ব্যারেজ থেকে ছাড়া জলে সেচ খাল উপচে থৈ থৈ করছে খেতজমি। বিশেষত, জেলার গ্রামীণ এলাকাগুলিতে বহু মানুষ জলবন্দি। মাটির বাড়ি ধসে, রাস্তা ভেঙে, ঘরবাড়ি ছেড়ে অনেকেই উঠে এসেছেন স্কুল বা অন্য উঁচু আশ্রয়ে।

খড়ি এবং বাঁকা নদীর জল উপচে নাদনঘাট, বগপুর, জাহান্ননগর, মন্তেশ্বর-সহ বহু এলাকা এখনও জলমগ্ন। সোমবার নাদনঘাট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বিস্তীর্ণ এলাকা কোমর জলে ডুবে রয়েছে। বেশির ভাগ মাঠও জলের তলায়। জল ক্রমশ বাড়ায় যোগাযোগ ব্যাবস্থাও ভেঙে পড়েছে বেশ কয়েকটি গ্রামে। বাঁকা নদীর জলে তলিয়ে গেছে মন্তেশ্বর ব্লকের কয়েক হাজার বিঘে চাষের জমি। ভাগীরথীর জল মাঠ পেড়িয়ে পৌঁছে গিয়েছে পূর্বস্থলী ২ ব্লকের ঝাউডাঙা পঞ্চায়েতের গ্রামগুলিতেও। ব্লক প্রশাসনের দাবি, যে কোন সময় ওই এলাকার বাসিন্দাদের তুলে আনা হতে পারে উঁচু জায়গায়। জল ঢুকতে শুরু করেছে কালনার কালীনগর, উদয়গঞ্জ সহ বেশ কয়েকটি গ্রামেও।

এ দিকে, কুঁয়ে নদীর জল উপচে ভেসে যাওয়া কেতুগ্রামের আনখোনা পঞ্চায়েত এলাকার বিশেষ উন্নতি হয়নি সোমবারও। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কাটোয়ার কাছে ভাগীরথী ও অজয় প্রাথমিক বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। এ দিনই খেত জমিতে জলের তলায় পড়ে থাকা বিদ্যুৎবাহী তারে পা লেগে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আউশগ্রামের এক খেতমজুর, দশরথ বাউরির (৫৭) মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিদ্যুৎ দফতরের মানকর সাব স্টেশনে বারেবারে জানানো হয়েছিল, নিম্নচাপের জেরে সোমবার যে ঝড় হয়, তাতে তিনটি বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে রয়েছে। যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিদ্যুৎ দফতর গাফিলতি না করলে এই দুর্ঘটনা ঘটত না। বিদ্যুৎ দফতরের কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদনও করেছেন তাঁরা।

এর মধ্যেই ত্রাণ বিলি নিয়ে দুর্গতদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে আনখোনা এলাকায়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত আনখোনা পঞ্চায়েতের ৮টি গ্রামের ৬০০০ মানুষ জলবন্দি হয়ে রয়েছেন। এ ছাড়াও ৭টি ত্রাণ শিবিরে দেড় হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তবে বাসিন্দাদের অভিযোগ, দু’দিন ধরে প্রশাসন কোনও নৌকার ব্যবস্থা করতে না পারায় এই এলাকার মৌরি, মাজিনা সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষদের কাছে ত্রাণ পৌঁছয়নি। বিডিও বিনয় বিশ্বাস বলেন, “ত্রাণ নিয়ে সে ভাবে কোনও সমস্যা নেই। নৌকা ভাড়া না পেয়ে আমরা নিজেরাই একটা নৌকা কিনে নিয়েছি। মঙ্গলবার থেকে তা ব্যবহার করা হবে।” ত্রান শিবির থেকে অনেক পরিবার বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, লাগাতার ভারি বৃষ্টিতে বর্ধমান জেলায় ৩০ হাজার হেক্টর আমন ধানের বীজতলা জলের তলায় রয়েছে। এ ছাড়াও যে সব উঁচু জমিতে আমন ধান লাগানো শুরু হয়েছিল, সেগুলিও জলের তলায় চলে গিয়েছে। পূর্বস্থলী-সহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতির মুখে পড়েছে সব্জি চাষও। যদিও ক্ষতির পরিমাণের হিসেব এখনও নির্দিষ্ট হয়নি বলে কৃষি দফতরের দাবি। নান্দাই পঞ্চায়েত এলাকার প্রাক্তন প্রধান ইদের আলি মোল্লা বলেন, ‘‘পাট সহ যাবতীয় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কি ভাবে এই পরিস্থিতি থেকে চাষিরা বেরিয়ে আসবেন ভাবতে পারছি না।’’ পারুলিয়ার সব্জি চাষি রমেন ঘোষ বলেন, ‘‘মাঠে গেলে শুধু জল আর জল।যে সমস্ত সব্জির গাছ থেকে সব্জি মিলছিল সে গুলি তো নষ্ট হয়েইছে, পাশাপাশি চারা গাছগুলিও পচে গিয়েছে।’’ মহকুমা কৃষি দফতরের সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ জানান, কয়েকদিন আগেই ক্ষয়ক্ষতির একটি রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক দুর্যোগে আরও কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সব্জিচে ক্ষতির কথা স্বীকার করেছেন মহকুমা উদ্যান পালন দফতরও। আধিকারিক পলাশ সাঁতরা বলেন, ‘‘ক্ষয়ক্ষতির একটি তালিকা আমরাও তৈরি করছি।’’

অন্য দিকে, নদী বাঁধগুলির অবস্থা দেখার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে সেচ দফতর। সেচ দফতরের দাবি, কমিটির রিপোর্ট দেখে বাঁধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কালনার মহকুমাশাসক সব্যসাচী সরকার জনান প্রতিটি ব্লকে পরিস্থিতির উপরে কড়া নজরদারি চলছে।পরিস্থিতি কিছুটা উদ্বে জনক হলেও নিয়ন্ত্রনের বাইরে যায় নি। ত্রাণ হিসাবে প্রতিটি ব্লককে পাঠানো হচ্ছে ত্রিপল, চাল, ধুতি, শাড়ি, লুঙ্গি ও ছোটদের জামাকাপড়। শুকনো খাবার হিসাবে চিড়ে-গুঁড়ও মজুত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kalna Flood Land field farmer river
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE