Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভাঙা অফিসে পতাকা, সাহস দিলেন শুভেন্দু 

সেই সঙ্গে শুভেন্দুর বার্তা, ‘‘মানুষ চাইলে আমরা ফিরে আসব, না চাইলে ফিরব না। তবে এখনও পাক্কা দু’বছর পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সরকার থাকবে। যদি কেউ ভেবে নিয়ে থাকে তৃণমূলটা উড়ে গিয়েছে, তা হলে ভুল করছে।’’

ভাঙা-গড়া: মেদিনীপুরের কালীনগরে তৃণমূল কার্যালয়ের সামনে শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

ভাঙা-গড়া: মেদিনীপুরের কালীনগরে তৃণমূল কার্যালয়ের সামনে শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৯ ০৩:৫৯
Share: Save:

এ যেন মুকুট পড়িয়া পদতলে!

সোমবারের ঘামঝরানো দুপুর। মেদিনীপুর সদর ব্লকের কালীনগরে এসে পৌঁছলেন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। ভাঙচুর হওয়া তৃণমূল কার্যালয়ের সামনে মাটিতে পড়ে ধুলোমাখা দলীয় পতাকা। নিচু হয়ে সেই পতাকা কাঁধে তুলে নিলেন শুভেন্দু। তার পর নিজে হাতে পার্টি অফিসের সামনে এক খুঁটিতে বেঁধে দিলেন পতাকাটি। কর্মীদের ভরসা জুগিয়ে বললেন, ‘‘দলের পতাকা এ ভাবে মাটিতে পড়ে থাকতে পারে না। চোখের জল নয়, সাহস নিয়ে থাকুন।’’

সেই সঙ্গে শুভেন্দুর বার্তা, ‘‘মানুষ চাইলে আমরা ফিরে আসব, না চাইলে ফিরব না। তবে এখনও পাক্কা দু’বছর পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সরকার থাকবে। যদি কেউ ভেবে নিয়ে থাকে তৃণমূলটা উড়ে গিয়েছে, তা হলে ভুল করছে।’’

এ বার লোকসভা ভোটে জঙ্গলমহলে জোর ধাক্কা খেয়েছে তৃণমূল। ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় ছড়ানো পাঁচটি কেন্দ্রেই জিতেছে বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে জঙ্গলমহল পুনরুদ্ধারের ভার খোদ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সঁপেছেন শুভেন্দুকে। তার পরই এ দিন মেদিনীপুরে আসেন নন্দীগ্রামের সেনাপতি। ভোটের ফলপ্রকাশের পরে যে-সব এলাকায় তৃণমূল কার্যালয় বিজেপি ভাঙচুর করেছে বলে অভিযোগ, এ দিন সেই সব এলাকায় যান শুভেন্দু। ‘আক্রান্ত’ কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলেন। মনে করিয়ে দেন পুরনো দিনের লড়াইয়ের কথা। শুভেন্দু বলেন, ‘‘বামফ্রন্টের রাজত্বে পশ্চিম মেদিনীপুর ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। ২০০০ সালের চমকাইতলা থেকে ২০১১ সালের নেতাই, গোটা জেলা বারবার ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। আমরা এটা আটকেছি, আবারও আটকাব। সিপিএমের লোকেরা বিজেপির পতাকা নিয়ে যা করছে, সেটা আমরা করতে দেব না।’’ বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি শমিত দাশ অবশ্য পাল্টা বলছেন, ‘‘তৃণমূল আজ জনরোষের শিকার। ওদের পার্টি অফিস আমাদের কেউ ভাঙতে যায়নি। আমরা দখলের রাজনীতি করি না।’’

মেদিনীপুর সদর থেকে শালবনি, চন্দ্রকোনা হয়ে কেশপুর। রাত পর্যন্ত চরকিপাক খেয়েছেন শুভেন্দু। বিকেলে চন্দ্রকোনা রোডের গুইয়াদহতে পথসভা করেছেন। কেশপুরে এসে কর্মীদের বলেছেন, ‘‘চোখে চোখ রেখে লড়াই করুণ। আমি নন্দীগ্রাম, নেতাই করা লোক। দখল হলে পুনর্দখল কী ভাবে করতে হয় জানি।’’ কাল, বুধবার শালবনি থেকে মণ্ডলকুপি পর্যন্ত মিছিলে থাকবেন শুভেন্দু। এ দিন মণ্ডলকুপিতেও দলের ভাঙা কার্যালয়ে পতাকা তোলেন তিনি।

গ্রামবাসীদের একাংশ নালিশ করেন, হামলার কথা জেনেও পুলিশ সময়ে আসেনি। শুভেন্দু তাঁদের বলেন, ‘‘গতকাল বিকেল পর্যন্ত পুলিশ ছিল নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে। আজ থেকে রাজ্য সরকারের দায়িত্ব। মুখ্যমন্ত্রী নিজে পুলিশমন্ত্রীও। তিনি অত্যন্ত শক্তিশালী। তিনি কখনও আইনকে হাতে তুলে নিতে দেন না।’’

কিন্তু অনেক জায়গায় তো তৃণমূলের কর্মীরা কার্যালয় খুলতে ভয় পাচ্ছেন? শুভেন্দুর জবাব, ‘‘সব জায়গায় আমাদের কার্যালয় খুলে যাচ্ছে। গত পরশু দিন থেকে জেলার টিম কাজ করছে।’’ শুভেন্দুকে কাছে পেয়ে জেলার তৃণমূল কর্মীরা দৃশ্যতই চনমনে ছিলেন। তাঁদেরই কেউ কেউ মনে করিয়ে দেন, ২০১১-র সেই সময়, যখন তৃণমূলের পতাকা বুকে করে পথ চলেছেন নানা বয়সের মানুষ।।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE