—প্রতীকী ছবি।
স্কুলের কমিটিতে নেতৃত্ব দেওয়া থেকে শুরু করে অনুষ্ঠান পরিচালনা— সবই দায়িত্ব সহকারে সামলাচ্ছে ছাত্রীরা। ক্রীড়া প্রতিযোগিতাতেও অংশগ্রহণ করছে তারা সমান উৎসাহে। মেয়েদের পাশের হারের পাশাপাশি স্কুলের নানা কাজে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রেও এ ভাবেই মেয়ে পড়ুয়াদের এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে বলে সম্প্রতি উঠে এসেছে স্কুলশিক্ষা দফতরের বিশেষজ্ঞ কমিটির পর্যবেক্ষণে।
‘কন্যাশ্রী’, ‘সবুজ সাথী’র মতো সরকারি প্রকল্পের পাশাপাশি স্কুলশিক্ষা দফতরের নয়া নীতিও ছাত্রীদের উন্নয়নের একটি বড় কারণ বলে মত শিক্ষামহলের। বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার জানান, ছাত্রীদের স্কুলছুট হওয়ার হার কমানোর জন্য নানা পরিকল্পনা করেছিল সরকার। সমাজের মূল স্রোতের সঙ্গে এই স্কুলছাত্রীদের যোগাযোগ বাড়াতেও একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছিল। দফতরের বক্তব্য, ‘কন্যাশ্রী’র ফলে খানিকটা কেটেছে আর্থিক প্রতিবন্ধকতা ও ‘সবুজ সাথী’ সাহায্য করেছে গ্রামের বিভিন্ন অংশে দূরবর্তী স্কুলে পৌঁছনোর সমস্যা অতিক্রম করতে। সব মিলে ছাত্রীদের হাজিরার হার বেশ খানিকটা বেড়ে গিয়েছে স্কুলে স্কুলে। ফলে স্কুলের অনুষ্ঠান ও নানা রকম কাজেও যুক্ত করা যাচ্ছে তাদের। সেই সুবাদেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে মেয়েরা। বাড়ছে তাদের নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা। পড়ুয়াদের মধ্যে নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা উন্নত করতে কয়েক বছর আগেই স্কুলগুলিকে বেশ কয়েক দফা নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এখন তারই সুফল মিলছে বলে মনে করছেন দফতরের চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘‘বিভিন্ন জেলা ঘুরে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গিয়েছে, ছাত্রীরা পড়াশোনার পাশাপাশি সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। সরকারের উদ্দেশ্য সফল হচ্ছে। আগামী দিনে আরও এগোবে।’’
ইদানীং স্কুলের বিভিন্ন কমিটিতেই ছাত্রীদের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো জায়গায় রাখা হচ্ছে। অনুষ্ঠান পরিচালনার পাশাপাশি সংগঠন পরিচালনার দায়িত্বে থাকছে তারাই। ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিশেষ ভাবে ছাত্রীদের এগিয়ে দেওয়ায় উদ্যোগী এখন দফতর। ক্লাসে পড়ানোর ফাঁকে ছাত্রীদের নেতৃত্বেরও পাঠ দেওয়া হয়। এতে যেমন আত্মবিশ্বাস বাড়ছে মেয়েদের, তেমনই বাড়ছে স্কুলে আসার উৎসাহ বলে দাবি অভীকবাবুর। প্রসঙ্গত, দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও বালিকা-বিবাহ রোধে ছাত্রীদের নিয়ে কমিটি তৈরি হয়েছিল। তাতে উৎসাহের সঙ্গে এগিয়ে আসতে দেখা গিয়েছে স্কুলের ছাত্রীদের। স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, তবে বিষয়টি এমনই যে এক দিনে এর ফল পাওয়া যায় না। বেশ কয়েক বছর ধরে এই কাজ চলছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রের সফল নারীদের কথাও ছাত্রীদের শোনানো হয়েছে নানা গল্পের ছলে। আরও নানা পদক্ষেপ করা হচ্ছে। তাঁর আশা, ‘‘স্কুল স্তর থেকেই ছাত্রীদের সার্বিক উন্নতি হলে তার সুফল পাবে গোটা সমাজ। এ রাজ্যে সেই দিনও আসবে।’’
হিন্দু স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তথা রাষ্ট্রপতি পুরষ্কারপ্রাপ্ত তুষারকান্তি সামন্ত বলেন, ‘‘ছাত্রীরা যত এগোবে, ততই এগোবে দেশ। এটা মানতেই হবে যে পাশের হার থেকে শুরু করে বহু ক্ষেত্রেই ছাত্রীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। তবে সাফল্যে এখনই তৃপ্তি পেলে চলবে না। আরও কাজ করতে হবে। এই প্রবণতাকে ধরে রাখার দায়িত্ব সরকার ও শিক্ষক, দু’পক্ষেরই।’’ বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা শাশ্বতী অধিকারী বলেন, ‘‘গ্রামাঞ্চলে ছাত্রীদের এই পরিবর্তন অনেকটাই লক্ষ্য করা গিয়েছে। এটা খুবই ভাল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy