Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

‘ছেলে হলে কষ্ট করেও মানুষ করতাম’, যমজ কন্যাসন্তান বেচে বলল বাবা

জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, শিশু রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে (২০১৫) ওই যুবকের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে। যে দুই ব্যক্তি শিশু দু’টি কিনেছিল, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। শিশু দু’টিকে চাঁদপাড়া ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার তাদের বারাসতে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি কাছে হাজির করানো হবে। 

রতন ব্রহ্ম। —নিজস্ব চিত্র

রতন ব্রহ্ম। —নিজস্ব চিত্র

সীমান্ত মৈত্র
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৫৮
Share: Save:

টাকার লোভে নিজের দু’মাসের যমজ কন্যাসন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছিল সে। স্ত্রীর ওজর-আপত্তিও শোনেনি।

কিন্তু শেষরক্ষা হল না। শিশু বিক্রির অভিযোগে রবিবার গাইঘাটার রামচন্দ্রপুর ভাদুরিয়া এলাকার রতন ব্রহ্ম নামে ওই যুবককে গ্রেফতার করল পুলিশ। এলাকারই দু’টি বাড়ি থেকে পুলিশ শিশু দু’টিকে উদ্ধার করেছে। অভিযোগ, দুই কন্যাকে মোট ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকায় দু’জনের কাছে বিক্রি করে রতন। বিক্রির ১ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকাও রতনের বাড়ি থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে। পুলিশের কাছে রতনের দাবি, বাকি টাকায় সে ধার মিটিয়েছে।

জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, শিশু রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে (২০১৫) ওই যুবকের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে। যে দুই ব্যক্তি শিশু দু’টি কিনেছিল, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। শিশু দু’টিকে চাঁদপাড়া ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার তাদের বারাসতে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি কাছে হাজির করানো হবে।

আরও পড়ুন: অনীক থেকে অ্যানি, বিয়ে করলেন সাগ্নিককে

রতন দাবি করেছে, ‘‘দু’টি মেয়েকে মানুষ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই এলাকাতেই দুই সন্তানহীন পরিবারকে দিয়েছি। যাতে পরে মেয়েদের অন্তত দেখতে পাই।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রতন কাপড় ফেরি করে। ঘরে তার আট বছরের আর এক মেয়ে রয়েছে। এ দিন দুপুরে একটি উড়ো ফোনে শিশু বিক্রির কথা জানতে পারে পুলিশ। বিকেলে স্থানীয় শিমুলপুরের বাসিন্দা কৃষ্ণকান্ত দাস এবং মহিষকাঠির বাসিন্দা অমল ঘোষের বাড়ি থেকে শিশু দু’টি মেলে। শুক্রবার শিশু দু’টিকে বিক্রি করা হয়েছিল। শিশু কেনার জন্য কৃষ্ণকান্ত এক লক্ষ টাকা দিয়েছিল। গত জুলাই মাসে ওই চাল ব্যবসায়ীর বছর আঠেরোর একমাত্র মেয়ে আত্মঘাতী হয়। রতনের শিশুকন্যা কেনার জন্য অমল দিয়েছিল ৮০ হাজার টাকা। সে পেশায় চাষি। তার কলেজ-পড়ুয়া ছেলে আড়াই বছর আগে মারা যান।

আরও পড়ুন: ছত্তীসগঢ়ে নিহত জওয়ান, শোকস্তব্ধ সাগরদিঘি

পুলিশের কাছে কৃষ্ণকান্ত এবং অমল দাবি করে, এ ভাবে যে সন্তান কেনা যায় না, তা তারা জানত না। নিজেদের সন্তানের শোক ভুলতেই তারা রতনের প্রস্তাবমতো শিশু দু’টি কেনে। কৃষ্ণকান্ত বলে, ‘‘আমার মেয়ে যে দিন মারা যায়, সে দিনই রতন ওর স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ির সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। পরে ও-ই এসে আমাকে মেয়ে বিক্রির প্রস্তাব দেয়।’’ অমল বলে, ‘‘আমি সন্তান হারিয়েছি। তাই ওর প্রস্তাবে না করতে পারিনি।’’ রতন দাবি করেছে, স্ত্রী মেয়ে বিক্রি মানতে না-পেরে রাগ করে আলিপুরদুয়ারে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছে।

মেয়ে বলেই কি বিক্রি করা হল শিশু দু’টিকে?

রতন বলে, ‘‘ছেলে হলে কষ্ট করেও মানুষ করতাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gaighata Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE