Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

১৭ বছর পরে খুনের বদলা খুন

২০০১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি মধ্যমগ্রামের বীরেশপল্লিতে নির্মীয়মাণ বাড়ির দোতলায় ক্যারম খেলছিল বাবু শঙ্কর নামে এক দুষ্কৃতী।

হাহাকার: শোকাহত গৌতম দে সরকারের পরিবার। শুক্রবার মধ্যমগ্রামে। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

হাহাকার: শোকাহত গৌতম দে সরকারের পরিবার। শুক্রবার মধ্যমগ্রামে। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৫৯
Share: Save:

খুনের বদলা খুন!

১৭ বছর পর সেই ২ ফেব্রুয়ারি অপরাধের এক বৃত্ত সম্পূর্ণ হল।

২০০১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি মধ্যমগ্রামের বীরেশপল্লিতে নির্মীয়মাণ বাড়ির দোতলায় ক্যারম খেলছিল বাবু শঙ্কর নামে এক দুষ্কৃতী। চার যুবক সেখানেই গুলি করে, বোমা মেরে খুন করে বাবুকে। সে দিনের ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরেই শুক্রবার গুলিতে এফোঁড়-ওফোঁড় হল গৌতম দে সরকার ওরফে ঢাকাই গৌতম— বাবু-খুনের প্রধান অভিযুক্ত।

স্থানীয়রা বলেন, ঢাকাই গৌতমদের উত্থানের কাহিনি মধ্যমগ্রামে নব্বইয়ের দশকে তৎকালীন শাসক বাম দলের নেতাদের আশ্রয়ে দুষ্কৃতীদের রমরমার গল্প। তখন গৌতম এবং আরেক দুষ্কৃতী প্রদীপ দেব ওরফে পদ ছিল একই দলে। পুলিশ জানাচ্ছে, মূলত লেকটাউনের ত্রাস পিনাকী মিত্রের দলবলকে আশ্রয় দিত গৌতম-পদরা। বাবু ছিল পিনাকীরই শাগরেদ। তদন্তে জানা যায়, সে পিনাকীর বিদেশি রিভলভার হাতিয়ে নিয়েছিল বলে তাকে খুন করা হয়।

পরের বছর দেবু দাস ওরফে দেবাকে খুন করে দেহ গুম করার অভিযোগও ওঠে গৌতমদের বিরুদ্ধে। এই খুনের জেরে তোলপাড় হয়েছিল গোটা রাজ্য। কারণ, এই ঘটনায় গৌতম-পদর সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু অভিজিৎ রায়চৌধুরীকেও। অভিজিৎ তখন ভারতের জাতীয় দলের ফুটবলার। এখানেই শেষ নয়। এর পর আরও একটি খুনের ঘটনায় গৌতম-পদদের নাম জড়ায়।

তার পর থেকেই অবশ্য বদলে যায় দুষ্কৃতীদের সমীকরণ। সাময়িক জেল খেটে জামিনে মুক্তির পর পদ-ঘনিষ্ঠ বুলোন নামে এক দুষ্কৃতীকে খুন করার অভিযোগ ওঠে গৌতমের বিরুদ্ধে। গৌতম এবং পদ আলাদা দল তৈরি করে নাম লেখায় প্রোমোটারিতে। সেই লড়াইয়ের জেরে ২০১০ সালে খুন হয় শ্রীনগরের কমল দাস। অভিযুক্ত সেই গৌতম। মাথায় তৎকালীন ‘শাসক দলের হাত’ থাকলেও ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে পুলিশ গ্রেফতার করে গৌতমকে।

নির্বাচনের পরে ছাড়া পেয়েই অবশ্য গুলির নিশানা হয়েছিল গৌতম। সে বার বেঁচে যায় সে। গ্রেফতার হয় রাম দাস-সহ পদর দলের কয়েক জন। যদিও জেল থেকে বেরনোর পর রাম হাত মেলায় গৌতমেরই সঙ্গে। ২০১২ সালে খুন হয় রাম। তাকে মারতে গিয়ে এলাকার এক ছাত্র সোমনাথ মুখোপাধ্যায়কেও খুন করে দুষ্কৃতীরা। অভিযোগ ওঠে পদ-ঘনিষ্ঠ রাখাল, রিঙ্কুদের বিরুদ্ধে।

২০১৫ সালে পদ দলবল-সহ গ্রেফতার হয়। পরের বছর গ্রেফতার হয় গৌতম। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ফের সে মন দেয় প্রোমোটারিতে। পদ অবশ্য ছাড়া পায়নি। গত বছর মারা যায় সে। ফলে এ দিনের ঘটনায় শেষ হল পদ-গৌতম যুগ।

দুষ্কৃতীরাজ শেষ হল কি? কারণ, গৌতম-খুনে মূল অভিযুক্ত হিসাবে উঠে এল যে টুপাই ওরফে টুবাই মোদকের নাম, সে পদ-র ভাগ্নে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gautam Dey Sarkar Murder Revenge Miscreants
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE