Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

জল নামেনি, ক্ষোভ ত্রাণ নিয়ে

টানা বৃষ্টিতে ও বিভিন্ন ব্যারেজ থেকে ছাড়া জলে নদিয়া জেলার চার মহকুমার বেশ কিছু গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বেশ কয়েকদিন ধরেই ওই সমস্ত গ্রামের লো‌কজন ঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে। বানভাসী লোকজনের অনেকেরই ক্ষোভ, প্রত্যাশা মাফিক সরকারি সাহায্য মিলছে না। এ নিয়ে অনেকেই প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৫ ০০:৪২
Share: Save:

টানা বৃষ্টিতে ও বিভিন্ন ব্যারেজ থেকে ছাড়া জলে নদিয়া জেলার চার মহকুমার বেশ কিছু গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বেশ কয়েকদিন ধরেই ওই সমস্ত গ্রামের লো‌কজন ঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে। বানভাসী লোকজনের অনেকেরই ক্ষোভ, প্রত্যাশা মাফিক সরকারি সাহায্য মিলছে না। এ নিয়ে অনেকেই প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন।

ভাগীরথী ও চূর্ণির জলে রানাঘাট ও কল্যাণী মহকুমারের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। আশ্রয়হীন মানুষজন ঘর-বাড়ি ছেড়ে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। কল্যাণী মহকুমার চাকদহ ব্লকের কাঁচরাপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানকার চরবীরপাড়া, চরজাজিরা, চরযাত্রাসিদ্ধি-সহ বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন। এই পঞ্চায়েতের শতকরা ৯৫ ভাগ অংশ জলের তলায় রয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। এছাড়া, চাকদহ ব্লকের সরাটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাও বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই পঞ্চায়েতের শতকরা ৮৫ ভাগ অংশে জল ঢুকেছে। চান্দুরিয়া-২ পঞ্চায়েতের প্রায় সব অংশ এবং চান্দুরিয়া-১ পঞ্চায়েত এলাকার শতকরা ২৫ ভাগ অংশ এবং মদনপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের একাংশে জল ঢুকেছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। চাকদহের বিডিও বিপ্লব সরকার বলেন, ‘‘৩৫ হাজারেরও বেশি মানুষ জলমগ্ন। তার মধ্যে ১০ হাজার জনকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ৩৫টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। সর্বত্র ত্রাণ পর্যাপ্ত রয়েছে। ৬৭২টি বাড়ি সম্পূর্ণ এবং ১২৭৬টি বাড়ি আংশিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’’

রানাঘাট-১ ব্লকের গোঁসাইচর, মুসুন্ডা, সাহেবডাঙ্গা, বিদ্যানন্দপুর, ভূঁইয়াপাড়া, আঁইশতলা, রামনগর, পারনিয়ামতপুর-সহ বিভিন্ন গ্রামে জল সোমবার বেড়েছে। জলমগ্ন হয়ে পড়েছেন ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। দু’হাজার জনকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নপাড়া-মুসুন্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান মঙ্গল ঘোষ বলেন, ‘‘১৩টি সংসদ এলাকার মধ্যে ১২টি জলমগ্ন। সব মিলিয়ে ৬ প্রায় মানুষ জলবন্দি। তাঁদের মধ্যে ১১৯২ জনকে ত্রাণ শিবিরে পাঠানো হয়েছে। খোলা হয়েছে পাঁচটি ত্রাণ শিবির। প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমির ধান, কলা, সব্জী নষ্ট হয়েছে।’’ রানাঘাট-১ এর বিডিও অনুপম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ব্লকের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নপাড়া-মুসুন্ডা গ্রাম পঞ্চায়েত। এছাড়াও তারাপুর, পায়রাডাঙ্গা, আনুলিয়া, হবিবপুর, কালিনারায়নপুর, রামনগর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতে এলাকায় মানুষ জলবন্দি হয়েছেন। সকলের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে।’’ রানাঘাট-২ ব্লকের আড়ংঘাটা, বহিরগাছি, দত্তপুলিয়া, হিজুলি-সহ কয়েকটি এলাকায় মানুষ জলবন্দি হয়েছেন। তবে, কাউকে স্থানান্তরিত করতে হয়নি বলে জানিয়েছেন বিডিও শিল্পী সিংহ।

এছাড়া, কল্যাণী পুরসভার ১, ৩, ৫, ৬, ৭ এবং ২০ নম্বর ওয়ার্ডের একাংশ জলের তলায়। পুর এলাকার ১৫ হাজার মানুষ জলমগ্ন হয়ে পড়েছেন। ৫ হাজার মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পুরপ্রধান তৃণমূলের সুশীলকুমার তালুকদার বলেন, ‘‘পুর এলাকার ৫ হাজার মানুষ ছাড়াও আশপাশের গ্রামের ১০ হাজার লোকের জন্য শহরে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৩৪টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে।’’ অন্যদিকে চাকদহ পুরসভার ২, ৫, ৬ এবং ১০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় পাঁচশো লোক জলমগ্ন হয়ে পড়েছেন। তার মধ্যে দু’শো জন ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। রানাঘাট পুরসভার ১, ২, ৪, ৭, ১০ এবং ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। পুরপ্রধান তৃণমূলের পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হাজার পাঁচেক মানুষ জলবন্দি। ৪০০ জনকে ত্রাণ শিবিরে পাঠানো হয়েছে। পাঁচটি শিবির খোলা হয়েছে।’’ কল্যাণীর মহকুমার শাসক স্বপন কুন্ডু বলেন, ‘‘মহকুমার ৬০ হাজারের বেশি মানুষ জলবন্দি। তাঁদের মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার মানুষকে অন্যত্র সরানো হয়েছে। ৬০টির বেশি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। হরিণঘাটা ব্লকে কিছু মানুষ জলবন্দি হয়ে রয়েছেন। সকলে জন্য ত্রানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’

অন্যদিকে অতিরিক্ত বৃষ্টির জলে বন্দি হয়ে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে তেহট্ট-১ ব্লকের ধৌপট্ট গ্রামের প্রায় ২৫টি পরিবার। বিডিও জাহাঙ্গির মল্লিক জানান, দুর্গতদের জন্য দু’টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। তাঁদের শুকনো খাবার, ত্রিপল ও জামা কাপড় দেওয়া হয়েছে। যদিও কোনও সাহায্য মেলেনি বলে অভিযোগ কুষ্টিয়ার কালু ঘোষের। তিনি শুক্রবার থেকে পঞ্চাননতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন। তিনি বলেন, “প্রশাসন এখনও কোনও খাবার দেয়নি।” অন্যদিকে করিমপুর-২ ব্লকের দোগাছি গ্রামে কিছু কাচা বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। কয়েকটি বাড়িতে জল ঢোকায় বাসিন্দাদের স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। বিডিও তাপস কুণ্ডু জানিয়েছেন, ওই স্কুলে প্রায় ১৪৩ জন লোক আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদেরকে দু’বেলা রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে।

দুই জেলায় জলে ডুবে মৃত ৩

সোমবার নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে জলে ডুবে মোট তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে মৃতের নাম মোহন মণ্ডল (৪৫)। সোমবার দুপুরে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে চাকদহের সাধনপল্লিতে। শক্তিপুরের কামনগর কুঠিপাড়ায় বিতেন ঘোষ (২৬) নামে এক যুবক জলে ডুবে মারা যান। সোমবার সকালে নিজের বাড়ির সামনে খেলছিল তারিক শেখ। পাশেই বড় পুকুর। খেলতে গিয়ে সেখানেই সে পড়ে যায়। এ দিন আশ্রয় শিবির খোলা হয়েছে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়েরও। বাংলা, সমাজবিদ্যা এবং অর্থনীতি বিভাগে আশ্রয় নিয়েছেন ভাগীরথীর জলে প্লাবিত এলাকার মানুষজন। রবিবার সন্ধ্যা থেকেই তাঁরা এখানে রয়েছেন। সোমবার সকালে তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রতনলাল হাংলু। তিনি তাঁদের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়ে খোঁজ নেন। দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন। গোটা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখার জন্যে পাঁচ জনের মনিটারিং কমিটি গড়েছেন উপাচার্য। কমিটির সদস্য তথা অধ্যাপক সুখেন বিশ্বাস বলেন, ‘‘নদী তীরবর্তী মাঝেরচর-সহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা বিশ্ববিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় স্বেচ্ছাসেবী বাহিনীর সদস্যেরাও দেখাশোনা করছেন। কল্যাণী পুরসভার পক্ষ থেকে খাবার দেওয়া হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE