Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
পিছিয়ে গেল উড়ান

সিন্ডিকেটে বিদ্ধ বার্নপুর

পড়শি রাজ্যে রৌরকেল্লা পারল। এ রাজ্যে বার্নপুর পারল না। চুক্তি অনুযায়ী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ হল না বার্নপুর বিমানবন্দরের। শেষ হলে নির্দিষ্ট সূচি অনুযায়ী বার্নপুর থেকে কলকাতায় ১৯ আসনের বিমান চলাচল শুরু হতে পারত।

দুই চিত্র: অসমাপ্ত বার্নপুর বিমানবন্দরের যাত্রী টার্মিনাল।

দুই চিত্র: অসমাপ্ত বার্নপুর বিমানবন্দরের যাত্রী টার্মিনাল।

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:২৭
Share: Save:

পড়শি রাজ্যে রৌরকেল্লা পারল। এ রাজ্যে বার্নপুর পারল না। চুক্তি অনুযায়ী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ হল না বার্নপুর বিমানবন্দরের। শেষ হলে নির্দিষ্ট সূচি অনুযায়ী বার্নপুর থেকে কলকাতায় ১৯ আসনের বিমান চলাচল শুরু হতে পারত।

কেন বিলম্ব, তার কারণ খুঁজতে গিয়ে সামনে আসছে সেই সিন্ডিকেট উপদ্রবের প্রসঙ্গ। কোনও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে এলাকায় ঘুরে অভিযোগের সমর্থনে বহু কথা শোনা যাচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকায় ছোট ছোট সিন্ডিকেটের দাপট রয়েছে। অভিযোগ, বিমানবন্দরটির সংস্কার কাজের জন্য সিন্ডিকেটের কাছ থেকে নির্মাণ সামগ্রী, এমনকী শ্রমিক নিতে হবে বলে ‘নির্দেশ’ গিয়েছিল ঠিকাদারদের কাছে। কিন্তু নিয়মিত শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। অন্য জায়গা থেকে শ্রমিক আনতেও বাধা আসছে। ফলে আটকে গিয়েছে কাজের গতি।

বার্নপুর বিমানবন্দরটি স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়া (সেল)-র শাখা সংস্থা ইস্কোর অধীনে। ৫০ বছর পরে তার ১২২০ মিটার রানওয়ে থেকে উড়ান চালু হওয়ার কথা। সেখান থেকে সেল-এর ছোট বিমান ওঠানামা করলেও টার্মিনাল বিল্ডিং, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-র পরিকাঠামো ছিল না। এখন পাঁচিল, এটিসি বিল্ডিং, টার্মিনাল বিল্ডিং, পার্কিং বে তৈরির বরাত পেয়েছে তিনটি সংস্থা। অভিযোগ, গত বিশ্বকর্মা পুজোয় কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সিন্ডিকেটের সঙ্গে বৈঠক করতে গিয়ে তা পিছিয়ে যায়।

কাজ শেষ করে তৈরি রৌরকেল্লা।

সিন্ডিকেটের কাছ থেকে নির্মাণ সামগ্রী নেওয়া নিয়ে কোনও সমস্যা হয়নি। কিন্তু সংস্থাগুলি সূত্রে জানা গিয়েছে, পর্যাপ্ত শ্রমিক দিতে পারছে না সিন্ডিকেট। কাজে এলেও মাঝেমধ্যেই ছুটিতে চলে যাচ্ছেন শ্রমিকেরা। সিন্ডিকেটের চাপের মুখে তাঁদের সরানোও যাচ্ছে না। কাজ শেষ না হওয়ায়, যন্ত্রপাতি পড়ে রয়েছে কাছের দুর্গাপুর বিমানবন্দরে। বিমানবন্দরের পাঁচিলের কাজ, যাত্রী টার্মিনালের কাজও শেষ হয়নি।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ছোট ছোট শহর থেকে উড়ান পরিষেবা চালু করতে চান। পরে তাঁর সেই স্বপ্ন রূপ পায় কেন্দ্রের আঞ্চলিক উড়ান প্রকল্পের মাধ্যমে। সেই প্রকল্পে রাজ্যও অংশীদার। কলকাতা, বাগ়ডোগরা, দুর্গাপুর, কোচবিহার, বার্নপুর থেকে ছোট উড়ান চালানোর কথা ডেকানের। আর আছে জামশেদপুর ও রৌরকেল্লা। বার্নপুরের মতো রৌরকেল্লাতেও কাজ করতে হয়েছে। কোনও সমস্যা হয়নি। ডেকান জানিয়ে দিয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে অন্য সব শহর থেকে উড়ান চালু হলেও বার্নপুর নিয়ে সমস্যা থাকায় সেখানে আরও সময় লাগবে।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান গুরুপ্রসাদ মহাপাত্র বলেন, ‘‘সমস্যা কী, সেল কর্তৃপক্ষই বলতে পারবেন।’’ ইস্কোর জনসংযোগ আধিকারিক ভাস্কর কুমার বলেন, ‘‘সমস্যাটা ঠিকাদারদের নিয়ে। ওদের বরাত দিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।’’ মুখ খুলতে চাননি ঠিকাদাররা।

মমতা নিজে বার বার বলেছেন, কোথাও সিন্ডিকেটের জন্য কোনও কাজ যেন থমকে না যায়। সম্প্রতি বিশ্ব বঙ্গ সম্মেলনেও তিনি লগ্নির ডাক দিয়েছেন। কিন্তু, বার্নপুরে তাঁর সাধের প্রকল্পের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ানোর অভিযোগ সেই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।

আইনমন্ত্রী, আসানসোলের নেতা মলয় ঘটকের কথায়, ‘‘সিন্ডিকেট বাধা হলে তা বিনাশ করে দেব।’’ আসানসোল দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কেউ মৌখিক অভিযোগ করলেও ব্যবস্থা নিতে পারি।’’ আসানসোল পুরসভার এমআইসি লক্ষ্মণ ঠাকুর বলেন, ‘‘আমাদের কেউ নয়, করলে গ্রামবাসীরা একত্রিত হয়ে করছে।’’

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE