Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
কড়া কমিশন

ভোট দিতে না পারলে দায়ী জেলাশাসক

বিধানসভা ভোটের দামামা বাজিয়ে রাজ্যে এসে পুলিশ-প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে গেল কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন! রাজ্যে সাম্প্রতিক কালের সবক’টি নির্বাচনেই ব্যাপক গা-জোয়ারি এবং জবরদস্তির অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে নসীম জৈদী। — নিজস্ব চিত্র।

বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে নসীম জৈদী। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:১৫
Share: Save:

বিধানসভা ভোটের দামামা বাজিয়ে রাজ্যে এসে পুলিশ-প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে গেল কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন!

রাজ্যে সাম্প্রতিক কালের সবক’টি নির্বাচনেই ব্যাপক গা-জোয়ারি এবং জবরদস্তির অভিযোগ উঠেছে। পঞ্চায়েত বা পুরভোটে (যেখানে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের কোনও ভূমিকা থাকে না) রাজ্য পুলিশ অবাধ ভোট নিশ্চিত করতে কিছুই করতে পারেনি। এমনকী, গত বছর লোকসভা ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বসিয়ে রেখেই ভোটে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল বিস্তর। স্বভাবতই বিরোধী দল এবং সাধারণ ভোটারদের কাছে এখন সব চেয়ে বড় প্রশ্ন, ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচন আদৌ সুষ্ঠু ভাবে হবে তো? কলকাতায় এসে বৃহস্পতিবার কমিশনের ফুল বেঞ্চ এই প্রশ্নেরই উত্তর হিসাবে আশ্বাস দিয়েছে, বিধানসভা ভোটে রাজ্যের সব বুথেই থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। শুধু বুথে হিংসা বন্ধ করাই নয়,

বাড়ি থেকে বুথে যাওয়ার পথে হুমকির মুখে কেউ যাতে ফিরে না যান, সে দিকেও বিশেষ নজর থাকবে।

ভোটার ভোট দিতে বঞ্চিত হলে তার জন্য দায়ী হবেন জেলার রিটার্নিং অফিসার তথা জেলাশাসক।

সদ্যই বিহারে রক্তপাতশূন্য ভোট করিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে কমিশন। বিরোধী দলগুলির নেতারা এ দিন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদীর নেতৃত্বাধীন ফুল বেঞ্চের কাছে দাবি করেছেন, বিহারের মডেলেই এ রাজ্যে ভোট চাই। সুষ্ঠু ভোটের আশ্বাস দেওয়ার পাশাপাশিই এ দিন জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে বৈঠকে কমিশন জানিয়ে দিয়েছে, এখন থেকেই পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের উপরে কমিশনের নজর থাকছে। কর্তব্যে গাফিলতি হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বৈঠকে এক জেলাশাসক ও এক পুলিশ সুপার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিকই আছে বলে সওয়াল করতে গিয়েছিলেন। কমিশন সূত্রের খবর, তাঁদের থামিয়ে দিয়ে ফুল বেঞ্চ বলেছে ওই সব জেলায় কী ভাবে সাম্প্রতিক ভোট হয়েছে, সে খবর কমিশনে আছে!

দিনের শেষে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জৈদী জানিয়ে গিয়েছেন, সব বুথে তো বটেই, বিধানসভা ভোটের আগে থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর এলাকা টহলদারিও। কোথায়, কত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন হবে, ঠিক করবে কমিশনই। স্থানীয় প্রশাসনের তাতে কোনও ভূমিকা থাকবে না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্য অদূর ভবিষ্যতে যে কোনও সময় প্রয়োজনে প্রতিনিধিদল পাঠাবে কমিশন। প্রসঙ্গত, বিধানসভা ভোটের আগে আগামী কয়েক মাসে আরও বেশ কয়েক বার রাজ্যে আসার কথা কমিশনের শীর্ষ কর্তাদের।

লোকসভা ভোটের আগেও অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি ছিল কমিশনের তরফে। কিন্তু তা বাস্তবায়িত করা যায়নি বলে বিরোধীদের অভিযোগ। প্রকারান্তরে এ দিন তা স্বীকার করে নিয়েছেন জৈদী। ওই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই বিধানসভা ভোটে আরও কিছু পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। জৈদীর কথায়, ‘‘লোকসভায় সারা দেশে ভোট চলে। পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী পাওয়ার ব্যাপারে সমস্যা থাকে। বিধানসভা ভোটে তেমন হবে না। এ রাজ্যে সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হবে। ভোটের আগে থেকে এলাকায় টহরদারিও শুরু হবে। ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বুথের বাইরে দুই বা ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হবে।’’ গত মাসে বিহার বিধানসভা ভোটে রাজ্য পুলিশকে কার্যত ঠুঁটো করে বসিয়ে রেখেছিল কমিশন। এ রাজ্যেও যে সেই মডেলই কার্যকর হবে, তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন জৈদী। এই নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘সব বুথে পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলে রাজ্য পুলিশের ভূমিকার প্রশ্ন উঠছে কেন!’’

সিপিএমের তরফে রবীন দেব, বিকাশ ভট্টাচার্য, কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়া, অমিতাভ চক্রবর্তী, বিজেপি-র শমীক ভট্টাচার্য-সহ সব বিরোধী দলের প্রতিনিধিরাই বিগত লোকসভা, পঞ্চায়েত ও পুরভোটের পুনরাবৃত্তি বন্ধ করে সুষ্ঠু নির্বাচন দাবি

করেছেন। পুলিশ-প্রশাসনের যে সব আধিকারিক শাসক দলের অনুগত হিসাবে কাজ করছেন, তাঁদের অপসারণ দাবি করেছেন। কমিশন আবার অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য তাঁদের কাছে এমন নামের তালিকা চেয়ে পাঠিয়েছে। এ রাজ্যে যে ভোট-সহ নানা ঘটনায় পুলিশও নিয়মিত আক্রান্ত হয় এখন, সেই তথ্য ছবি ও ভিডিও ক্লিপিংস-সহ ফুল বেঞ্চকে দিয়েছে বিরোধীরা। যা দেখে কমিশনারেরাও বিস্মিত! শাসক দলের তরফে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী, ফিরহাদ হাকিম, শোভন চট্টোপাধ্যায়েরা অবশ্য ভোটার তালিকা নিয়েই তাঁদের বক্তব্য জানিয়েছেন। বিরোধীদের বক্তব্য নিয়ে তাঁরা কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

বিরোধীদের প্রশ্ন ছিল, কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলেও তা মোতায়েনের দায়িত্ব থাকে স্থানীয় প্রশাসনের উপরে। স্বভাবতই সেখানে প্রভাব খাটানোর সুযোগ থাকে শাসক দলের। এই নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে পরে জৈদী সাফ বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী কোথায় মোতায়েন করা হবে, তা ঠিক করবে কমিশন। ভোট চলাকালীন কমিশনের প্রতিনিধি পর্যবেক্ষকেরাই। সব পর্যবেক্ষককেই বাইরের রাজ্য থেকে নিয়ে আসা হবে। তাঁদের রিপোর্টের ভিত্তিতে কমিশন এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। প্রয়োজনে পর্যবেক্ষকের সংখ্যাও বাড়ানো হতে পারে।’’ কিন্তু লোকসভা ভোটের সময় পর্যবেক্ষকদের ‘নিষ্ক্রিয়তা’ নিয়েও তো প্রশ্ন উঠেছিল! জৈদীর আশ্বাস, এ বার তাঁরা ‘স্মার্ট’ পর্যবেক্ষক পাঠাবেন!

কমিশন সূত্রের খবর, রাজনৈতিক দলগুলির মতামত শোনার পরে জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারদের কাছ থেকে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নেওয়া হয়েছে। কমিশনের রাজ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের জানানো হয়েছে, কারা কী করছেন, সব কিছুর উপরেই কমিশনের কড়া নজর রাখছে। সঠিক পদক্ষেপ না করলে কমিশন উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে দেরি করবে না।’’

আগামী ৫ জানুয়ারির মধ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে কমিশন। জৈদী জানান, জেলা প্রশাসনগুলিকে নোটিস বোর্ডে ওই তালিকা টাঙিয়ে দিতে বলা হয়েছে। কমিশনের ওয়েবসাইটেও তালিকা থাকবে। তবে ৫ জানুয়ারির পরেও ভোটার তালিকায় নাম তোলা এবং সংশোধনের সুযোগ থাকবে। ভোট প্রক্রিয়াকে মসৃণ করতে রাজনৈতিক দল, সাধারণ ভোটার এবং ভোটের জন্য ভাড়া নেওয়া গাড়ির মালিকদের জন্য ‘সুবিধা’, ‘সমাধান’ ও ‘সুগম’ নামে তিনটি ব্যবস্থাও চালু থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE