Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Harold E. Varmus

জিন থেকে জ্যাজে পারদর্শী, সত্যজিতের ভক্ত নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী এবার কলকাতায়

জ্যাজ কনসার্ট শুনতে ভিড়ে উপচে পড়ে ভ্যাঙ্কুভার, নিউ ইয়র্কে। ইং‌রেজি সাহিত্যের এই স্নাতক কবিতারও দীক্ষিত পাঠক। সত্যজিৎ রায়ের ছবির একনিষ্ঠ ভক্ত।

 হ্যারল্ড ই ভারমাস-এর আরও একটি পরিচয় রয়েছে! ক্যানসারের জিনগত গবেষণায় ১৯৮৯ সালের নোবেল পুরস্কারজয়ী বিজ্ঞানী তিনি!

হ্যারল্ড ই ভারমাস-এর আরও একটি পরিচয় রয়েছে! ক্যানসারের জিনগত গবেষণায় ১৯৮৯ সালের নোবেল পুরস্কারজয়ী বিজ্ঞানী তিনি!

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:১৬
Share: Save:

হ্যারল্ড ই ভারমাস

তাঁর জ্যাজ কনসার্ট শুনতে ভিড়ে উপচে পড়ে ভ্যাঙ্কুভার, নিউ ইয়র্কে। ইং‌রেজি সাহিত্যের এই স্নাতক কবিতারও দীক্ষিত পাঠক। সত্যজিৎ রায়ের ছবির একনিষ্ঠ ভক্ত।

এ হেন হ্যারল্ড ই ভারমাস-এর আরও একটি পরিচয় রয়েছে! সেটিই মূল পরিচয়, যার সূত্রেই তিনি দীর্ঘদিন পরে তাঁর প্রিয় শহর কলকাতায় পা রাখছেন আগামী শনিবার। ক্যানসারের জিনগত গবেষণায় ১৯৮৯ সালের নোবেল পুরস্কারজয়ী বিজ্ঞানী তিনি! কলকাতায় আসছেন মেঘনাদ সাহার ১২৫তম জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানে ৫৪তম মেঘনাদ সাহা স্মারক বক্তৃতা দিতে। যার বিষয়, ‘৫০ বছরের ক্যানসার গবেষণা— এ কাল এবং সে কাল।’ পাশাপাশি, কল্যাণীতে ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্স’-এও ক্যানসার গবেষণার পর্বান্তর সংক্রান্ত বক্তৃতা দেওয়ার কথা তাঁর।

১৯৬২ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক হওয়ার পরে হ্যারল্ড ভেবেছিলেন, এ বার একটু অন্য কিছু করে দেখা যাক! ভর্তি হয়েছিলেন মেডিক্যাল স্কুলে। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টার, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ (যেখানে পরে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের সময় তিনি ডিরেক্টরের পদে ছিলেন) এবং সান ফ্রান্সিসকো বিশ্ববিদ্যালয়ে পরবর্তী প্রশিক্ষণ। ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরোধিতা করে সামরিক বাহিনীতে চিকিৎসকের কাজ ছেড়ে দিলেন। তার পর ভারতের বরেলী মিশনারি হাসপাতালে বেশ কিছু দিন কাজ করেছিলেন। তখনই কলকাতায় যাতায়াত এবং সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে আলাপ।

আরও পড়ুন: তিন বছর বয়স থেকে অঙ্কে টান

সেই স্মৃতির শহরে আসার আগে আমেরিকা থেকে ই-মেলে হ্যারল্ড জানালেন, ‘‘প্রথম যখন কলকাতা গিয়েছিলাম, সেটা ছিল ১৯৬৬ সাল। আমার এখনও মনে আছে, রাস্তায় ক্রুদ্ধ যুবকদের প্রতিবাদের ছবি। দমদম বিমানবন্দরে সেনা। বাসে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে!’’ কলেরা এবং আরও কিছু বিষয় নিয়ে তখন তিনি গবেষণা করছিলেন আরও কয়েক জন বিজ্ঞানীর সঙ্গে। সে বারই সত্যজিতের বাড়ি গিয়েছিলেন। হ্যারল্ড বলছেন, ‘‘খুবই অতিথিপরায়ণ ছিলেন সত্যজিৎ। আমাদের সবাইকে বাড়িতে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। আমরা সকলেই ওঁর ভক্ত। বিশ্বজোড়া খ্যাতি, অথচ কী অমায়িক আর বিনয়ী! ওঁর ছবি নিয়ে অনেক কথা বলেছিলেন সে দিন।’’

কিন্তু ইংরেজি সাহিত্য থেকে জিন গবেষণায় নোবেল— হ্যারল্ডের যাত্রাপথটা কি প্রায় রূপকথায় মতো নয়? বারাক ওবামার কাউন্সিল অব অ্যাডভাইসার্স-এর (বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক) প্রাক্তন কো-চেয়ারম্যানের জবাবই বুঝিয়ে দিচ্ছে, বিনয়ে তিনিও কিছু কম যান না। ‘‘না, রূপকথার সফর বলাটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে! তবে অনেক কিছু অর্জন করা গিয়েছে এবং সফরটি বেশ মজারই। অন্তত এখনও পর্যন্ত। আমার স্মৃতিকথায় এই নিয়ে অনেক কথা বলেছি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমার আগ্রহ এবং কাজকর্মের ধরনও বদলেছে। তবে কখনওই সেই পরিবর্তনের মূল্যায়ন করতে বসিনি।’’

‘জিন অ্যান্ড জ্যাজ’ নামের একটি কনসার্ট জ্যেষ্ঠ পুত্র জ্যাকবকে সঙ্গে নিয়ে করে থাকেন জ্যাজসঙ্গীতে পারদর্শী এই বিজ্ঞানী। গান এবং বিজ্ঞানের অনন্য যুগলবন্দি নিয়ে প্রশ্ন করায় একই রকম বিনয়ী উত্তর পাওয়া গেল। ‘‘আমার সঙ্গীতজ্ঞান সম্পর্কে একটা ভুল ধারণা রয়েছে। আমি যৎসামান্য গানবাজনা জানি। স্যাক্সোফোনের একজন ছাত্র ছাড়া কিছুই নই।’’

আগামী ১৩ তারিখ মেঘনাদ সাহা স্মারক বক্তৃতায় ক্যানসার মোকাবিলার আধুনিক দিক নিয়ে কথা বলবেন হ্যারল্ড। তাঁর কথায়, ‘‘পঞ্চাশ বছর আগে ক্যানসার ছিল এক রহস্যময় অসুখ। বিভিন্ন কোষে এই অসুখ ছড়িয়ে পড়ত, যার সঙ্গে যুক্ত থাকত জিন এবং পরিবেশগত বিবিধ ফ্যাক্টর। কিন্তু বাইরে থেকে তাকে বোঝা শক্ত ছিল। ক্যানসার নিয়ে যে বিস্তারিত জ্ঞান সংগ্রহ করা গিয়েছে এত বছর ধরে, তাকে কাজে লাগিয়ে কী ভাবে এর বিরুদ্ধে লড়াই করা যায় তা নিয়েই কিছু কথা বলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE