প্রতীকী ছবি।
ছিল লাল। হয়েছিল সবুজ। এখন হচ্ছে গেরুয়া। আবার সবুজ থেকে কিছু ফিরে যাচ্ছে আদি লালে!
কার পার্টি অফিস কার দখলে, এই প্রশ্নই এখন বাংলা জুড়ে রীতিমতো এক ধাঁধা! তৃণমূলের অভিযোগ, তাদের অফিস জবর-দখল করে নিচ্ছে বিজেপি। বিজেপির দাবি, তারা এমন দখলের রাজনীতিতে বিশ্বাসই করে না। আবার সিপিএমের দখল হয়ে যাওয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়া পার্টি অফিসে লাল পতাকা ফিরে আসছে নানা জেলায়। তৃণমূল বলছে, নেপথ্যে কারসাজি বিজেপির! আবার বিজেপি বলছে, তৃণমূলই এখন রামের ভয়ে বামকে অফিসের চাবি ফিরিয়ে দিচ্ছে!
লোকসভা নির্বাচনের ফল এ বার বাংলায় রাজনৈতিক সমীকরণের চেনা ছবি একেবারে ওলট -পালট করে দিয়েছে। তার পরেই শুরু হয়েছে পার্টি অফিসের রং বদলের পালা। যে সব এলাকায় বিজেপি জিতেছে বা ভাল ফল করেছে, সেখানে অটো, ট্যাক্সি বা টোটো ইউনিয়নের তৃণমূল ঝান্ডা নেমে গিয়েছে রাতারাতি। কোথাও ঝান্ডার জায়গা ফাঁকা, আবার কোথাও দ্রুত জায়গা করে নিয়েছে গেরুয়া। ব্যারাকপুর মহকুমায় এখন যেমন রেল হকার্স ইউনিয়ন অফিস থেকে শুরু করে বহু অটো-টোটোর মাথায় গেরুয়া নিশান! এক দশক আগে বাম জমানা অস্তাচলে যেতে শুরু করার পর্বে এই একই ভাবে লাল ঝান্ডার জায়গা নিয়েছিল তৃণমূলের পতাকা।
এ না হয় গেল খেটে খাওয়া মানুষের জীবিকার নিরাপত্তা বজায় রাখার স্বার্থে রাজনৈতিক পালাবদলের সঙ্গে তাল রাখার চেষ্টা। কিন্তু তার পাশাপাশি গত কয়েক দিনে তাদের প্রায় দু’শো পার্টি অফিস বিজেপি দখল করেছে বলে তৃণমূলের অভিযোগ। কিছু ক্ষেত্রে অফিসে ভাঙচুর হয়েছে, কোথাও রং বদলে গেরুয়া করে দেওয়া হয়েছে। কালীঘাটে দলীয় পর্যালোচনা বৈঠকের পরে শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, তিন দিনের মধ্যে দখল হওয়া অফিস পুনরুদ্ধার করতে হবে। তার পরে রবিবার মেদিনীপুর গ্রামীণ এলাকায় আমতলা থেকে রামনগর পর্যন্ত কয়েকটি ‘বেহাত’ হয়ে যাওয়া অফিস দখল নিয়েছে তৃণমূল। আবার এ দিনই দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরে শিববাড়ি এলাকার তৃণমূল অফিস দখল করে পতাকা লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে।
বিজেপি নেতা মুকুল রায় অবশ্য তৃণমূলের অভিযোগ উড়িয়ে দাবি করেছেন, ‘‘বিজেপি দখলের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। তবু এ-রকম কিছু হয়ে থাকলে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’’ তৃণমূলের ফিরহাদ হাকিম বলছেন, ‘‘আমরা রাজ্যের সরকারে আছি। তবু বিজেপি জয়ের আনন্দে বিহ্বল হয়ে নানা কাণ্ড করছে। সরকার আইনমতো ব্যবস্থা নেবে।’’
দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর দ্বন্দ্বের মাঝে নেপো হয়ে পার্টি অফিসের দই খেয়ে যাচ্ছে সিপিএমও! কোনও মহলের দাবি, গত কয়েক দিনে নানা জেলায় ১৭০টিরও বেশি পার্টি অফিস পুনরুদ্ধার করেছে সিপিএম। পুরুলিয়া জেলার পাড়া ব্লকে এ দিনই যেমন উদয়পুরে পার্টি অফিস খুলে দলের পতাকা টাঙানো হয়েছে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীননাথ লোধার নেতৃত্বে। পাড়ার তৃণমূল বিধায়ক উমাপদ বাউরির দাবি, সিপিএমের কর্মীরাই আগে তৃণমূলে যোগ দিয়ে ওই অফিসে শাসক দলের পতাকা লাগিয়েছিলেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, লোকসভা ভোটে যাদের শোচনীয় ফল হল, তারাই ফলের পরে দলে দলে বেরিয়ে পার্টি অফিস খুলতে চলে গেল কী ভাবে!
কোনও কোনও মহলের দাবি, এর পিছনে বিজেপির মদত আছে। কিন্তু সিপিএম নেতাদের প্রশ্ন, তৃণমূলের অফিস দখল করছে যে বিজেপি, তারা সিপিএমের গুলো ফিরিয়ে দেবে কেন? বিজেপি নেতা মুকুলবাবু বরং বলছেন, ‘‘২০১১ সালে যে ৮৯টা বিধানসভা আসন বাম ও কংগ্রেস জিতেছিল, এ বারের লোকসভা ভোটে তার সবগুলোয় এগিয়ে আছে তৃণমূল। বামের ভোট তৃণমূলে গিয়েছে এবং তার প্রতিক্রিয়ায় সিপিএম এখন পার্টি অফিস ফেরত পাচ্ছে!’’ তৃণমূলের ফিরহাদের মন্তব্যও ইঙ্গিতপূর্ণ! তাঁর কথায়, ‘‘আমরা কারও পার্টি অফিস দখল করিনি। সিপিএমে যে ক’টা লোক এখনও আছে, তারা পার্টি অফিস খুললে খুলুক না! আমরা জল দেব, বিদ্যুৎ দেব, সব সাহায্য করব!’’
কাণ্ড দেখে সিপিএম নেতা সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘আসল গল্পটা অন্য! পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূল আমাদের অফিস দখল করেছিল। এখন তৃণমূল কোণঠাসা, পুলিশ চুপচাপ আছে। এই সুযোগে আমাদের কিছু পার্টি অফিস আবার খুলেছে। আমরা কর্মীদের বলেছি, কোনও ভাবেই যেন পাল্টা দখলের অভিযোগ আমাদের বিরুদ্ধে না ওঠে।’’ আলিমুদ্দিনে রাজ্য সিপিএমের কাছে আসা তথ্য অনুযায়ী, গোটা তিরিশেক অফিস ফের খুলেছে। সুজনবাবুর মতে, ‘‘১৬৮ বা ১৭২টা একটু বাড়াবাড়ি!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy