Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ক্ষোভের আঁচেই কি পাল্টা হাওয়া?

তৃণমূল জমানায় অন্যতম বিতর্কিত বিষয় শিক্ষক নিয়োগ।

বিজেপির জয়ে শুক্রবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে শিক্ষাকর্মীদের একাংশের মিছিল। নিজস্ব চিত্র

বিজেপির জয়ে শুক্রবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে শিক্ষাকর্মীদের একাংশের মিছিল। নিজস্ব চিত্র

মধুমিতা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৯ ০৪:১৫
Share: Save:

ভোটের ফল বেরোনোর পরের দিন, শুক্রবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকর্মীদের একাংশ বিজেপির জয়ের আনন্দে মিছিল বার করেছিলেন। কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসের সেই মিছিলে ‘জয় শ্রীরাম’, ‘ভারতমাতা কি জয়’ ধ্বনি শোনা গিয়েছে। কিন্তু তার পাল্টা তৃণমূলপন্থী কর্মীদের মিছিল হয়নি। অনেকেই বলছেন, রাজ্যে শিক্ষা জগতে কর্মীদের নানান বিষয়ে রাজ্য সরকারের প্রতি যে ক্ষোভ জন্মেছে তার প্রতীক এই মিছিল। ভোটের বাক্সে যার আঁচ মিলেছে।

তৃণমূল জমানায় অন্যতম বিতর্কিত বিষয় শিক্ষক নিয়োগ। প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক নিয়োগ হোক বা উচ্চশিক্ষায় নিয়োগ—ধীর গতি, নিয়োগে স্বজন-পোষণ, ঘুষ নেওয়ার বিবিধ অভিযোগ উঠেছে। এর বাইরে রাজ্যের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতি, সিন্ডিকেটে পড়ুয়া, শিক্ষক বা শিক্ষাকর্মীদের নির্বাচিত প্রতিনিধি নেই। সদস্যেরা মনোনীত। গত দু’বছর ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়নি। বরং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিরুদ্ধে ভর্তি-সহ নানান বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। এই সব মিলিয়েই হাওয়া বদল বলে মনে করছেন অনেকে।

সম্প্রতি স্কুলে শিক্ষক পদে দ্রুত নিয়োগের দাবিতে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর পরীক্ষায় পাশ করা প্রার্থীরা ২৯ দিন ধর্মতলায় অনশন করেছেন। খোদ মুখ্যমন্ত্রী এসে আশ্বাস দেওয়ার পরে অনশন ওঠে। কিন্তু ক্ষোভের প্রশমন হয়েছে কি?

অনশন আন্দোলনের নেত্রী তানিয়া শেঠ ২০১৭ থেকে মেধা তালিকায় থাকলেও চাকরির জন্য ডাক পাননি। শনিবার তিনি বলেন, ‘‘হাজার-হাজার বেকার ছেলেমেয়ে শিক্ষকের চাকরি পাওয়ার আশায় বসে আছে। এই ক্ষোভ তো তাঁরা ভোটের বাক্সে উগড়েছেন।’’ উঠে আসছে যোগ্যতা অনুযায়ী বেতন কাঠামোর দাবিতে প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলনের কথাও। অরাজনৈতিক সংগঠন ‘উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদিকা পৃথা বিশ্বাসের বক্তব্য, ‘‘আন্দোলনের পরে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বদলির ঘটনা ঘটেছে। তার প্রভাব তো ভোট বাক্সে পড়বেই।’’ চুক্তি-শিক্ষক, বৃত্তি-শিক্ষক, পার্শ্বশিক্ষক-সহ শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুক্ত কর্মী সংগঠনের অনশন-আন্দোলনও হয়েছে। রাজ্য প্যারাটিচার কল্যাণ সমিতির নেতা অভিজিৎ ভৌমিক বলছেন, ‘‘এই ভোটের ফলের নিরিখে তাঁরা আন্দোলন আরও সংহত করবেন।’’ ঘটনাচক্রে, ইতিমধ্যেই বিজেপি পার্শ্বশিক্ষকদের সেল খুলেছে।

রাজ্যে পালাবদলের পরে বাম-ঘনিষ্ঠ অনেকেই তৃণমূলে এসে বিভিন্ন শিক্ষক নিয়োগের কমিশনের মাথায় বসেন। তাঁদের নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে। রাজ্য বিজেপির ‘ইন্টেলেকচুয়াল সেল’-এর আহ্বায়ক এবং যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কলেজের অধ্যক্ষ পঙ্কজ রায় বলেন, ‘‘ওঁরা বাম আমলে অঙ্কুরিত, তৃণমূল আমলে প্রস্ফুটিত। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগের বিভিন্ন কমিশনে পারদর্শিতা দেখাতে পারেননি।’’ বাম মনোভাবাপন্ন রাজ্য কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (ওয়েবকুটা)-র প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজ বলেন, ‘‘২০১৮ সালে তৈরি আইনে কলেজের পরিচালন সমিতিতে পড়ুয়া, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের প্রতিনিধি সংখ্যা কমানো হয়েছে। পরিচালন সমিতির সভাপতি মনোনীত করবে বিকাশ ভবন।’’ তবে শিক্ষা জগতের কত ভোট বিজেপি পেয়েছে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। তৃণমূলের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ‘ওয়েবকুপা’-র নেতা এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মনোজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘‘গ্রামাঞ্চলের স্কুল শিক্ষকেরা ক্ষোভে হয়তো ভোট বিজেপির ঘরেই দিয়েছে। কিন্তু উচ্চশিক্ষায় জড়িতদের ভোট বিজেপির ঘরে খুব একটা যায়নি।’’ এ প্রসঙ্গে পঙ্কজবাবুর মন্তব্য, ‘‘নীরবে বদল ওঁরা বুঝতেই পারছেন না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE