Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বান্ধবীরা আটকাল নাবালিকার বিয়ে

বান্ধবীর বিয়ে শুনে আনন্দ হয়েছিল তাদের। নিমন্ত্রণও পেয়েছিল তারা। কিন্তু তার পরেই প্রশ্ন জাগে, তারা তো ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। বান্ধবীরও তো ১৮ বছর হয়নি। তা হলে কীসের বিয়ে, কীসের নিমন্ত্রণ!

নিজস্ব সংবাদদাতা
উদয়নারায়ণপুর শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৬ ০৪:০০
Share: Save:

বান্ধবীর বিয়ে শুনে আনন্দ হয়েছিল তাদের। নিমন্ত্রণও পেয়েছিল তারা। কিন্তু তার পরেই প্রশ্ন জাগে, তারা তো ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। বান্ধবীরও তো ১৮ বছর হয়নি। তা হলে কীসের বিয়ে, কীসের নিমন্ত্রণ!

সাহস করে স্কুলের এক শিক্ষিকার কাছে ঘটনাটি জানায় ছাত্রীর চার বান্ধবী। তিনি বিষয়টি জানান ব্লক প্রশাসনকে। বুধবার ব্লক প্রশাসনের দুই অফিসার পুলিশ নিয়ে সটান হাজির হন বিয়েবাড়িতে। পাত্রীর পরিবারকে বুঝিয়ে মেয়ের বিয়ে আটকান। মেয়ের ১৮ বছর পূর্ণ হলে তবেই বিয়ে দেবেন বলেও কবুল করেন বাবা-মা।

হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের খিলা গ্রামে নাবালিকার বিয়ে বন্ধে চার স্কুলছাত্রীর ভূমিকায় জেলা প্রশাসন উৎসাহিত। বিডিও দেবাশিস চৌধুরী বলেন, ‘‘মেয়েটির বাবা খুবই গরিব। তেল কলে সামান্য কাজ করেন। তাই হয়তো ভাল পাত্র পেয়ে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছিলেন। কিন্তু এটা যে বেআইনি, অপরাধ তা বোঝানোর পর তাঁরা বিয়ে ভেঙে দিয়েছেন। মেয়েটিও পড়াশোনা করতে চেয়েছে। ওর পড়াশোনার জন্য প্রশাসনের তরফে সাহায্য করা হবে।’’ চার বান্ধবীর প্রশংসা করে বিডিও জানান, নাবালিকা বিয়ে নিয়ে মেয়েরা যে ক্রমশ সচেতন হচ্ছে এটা তার মস্ত প্রমাণ।

বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশ ও ব্লকের দুই অফিসার যখন বিয়েবাড়িতে পৌঁছন আয়োজন চলছে জোরকদমে। পুলিশ দেখেই হবু কনে ভয়ে ঘরে ঢুকে দরজায় খিল দেয়। বাবা গিয়েছিলেন মাছ কিনতে। মা কাজে ব্যস্ত। মেয়েটি কিছু করে ফেলতে পারে এই আশঙ্কায় তাকে বার বার ডাকলেও দরজা না খোলায় পুলিশ দরজা ভাঙে। দেখা যায় কনে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে। চোখেমুখে জল দিয়ে তাকে সুস্থ করা হয়। খবর পেয়ে আসেন পাত্রীর বাবা। পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা বাবা-মাকে বোঝান।

পরে মেয়ের বাবা বলেন, ‘‘পাত্র মাছ ব্যবসায়ী। বয়স পঁচিশ। বাড়ির অবস্থা ভাল দেখে মেয়ের বিয়ে দিতে রাজি হয়েছিলাম। জানতাম না আঠারো বছরের আগে মেয়ের বিয়ে দেওয়া যায় না। সরকারিবাবুরা বোঝানোর পরে বিয়ে বাতিল করে দিই।’’

পুলিশের একটি দল গিয়েছিল পাত্রের বাড়িতেও। পাত্র বেণীমাধব বাগ তখন বরযাত্রীদের নিয়ে বেরোনোর তোড়জোড় করছেন। মেয়ের বাবা বিয়ে বাতিল করেছেন শুনে তাঁরা অবশ্য আর অপেক্ষা করতে রাজি হননি। অন্য এক পাত্রী খুঁজে ওই রাতেই বিয়ে করেন তিনি। তবে নাবালিকাকে বিয়ে করার মতো ভুল সিদ্ধান্ত আর নেননি তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

marriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE