বিজেপির মিছিল সিঙ্গুরে। শুক্রবার। ছবি: দীপঙ্কর দে।
রাজ্যের শাসকদলের থেকে মুখ ফেরাল সিঙ্গুরও। ফের সেখানে শিল্পের দাবিতে মিছিল হল।
লোকসভা ভোটের ফল বলছে, হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত এই বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় ১০ হাজার ৪২৯ ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন। লকেট পেয়েছেন ৯৩, ১৭৭টি ভোট (৪৬.০৬%)। সেখানে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল প্রার্থী রত্না দে নাগের প্রাপ্ত ভোট ৮২, ৭৪৮ (৪১.০৩%)।
সিঙ্গুরের জমি-আন্দোলনই আট বছর আগে বিরোধী নেত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রীর মসনদে পৌঁছে দিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। টাটাদের গাড়ি কারখানার জন্য সেখানে অধিগৃহীত জমি চাষিদের ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বছর তিনেক আগে সেই জমি চাষিরা ফিরেও পেয়েছেন। সেই পর্বে চাষিদের মাঝেমধ্যে ধৈর্যচ্যুতি ঘটলেও তাঁরা শেষ পর্যন্ত মমতার উপরে আস্থাই রেখেছিলেন। গত কয়েকটি নির্বাচনের ফল সে কথাই বলছে। কিন্তু এ বার কী হল?
বেড়াবেড়ি, কেজেডি এবং গোপালনগর— এই তিনটি মৌজা নিয়েই ছিল টাটাদের প্রকল্প এলাকা। এর মধ্যে গোপালনগর পঞ্চায়েতের মোট ১৮টি আসনের মধ্যে এ বার বিজেপি ১১টিতেই জিতেছে। সাতটিতে জিতেছে তৃণমূল। কেজেডি-র ১৮টি আসনেও একই ফল। বেড়াবেড়ি মৌজারও কিছু আসন গিয়েছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
সিঙ্গুরের তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ফের নতুন করে ভাবতে হবে। আমাদের নিশ্চয়ই কোথাও ভুল ছিল। পঞ্চায়েত সদস্যদের আচরণ নিয়েও নানা ক্ষেত্রে নানা প্রশ্ন রয়েছে। আমাদের প্রার্থীর হারের সম্ভাব্য কারণ আমার কাছে এখনও পরিষ্কার নয়।’’ দলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘সিঙ্গুরে কোথায় সমস্যা তা দলের সব স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেই জানতে হবে।’’ সিঙ্গুরের জমি-আন্দোলনের অন্যতম মুখ, হরিপালের বিধায়ক বেচারাম মান্না মনে করছেন, ‘‘আত্ম-সমালোচনা জরুরি। এখনই ব্যবস্থা না নিতে পারলে আমাদের সংগঠনের ক্ষতি হয়ে যাবে।’’
জয়ের খবর পাওয়ার ঠিক পরেই বৃহস্পতিবার বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় সিঙ্গুরে টাটারা যাতে ফের কারখানা তৈরি করতে পারে, সেই চেষ্টা করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে, শুক্রবার ওই জমিতেই কারখানার দাবিতে মিছিল করল বিজেপি। বছর তিনেক আগে সুপ্রিম কোর্ট চাষিদের ওই জমি ফেরানোর নির্দেশ দেওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী তা চাষযোগ্য করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কাজে নেমেছিল প্রশাসন। কিন্তু এতদিন বাদেও সেই জমি চাযযোগ্য হয়নি বলে অভিযোগ।
এ দিন বেলা দশটা নাগাদ বিজেপি সমর্থকরা ওই জমি সংলগ্ন কালীমন্দির থেকে গোপালনগর পর্যন্ত শিল্পের দাবিতে মিছিল করেন। নেতৃত্বে থাকা সঞ্জয় পাণ্ডে বলেন, ‘‘রাজ্যবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দু ছিল টাটা প্রকল্প। কারখানা হলে মানুষ কাজ পেতেন। তৃণমূলের আমলে রাজ্যে পাতে দেওয়ার মতো কোনও শিল্পই হয়নি। উল্টে তিনটে জুটমিল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমরা চাই সিঙ্গুরে টাটারা ফিরে আসুন।’’ বিজেপি সমর্থক অসিত জ্যোতি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী জেদ করলেই তো হবে না। টাটা প্রকল্পের এই পাথুরে আর কাঁকড় মেশানো মাটিতে আর যে চাষ সম্ভব নয়, সেই বাস্তবতার কথা সরকারকে বুঝতে হবে। তাই এখানে ফের কারখানা হোক। আমাদের ঘরের বেকার ছেলেরা চাকরি পাক।’’ ফের একবার সিঙ্গুরের মানুষের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে বিজেপি প্রার্থী লকেট বলেন, ‘‘ওখানকার মানুষের জন্য যাতে সদর্থক কিছু করার চেষ্টা করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy