এমন তো কতই হয়! সদ্য ঋতুমতী বালিকাকে ঠেলে শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়ে দেন বাবা-মা। তার পর যার যেমন ভাগ্যে। গীতার জীবনটা এখন অনেকেই জেনে গিয়েছেন। ধন্যবাদ তথ্যচিত্র নির্মাতা জয়না মুখোপাধ্যায়কে। বলিউডের এক ‘সামান্য’ স্টান্টওম্যানকে তিনি বেছে নিয়েছেন তাঁর ছবির কেন্দ্রে। আর বাছবেনই বা না কেন! দাঁতে দাঁত চেপে একটা মেয়ের লড়াই তাঁকে যে অন্ধকার থেকে আলোয় এনে ফেলেছে, সেই আলো সন্ধে-প্রদীপের মতো নয়, গনগনে সূর্যের মতো তার তেজ। এ তেজকে ঢেকে রাখবে কে?
পনেরো বছরের কিশোরী গীতা ট্যান্ডনকে দেওয়ালে মাথা ঠুকে দিত মাতাল বর। রাতের বিছানায় অকথ্য যৌন অত্যাচার। এ সবের মধ্যেই জন্ম নিল দু’দুটো সন্তান। আরও জন্মাতো হয়তো। বছর কুড়ি যখন বয়স, যা আছে কপালে বলে স্বামীর ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন। এই নরক যন্ত্রণা থেকে অন্য যে কোনও ভাবে বেঁচে থাকা ভাল। কিন্তু, জীবন তার পরীক্ষা এত সহজে ছাড়ে না। দুই শিশুসন্তান নিয়ে এক জন একা মায়ের বেঁচে থাকা আজও যে কোনও দেশে খুব একটা সহজ নয়। গীতারও হয়নি। মেসে রান্না করেছেন। তার পর বন্ধুর ছদ্মবেশে যথারীতি হানা দিয়েছে যৌনপল্লির এজেন্ট। আর একটু হলেই বিক্রি হয়ে যেতেন। কিন্তু, গীতা অন্য ধাতুতে গড়া। যে জেদে স্বামীর ঘর ছেড়েছিলেন, সেই জেদ আর চেষ্টাই গীতাকে করে তুলল বলিউডের প্রথম মহিলা স্টান্টওম্যান। এই গীতাই শেখাতে পারেন আমাদের, ‘জীবনটা আসলে সুন্দর। শুধু পালিয়ে যেও না। রুখে দাঁড়াও।’ জীবনের তিক্ততম অভিজ্ঞতাগুলোও যে মেয়েকে জীবন সম্পর্কে হতাশ করতে পারেনি, তার মুখেই তো এ কথা মানায়। এইখানেই গীতা যেন বাস্তব জীবনের এক মহাকাব্যিক চরিত্র হয়ে ওঠেন। এ চরিত্র সীতার মতো নমনীয় নয়। এ চরিত্র চাপের মুখে ধরণী দ্বিধা হও বলে পাতাল প্রবেশের নয়। এ চরিত্র বস্ত্রহরণের পরও সেই বলিষ্ঠ দ্রৌপদীর মতো, যে যাবতীয় অন্যায়কে চ্যালেঞ্জ জানায়। অপেক্ষা করে সেই স্থির প্রজ্ঞায়, জয় এক দিন আসবেই।
আরও খবর: ধর্ষণ, অত্যাচার পেরিয়ে আজ ইনি বলিউডের সফল স্টান্টওম্যান!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy