—ফাইল চিত্র।
লোকসভা নির্বাচনে ধাক্কা খাওয়ার জন্য বামেদের ভোট রামের ঝুলিতে যাওয়ার কারণ সামনে রাখা হলেও এ বারের ভোটে দলের ‘অন্তর্ঘাতে’র যে ছবি এখন সামনে আসছে, তাতে বিস্মিত তৃণমূল। শুধু তা-ই নয়, তাতে যে বেপরোয়া মনোভাব ছিল, তা দেখে একাধিক প্রার্থী স্তম্ভিত! দলের প্রথম পর্যালোচনা বৈঠকে সে সব নিয়ে কাটাছেঁড়া না হলেও পরের বৈঠকের আগে তা করে নিতে চান দলীয় নেতৃত্ব।
তিন বছর আগের বিধানসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট এ বার একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। তা থেকে 'বাম ভোট রামে' যাওয়ার তত্ত্ব অনেকটাই প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে তৃণমূল। কিন্তু তাদের দলের অভ্যন্তরীণ চর্চায় আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ‘অন্তর্ঘাত’। ফল বেরোনোর আগে থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে সেই আভাস কালীঘাটে পৌঁছেছিল। এ বার একাধিক প্রার্থী দলকে তাঁদের নির্বাচনী অভিজ্ঞতা জানাচ্ছেন। গোপনে নয়, বহু কেন্দ্রে এই অন্তর্ঘাতে জড়িয়ে থাকা তৃণমূলের একাংশ দলকে হারাতে এত বেপরোয়া হয়েছিলেন, যা দুশ্চিন্তায় ফেলেছে দলকে।
পশ্চিমাঞ্চলের এক নেতা বলেন, ‘‘প্রার্থী আগে বুঝেছিলেন। তাঁর কাছ থেকে জেনে সংশ্লিষ্ট নেতাদের সতর্কও করা হয়েছিল। কিন্তু কাজ হয়নি।’’ অবিশ্বাসের পরিবেশ তৈরি হওয়ায় পুরুলিয়ায় দলের বড় অংশ নিষ্ক্রিয় ছিল বলে মনে করছেন রাজ্য নেতৃত্ব। ঝাড়গ্রামেও এই পরিবেশ ছিল তীব্র। স্থানীয় নেতাদের মধ্যে ‘তিক্ততা’ সেখানে কতটা, তা টের পেয়েছেন দলে নবাগত প্রার্থী নিজেই।
উত্তরবঙ্গেও এই পরিস্থিতি ছিল। সেখানে পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকে গোষ্ঠী-বিরোধে রক্ত ঝরেছে। এই রকম এলাকা ছাড়াও অপ্রত্যাশিত কয়েকটি আসনে এই ঘটনার ফল ভুগতে হচ্ছে তৃণমূলকে। এই অঞ্চলের পরাজিত এক প্রার্থী রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়েছেন, যে নেতাদের গোষ্ঠী-কোন্দল সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তাঁরাই বিবদমান গোষ্ঠীর মাথা! ফলে, পরস্পরকে খাটো করতে গিয়ে দলের ক্ষতির কথা কেউ ভাবেননি।
নদিয়া ও উত্তর ২৪ পরগনার মতো শক্তিশালী জেলাতেও এই অন্তর্ঘাতের প্রভাব রয়েছে বলে মনে করছেন শাসক দলের নেতাদের একাংশ। জেলার শীর্ষ স্থানীয় এক নেতার কথায়, ‘‘নির্বাচনে প্রচার থেকে শুরু করে গণনা পর্যন্ত দায়িত্ব বণ্টনে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ কাজ করেছে। ফলে নির্বাচনী সংগঠনের সঙ্গে পরিচয় নেই, এমন অনেকে ছড়ি ঘুরিয়ে ক্ষতি করেছে।’’ প্রবল প্রতাপশালী অনুব্রত মণ্ডলের জেলায়ও দলকে এই গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের আঁচ পোহাতে হয়েছে বলেও প্রাথমিক পর্যালোচনায় মনে করছে তৃণমূল।
কঠিন অভিজ্ঞতা হয়েছে দুঁদে রাজনীতিক, পরাজিত মানস ভুঁইয়ার। রাজ্য দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘ভোট চলাকালীনই এই পরিস্থিতি সম্পর্কে মানস জানিয়েছিলেন। কিন্তু বেপরোয়া নেতা-বিধায়কদের পথে আনা যায়নি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘হার-জিত পরে। লড়াইটাই অনেক জায়গায় পুরোপুরি হয়নি এই সব কারণে।’’
মানসবাবু প্রার্থী হয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে। এই দিক থেকে তা দলের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে মনে করে তৃণমূল। সেখানে দলকেই পূর্ণ শক্তিতে নামাতে পারেনি তারা। ওই রাজ্য নেতার কথায়, ‘‘ওই কেন্দ্রের অন্তর্গত ৭টি বিধানসভার ৬টিই আমাদের দখলে। অথচ গণনার সময়েও সব বিধায়ক উপস্থিত ছিলেন না। দল খোঁজ করছে।’’
অভ্যন্তরীণ এই সমস্যা নিয়ে কথাবার্তা শুরু হলেও তা নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে রাজি নয় তৃণমূল। অভিযোগের পিছনে ‘সত্যতা’ না থাকলে গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের সমস্যা
আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। তাতে উল্টো ফল হতে পারে বলে মনে করছেন নেতৃত্বের একাংশ। আর দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণের কাজ চলছে। তার পরে দলনেত্রী প্রয়োজনমতো পদক্ষেপ করবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy