শান্তি সাহা। ছবি: সুজিত দুয়ারি।
চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে গিয়েছিলেন বছর তিরিশের তরুণী। পাথরে ধাক্কা লেগে মাথা ফাটে। লাইনের ধারে পড়েছিলেন রক্তাক্ত অবস্থায়।
শনিবার দুপুরে হাবড়া স্টেশনের কাছে এই ঘটনায় লোক জড়ো হতে দেরি হয়নি। কিন্তু গোটা ভিড়টা তখন শুধুই আলোচনায় ব্যস্ত। কেউ জখম তরুণীকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সাহস করেননি।
খবর পৌঁছয় জিরাট রোডের বাসিন্দা শান্তি সাহার কাছে। দিদি লীলাকে নিয়ে তিনি পৌঁছন ঘটনাস্থলে। টোটো ডেকে জখম তরুণীকে নিয়ে পৌঁছন হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে।
জিআরপি সূত্রে জানা গিয়েছে, জখম তরুণীর নাম তাজমিরা বিবি। তাঁর দিদি মিনা বলেন, ‘‘বোন এখন মোটামুটি সুস্থ। দুই মহিলা দ্রুত বোনকে হাসপাতালে নিয়ে না এলে বড় বিপদ ঘটে যেত। ওঁদের কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।’’
শান্তির কাছে এমন অভিজ্ঞতা অবশ্য নতুন নয়।
হাবড়া শহরের জিরাট রোডের পিছন দিয়ে গিয়েছে রেললাইন। মাঝে মধ্যেই কেউ ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে বা ট্রেনের ধাক্কায় জখম হন ওই এলাকায়। খবর পেলেই সেখানে হাজির শান্তি। জখমকে তুলে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। কখন পুলিশ আসবে, কখন খাতাপত্র লেখা হবে, সে সব তখন তাঁর মাথায় থাকে না।
কেন্দ্র সরকারের অস্থায়ী কর্মী শান্তির কথায়, ‘‘থানা-পুলিশের ঝক্কি পোহাতে হবে ভেবে অনেকে এগিয়ে আসেন না। আমি ভাবি, আগে প্রাণটা তো বাঁচুক। বাড়িতে লোক হয় তো মানুষটার পথ চেয়ে বসে আছেন।’’
শান্তির অভিজ্ঞতা, থানা-পুলিশের যে ধরনের ঝক্কির কথা মানুষ ভাবেন, তেমন ঝামেলায় তিনি অন্তত জড়াননি কখনও। অনেককেই উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। রেলপুলিশ সহযোগিতাই করেছে তাঁকে।
বনগাঁ জিআরপি-র ওসি লোকনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘ওঁর মতোই যদি সকলে এগিয়ে আসেন, তা হলে আমাদের কাজও অনেক সহজ হয়।’’
রেল পুলিশ, রাজ্য পুলিশ জানিয়েছে, জখম কাউকে হাসপাতালে আনা হলে উদ্ধারকারীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদটুকু নিশ্চয়ই করা হয়। কিন্তু তাকে কেন ঝক্কি বলে ভাববেন কেউ! জখম ব্যক্তি পরে মারা গেলে উদ্ধারকারীকে আদালতেও নিয়মমাফিক হাজিরা দিতে হতে পারে। মানুষের জীবন বাঁচাতে চেয়ে এটুকু মানবিকতা দেখানো উচিত বলেই মত পুলিশ কর্তাদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy