কসবার বাড়িতে মিমি চক্রবর্তী। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল
‘পরীক্ষা’র দিন রমজানে ‘উপবাস ব্রত’ ছিল তাঁর। আর ফলপ্রকাশের দিন পালন করলেন ‘মৌনব্রত’।
ফলে জয় নিয়ে নিশ্চিত হওয়া ইস্তক কার্যত অন্তঃপুরবর্তিনী হয়েই থাকলেন যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের জয়ী তৃণমূল প্রার্থী মিমি চক্রবর্তী।
টালিগঞ্জের ডাকসাইটে নায়িকা থেকে যাদবপুরের নতুন সাংসদের তরফে দুপুরে একটা বার্তা এসেছিল: ‘কিছু করার নেই। বিষয়টা অত্যন্ত ব্যক্তিগত। জ্যোতিষীর বারণ মেনেই এখন কথা বলা যাচ্ছে না।’ সন্ধ্যায় যখন ভিভিপ্যাট মেলানোর কাজ চলছে বিজয়গড় কলেজের গণনা কেন্দ্রে, কসবা রথতলার সরসী আবাসনের দশতলা থেকে নেমে নায়িকা প্রথম বার প্রকাশ্যে দৃশ্যমান হলেন। বললেন, ‘‘জ্যোতিষীর কথা মেনে সাতটা পর্যন্ত বাড়ির বাইরে বেরোইনি আমি।’’
আরও পড়ুন: তিন লাখে মিমি-নুসরত, দু’ লাখে বাবুল, বিপুল ব্যবধানে জয়ী রাজ্যের এই তারকারা
তাঁর ভোট-প্রচারের ‘জার্সি’ সালোয়ার-কামিজ, স্নিকার্সের বদলে লিনেনের সবুজ শাড়ি, লম্বাহাতা বেজরঙা ব্রোকেডের ব্লাউজ় আর সোনারঙা মোজরি জুতোয় পুরোদস্তুর আনুষ্ঠানিক সাজে এলেন মিমি। ‘‘প্রথমেই কালীঘাটে দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়)-কে প্রণাম করতে যাব।’’ তবে গণনা কেন্দ্রে ‘বিজয়িনী’র শংসাপত্র নিতেই রাত গড়িয়েছে।
বাড়িবন্দি থেকেও অবশ্য তৃণমূল-বিজেপির হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আঁচ ভালই টের পেয়েছেন মমতার টলি-ব্রিগেডের চোখের মণি। ‘‘উফ্, যখন টিভি-তে দেখাচ্ছে ফারাকটা জাস্ট ২০-২১, খুব টেনশন হচ্ছিল,’’ আবাসন-চত্বরে দাঁড়িয়েই বলেন মিমি। আর নিজের জন্য? ‘‘আমার মা থেকে শুরু করে দলেরও অনেকে আমাকে ভালবেসে টেনশন করেছে, আমার কিন্তু আজ নিজের কথা তত মনেই হচ্ছিল না,’’ বললেন নায়িকা। মিমি অবাক যাদবপুরের ‘রানার্স’ অনুপম হাজরাকে নিয়ে। ‘‘প্রচারের সময় বেশ কয়েক বার বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের প্রায় মুখোমুখি হয়েছিলাম। ওঁর বিষয়ে নানা কথা শুনেছি। ভেবেছিলাম, উনি আরও ভাল করবেন,’’ অকপট যাদবপুরের নয়া সাংসদ।
ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মতো সাংসদের পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম কেন্দ্র যাদবপুরের ‘ওজন’ সম্পর্কে এত দিনে ওয়াকিবহাল মিমি। বললেন, ‘‘আমি খুব কৃতজ্ঞ, দিদি আমার উপরে এতটা আস্থা রেখেছেন বলে। যাদবপুরের ভোটের ইতিহাসে রেকর্ড ব্যবধানে (প্রায় তিন লক্ষ) জিততে পেরেও খুব ভাল লাগছে।’’ দিনভর নজর রেখেছেন তাঁর জয়যাত্রার গতির তারতম্যে। একান্তে বলছিলেন, ‘‘সব থেকে খুশি হয়েছি যাদবপুরের জন্য। মাইনাস ফিফটিনটাকে প্লাস ফিফটিন থাউজ়্যান্ড (১৫০০০) করা গিয়েছে।’’ মিমির কাছে আসা খবরমাফিক, টালিগঞ্জ, সোনারপুর, বারুইপুরের বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতেও তৃণমূলের লিড বেড়েছে। সর্বোপরি ভাঙড়ের লক্ষ ভোটের ব্যবধানে আপ্লুত তারকা-প্রার্থী বলছেন, ‘‘আমি বরাবরই বলেছি, পাওয়ার গ্রিড-টিড কিস্যু নয়! প্রবলেমটা ছিল আমাদের মাথায়।’’
সারা দিনে বারবার অরূপ বিশ্বাস, শুভাশিস চক্রবর্তী ছাড়াও বসিরহাটের জয়ী তারকা নুসরতের সঙ্গেও কথা বলেছেন মিমি। সংবাদমাধ্যমের সামনে প্রত্যাশিত ভাবেই দলের সব কর্মী, ভোটারকে ধন্যবাদ জানিয়ে চলেছেন। নতুন সাংসদ হিসেবে ভাবনা কী? ‘‘আমি নিজেকে এখনও দলের কর্মীর বাইরে ভাবতে পারছি না!’’ কিছু কথা দিল্লিতে শপথগ্রহণের পরের জন্য তুলে রাখছেন মিমি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy