দল বেঁধে: রোহিণীর বালিভাসায় হাতিরা নিজস্ব চিত্র
ক’দিন আগেই হাতি মোকাবিলার রূপরেখা ঠিক করতে মেদিনীপুরে বৈঠকে বসেছিলেন বন দফতরের কর্তারা। সে দিন মুখ্য বনপাল (পশ্চিমাঞ্চল) শক্তিশঙ্কর দে-র মত ছিল, হাতির হানায় ফসলের ক্ষতি হবেই। কিন্তু বন দফতরের প্রধান লক্ষ্য হল, হাতির হামলায় মানুষের মৃত্যু ঠেকানো। অথচ, দেখা যাচ্ছে হাতির হানায় ফসলের ক্ষতির বহর নেহাত কম নয়। আর তার ক্ষতিপূরণ দিতে বেগ পেতে হচ্ছে বন দফতরকে।
পরিসংখ্যান বলছে, শুধু মাত্র বন দফতরের মেদিনীপুর ডিভিশনে ফসলের নষ্টের ক্ষতিপূরণ দিতে বছরে চলে যাচ্ছে কোটি টাকা। ক্ষতির পরিমাণ যে বাড়ছে, তা মানছেন মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা। তিনি বলেন, “হাতি এলে কিছু ফসলের ক্ষতি হয়ই। ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’
ক্ষতির বহর কী ভাবে বাড়ছে? বন দফতরের মেদিনীপুর ডিভিশনের এক সূত্রে খবর, ২০১৫-’১৬-তে হাতির হানায় ৮৭৪ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছিল। ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়া হয়েছিল ১৩ লক্ষ ৮৪ হাজার ১১০ টাকা। ২০১৬- ’১৭-তে ৯৭০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছিল। ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়া হয়েছিল ১ কোটি ৪৫ লক্ষ ৪১ হাজার ৩৮০ টাকা। চলতি আর্থিক বছর অর্থাৎ ২০১৭-’১৮-তে এখনও পর্যন্ত ৭১৮ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৭ লক্ষ ৭৬ হাজার ৮৩৮ টাকা।
কেন বাড়ছে ফসলের ক্ষতি?
বন দফতরের এক সূত্রের ব্যাখ্যা, একদিকে দলমার দলের স্থায়িত্বকাল বেড়েছে। দলে থাকা হাতির সংখ্যাও বেড়েছে। দলমার পরিযায়ীদের পাশাপাশি রেসিডেন্সিয়াল হাতির সংখ্যাও বেড়েছে। এই দুইয়ের জেরেই বেড়েছে ক্ষয়ক্ষতির বহর। ওই সূত্রের দাবি, এক সময় যেখানে দলমা থেকে আসা হাতির দল দক্ষিণবঙ্গে ২-৩ মাস থাকত, এখন সেখানে তাদের স্থায়িত্বকাল ৮-১০ মাস! বছরের বেশিরভাগ সময়টাই তারা এখানে থাকছে। স্বভাবতই বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতি।
মেদিনীপুরের এক বনকর্তার কথায়, “হাতির রুচিরও পরিবর্তন হচ্ছে। তাই লোকালয়ে চলে আসছে। লোকালয়ে থেকে হাতি আস্তে আস্তে তাড়িয়ে ময়ূরঝর্নার দিকে নিয়ে যেতে হবে। এটাই আমাদের লক্ষ্য। ময়ূরঝর্না প্রকল্পের কাজও চলছে।’’ ওই সূত্রের মতে, হাতির তাণ্ডব মোকাবিলা করার বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে হলে প্রায় ৩০ বছর পিছিয়ে যেতেই হবে। ১৯৮৭-তে প্রথম বিহারের দলমা থেকে প্রায় ৫০টি হাতির দল ঝাড়গ্রামে আসে। মেদিনীপুরের ওই বনকর্তার কথায়, “তখন এদের গতিবিধি কংসাবতী নদীর ওপার পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। পরে ধীরে ধীরে এরা অঞ্চল বাড়ায়। কংসাবতী পার হয়ে গোয়ালতোড়, গড়বেতা, বিষ্ণুপুর হয়ে দ্বারকেশ্বর নদ পার হয়ে সোনামুখী, পাত্রসায়র যেতে শুরু করে।’’
দফতরের ওই সূত্রের দাবি, এখন দলমার যে দল এখানে আসে, তাতে ১৩৫-১৪০টি হাতি থাকে। এলাকায় থেকে এরা মাঝেমধ্যে লোকালয়ে হানা দেয়। সেই সমস্যা মোকাবিলাই এখন বন দফতরের লক্ষ্য।
ক্ষতির বহর
বছর জমি হেক্টরে ক্ষতিপূরণ টাকায়
২০১৫- ’১৬ ৮৭৪ ১৩ লক্ষ ৮৪ হাজার ১১০
২০১৬- ’১৭ ৯৭০ ১ কোটি ৪৫ লক্ষ ৪১ হাজার ৩৮০
২০১৭- ’১৮ এখনও পর্যন্ত ৭১৮ ১ কোটি ৭ লক্ষ ৭৬ হাজার ৮৩৮
বন দফতরের মেদিনীপুর ডিভিশনের হিসাব
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy