Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

স্বাধীনতার পরে প্রথম এমন হল, বলছেন নেপাল

২০১১ সালে পুনর্গঠনের পরে বিধানসভা ভোটে ফরওয়ার্ড ব্লকের থেকে বাঘমুণ্ডির দখল যায় নেপাল মাহাতোর হাতে। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে তিনি পুরুলিয়া থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। হেরেছিলেন। কিন্তু বাঘমুণ্ডিতে লিড ছিল তাঁরই।

ভোটের ফলে চোখ নেপালের। নিজস্ব চিত্র

ভোটের ফলে চোখ নেপালের। নিজস্ব চিত্র

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৯ ০১:২৯
Share: Save:

নিজে তিনি অঙ্কের মাস্টারমশাই। কিন্তু অঙ্কটা মেলাতে পারছেন না নেপাল মাহাতো।

পুরুলিয়ায় কংগ্রেসের হাতের জোর অনেকটাই আসত বাঘমুণ্ডি থেকে। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোট। জেলার ন’টি আসনের মধ্যে সাতটিই তৃণমূলের দখলে চলে যায়। শুধু দু’টি ধরে রেখেছিল কংগ্রেস। বাঘমুণ্ডি আর পুরুলিয়া। এ বারে দু’টি বিধানসভা এলাকাতেই তরতর করে এগিয়ে গিয়েছে বিজেপি। বাঘমুণ্ডির কংগ্রেস বিধায়ক নেপাল মাহাতো পুরুলিয়া লোকসভা আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন। নিজের বিধানসভা এলাকাতেও তিনি তিন নম্বরে। বিজেপি এবং তৃণমূলের পরে। হিসেব মিলছে না, বলছে কংগ্রেস।

২০১১ সালে পুনর্গঠনের পরে বিধানসভা ভোটে ফরওয়ার্ড ব্লকের থেকে বাঘমুণ্ডির দখল যায় নেপাল মাহাতোর হাতে। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে তিনি পুরুলিয়া থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। হেরেছিলেন। কিন্তু বাঘমুণ্ডিতে লিড ছিল তাঁরই। তার দু’বছর পরেই, ২০১৬ সালে জোরদার ভাবে ময়দানে নেমেছিল তৃণমূল। কিন্তু নেপাল মাহাতোকে বাঘমুণ্ডিতে টলানো যায়নি। শুধু ব্যবধান কমেছিল কিছুটা।

সেই নেপাল এ বার জঙ্গলমহলের বাঘমুণ্ডি থেকে পেয়েছেন সাড়ে ২৯ হাজার মতো ভোট। ১৫ শতাংশের মতো। প্রায় সাড়ে ২৪ শতাংশ ভোট পেয়ে তাঁর আগে রয়েছে তৃণমূল। আর ৫ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পেয়ে নেপালবাবুর পরে রয়েছেন বাঘমুণ্ডিরই বাসিন্দা, ফরওয়ার্ড ব্লকের বীরসিংহ মাহাতো। তিন দলের মোট ভোট যোগ করলে যা হয়, তার থেকেও বেশি ভোট এ বার বাঘমুণ্ডিতে পেয়েছে বিজেপি। একাই প্রায় ৫১ শতাংশ।

পুরুলিয়ার ছবিটাও হরেদরে এক। তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেওয়া সুদীপ মুখোপাধ্যায় ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে এই কেন্দ্র থেকে বাম-কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছিলেন। তৃণমূলের থেকে পুরুলিয়ার দখল ছিনিয়ে নেন তিনি। এই বিধানসভা এলাকায় এ বার লোকসভা ভোটে কংগ্রেস রয়েছে চার নম্বরে। পেয়েছে সাড়ে চার শতাংশের মতো ভোট। তার আগে বামেরা। তাদের ঝুলিতে পাঁচ শতাংশের কিছু বেশি ভোট। প্রায় ৩৪ শতাংশ ভোট পেয়ে দু’নম্বরে রয়েছে তৃণমূল। আর বিজেপি একাই পেয়েছে ৫২ শতাংশেরও বেশি ভোট। এখানেও কংগ্রেস, বাম ও তৃণমূলের পাওয়া ভোটের যোগফল টপকে গিয়েছে গেরুয়া শিবির।

কেন এমনটা? জেলা রাজনীতির ওঠাপড়া যাঁরা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করেন, এমন কেউ কেউ মনে করেছেন, জেলার অন্য বিভিন্ন কেন্দ্রের মতো পুরুলিয়া ও বাঘমুণ্ডিতেও কংগ্রেস ও বামেদের ভোটের সিংহভাগ গিয়েছে বিজেপির ঝুলিতে। বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘গত পঞ্চায়েত ভোটে বাঘমুণ্ডির মাঠাতে একটি বুথ লুঠ করেছিল কিছু দুষ্কৃতী। মানুষ মানেননি। ছাপ্পার পরে বুথে ঢুকে তাঁরা সেই ভোট ভন্ডুল করে দিয়েছিলেন। পরে কড়া নিরাপত্তায় আবার ভোট হলে মানুষের রায় আমাদের পক্ষে যায়।’’ তাঁর দাবি, ওই ঘটনাতেই ইঙ্গিত ছিল, তৃণমূলকে হারাতে অন্য দলের অনেকেও বিজেপিকেই ভোট দেবেন লোকসভায়।

গোটা ভোটপর্বে এলাকায় তাঁকে প্রচারে খুব একটা দেখা যায়নি। এই বিপর্যয়ের পরে কী বলছেন পুরুলিয়ার কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়? বলছেন, ‘‘এ বার মেরুকরণের ভোট হয়েছে। তা ছাড়া মানুষ তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে এবার বিজেপিকে ভোট দেবেন সেটা স্থির করেই ফেলেছিলেন।’’ তার পরে জুড়ে দিচ্ছেন, ‘‘তৃণমূলের ক্ষমতাসীন লোকজনের একাংশের বিরুদ্ধে বীতশ্রদ্ধ ছিলেন মানুষ। আর বিজেপি পুরুলিয়ায় যে ভাবে সংগঠন গড়ে তুলেছিল, সেটারই ফল মিলেছে। কংগ্রেসের তরফে তেমন প্রচেষ্টা মানুষ দেখতে পাননি।’’

হাতের তেলোর মতো পরিচিত রাজনীতির ময়দান এ বার তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছে খালি হাতেই। নেপালবাবু বলছেন, ‘‘এবারের ভোট সত্যি বুঝতে পারিনি। আমাদের ভোট যে এতটা বিজেপির দিকে চলে গিয়েছে, সেটা আগে বোঝা যায়নি। স্বাধীনতার পরে প্রথম এ রকম হল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE