প্রতীকী ছবি।
শতাংশের বিচারে এক পক্ষ পেয়েছে সাকুল্যে সাড়ে সাত। অন্য পক্ষ সাড়ে পাঁচ! দ্বিতীয় পক্ষের তা-ও দু’টি আসন পেয়ে মুখরক্ষা হয়েছে। প্রথম পক্ষের তা-ও জোটেনি! দু’পক্ষ হাত মিলিয়ে লড়লে এমন শোচনীয় দশা হত না বলে আক্ষেপ শুরু হয়েছে দুই শিবিরেই।
রাজ্যে তীব্র মেরুকরণের ভোটে বাম ও কংগ্রেসের এ বার ফল হয়েছে করুণ। প্রাথমিক ময়না তদন্তে সিপিএম এবং কংগ্রেস, দুই শিবিরের নেতারাই মনে করছেন, জোট বা আসন সমঝোতা করে ভোটের ময়দানে নামলে পরিস্থিতি এত খারাপ হত না। বিজেপির বিকল্প হিসেবে তৃণমূল বা তৃণমূলের বিকল্প হিসেবে বিজেপি— এই দ্বিমেরু ভাবনার বাইরে তখন অন্য একটা সংস্থান মানুষের সামনে থাকত। তিন বছর আগে বিধানসভা ভোটে আসন সমঝোতা করেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুবিধা করতে পারেনি সিপিএম ও কংগ্রেস। কিন্তু মধ্যবর্তী সময়ে রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভের মাত্রা অনেক বেড়েছে এবং গ্রহণযোগ্য বিকল্প তৈরি করতে না পারায় সেই ক্ষোভের পুরো ফায়দাই বিজেপি তুলে নিয়েছে বলে দুই বিরোধী দলের নেতারা মনে করছেন।
লোকসভা নির্বাচনের ফল থেকে পরিষ্কার ইঙ্গিত মিলছে, আগামী বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির সরাসরি লড়াই হবে। আপাতত একেবারে কোণঠাসা হয়ে পড়ে সিপিএম ও কংগ্রেস শিবির মনে করছে, রাজ্য রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে দু’পক্ষের একসঙ্গে চলাই এখন অনিবার্য। তার জন্য দু’দলের রাজ্য নেতৃত্ব যাতে অবিলম্বে আলোচনায় বসেন, সেই দাবিও উঠতে শুরু করেছে দুই শিবিরের অন্দরে।
ভোটের আগে আসন সমঝোতার জন্য এ বার সিপিএম ও কংগ্রেসের মধ্যে কথা শুরু হয়েও শেষ দিকে ভেস্তে গিয়েছিল। দীপা দাশমুন্সি, শঙ্কর মালাকারের মতো যে কংগ্রেস নেতারা জোটের পথে বেঁকে বসেছিলেন, প্রার্থী হয়ে তাঁরা শোচনীয় ফল করেছেন। জোটের অভাবে পুরুলিয়ায় নেপাল মাহাতোও দাগ কাটতে পারেননি। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের এলাকা শ্রীরামপুরে কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়েছে। আবার গত লোকসভা নির্বাচনে পাওয়া ভোটের শতাংশের হিসেব দেখিয়ে যে সিপিএমের রবীন দেব, মৃদুল দে-রা নানা কূট প্রশ্ন তুলেছিলেন, সেই দলও মুখ থুবড়ে পড়েছে। দু’দলেই তাই এখন আক্ষেপের পালা!
প্রদেশ কংগ্রেসের নেতা শুভঙ্কর সরকার সরাসরিই বলছেন, ‘‘আগে যার যা ‘ইগো’ ছিল, এখন তো আর কিছু নেই! ভোটের ফলে দু’দলের অবস্থাই এক। সব শর্ত, দ্বিধা ছেড়়ে দু’দলের নেতাদের অবিলম্বে আলোচনায় বসা এবং মানুষের স্বার্থে যৌথ ভাবে রাস্তায় নামা উচিত— এই প্রস্তাবই দলকে দেব।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও বলছেন, ‘‘আসন সমঝোতা থাকলে মানুষকে একটা বিকল্প দেওয়া যেত। আবার ভেবে তো দেখতেই হবে।’’ বাংলায় বিজেপি এবং কেরল ও ত্রিপুরায় কংগ্রেসের লাভ হওয়ার পরে এই সব রাজ্যের সিপিএম নেতৃত্বই ধর্মনিরপেক্ষ জোট নিয়ে নতুন করে ভাববেন বলে আলিমুদ্দিনের ধারণা। দিল্লিতে আগামী ২৬-২৭ মে বসছে পলিটব্যুরোর বৈঠক। তার আগে আজ, শনিবার আলিমুদ্দিনে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে বিপর্যয়ের প্রাথমিক পর্যালোচনা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy