Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ঘরে এল সোনার মেয়ে স্বপ্না

ক’দিন বাদেই দুর্গাপুজো। উমা আসবেন ঘরে

মায়ের সঙ্গে স্বপ্না। কেঁদে ফেললেন দু’জনেই। ছবি: সন্দীপ পাল

মায়ের সঙ্গে স্বপ্না। কেঁদে ফেললেন দু’জনেই। ছবি: সন্দীপ পাল

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:০৫
Share: Save:

আর ক’দিন বাদেই দুর্গাপুজো। উমা আসবেন ঘরে। তার ঠিক আগেই যেন পুজোরই উন্মাদনা জলপাইগুড়িতে। রাস্তা জুড়ে থিকথিকে ভিড়। কেউ ফুলের মালা হাতে, কেউ ব্যান্ড পার্টি নিয়ে। এশিয়াডে সোনা জয়ী মেয়ে স্বপ্না বর্মণ শুক্রবার ফিরলেন বাড়িতে। তাঁর মা বাসনা বর্মণ সারা দিন অপেক্ষা করার পরে সন্ধে সাতটা নাগাদ মেয়ের মুখ দেখতে পেলেন।
বাড়িতে মেয়েকে নিজের হাতে বরণ করবেন বলে বিমানবন্দরেও যাননি। মেয়ে আসছে হু়ডখোলা জিপে। ভিড়ের দিকে ডান-বাঁ দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ছে। হঠাৎ হাত নাড়া বন্ধ হয়ে গেল মেয়ের। চোখে পড়েছে লাল-সবুজ ছাপা শাড়ি পরা মায়ের দিকে। বাজনার শব্দে কান পাতা দায়। একবার ‘মা’ উচ্চারণ করলেন মেয়ে। তারপরেই ঝরঝর করে জল বের হতে শুরু করল মেয়ের চোখ দিয়ে। এতক্ষণ শান্ত থাকা মা ভিড় ঠেলে দৌড়ে এগিয়ে আসছেন, চোখের জলে ভেসে যাচ্ছে মুখ। হুড খোলা জিপের নীচ থেকেই জড়িয়ে ধরলেন মেয়েকে। রাস্তায় থাকা শয়ে শয়ে মানুষ দেখলেন সোনার মেয়ে আর এবং তাঁর মা দু’জনে দু’জনকে জড়িয়ে হাঁপুসে কেঁদে চলেছেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় জলপাইগুড়ির পাতকাটার ঘোষপাড়ার বাড়িতে ফিরলেন স্বপ্না বর্মন। এ দিন সকালে তিনি বিমানে বাগডোগরায় নামেন। শিলিগুড়িতে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান সেরে বাড়ি ফিরতে ফিরতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে যায়। দুপুর থেকেই স্বপ্নার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। স্বপ্নার স্কুল, জেলা ক্রীড়া সংস্থা, জলপাইগুড়ির বিভিন্ন ক্লাব, সংগঠন কে নেই সেই ভিড়ে। ঠিক ছিল রাস্তা থেকে মা স্বপ্না হেঁটেই ঘরে ঢুকবেন। ভিড়ের ঠেলায় সব ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম। পুলিশের পাইলট আটকে গেল ভিড়ে। কেউ একটি হুডখোলা জিপ এনেছিলেন। তাতেই ওঠানো হল স্বপ্নাকে। বাড়ি ঢোকার পরে স্বপ্না বললেন, “আমি যতটাই বলব ততটা কম হবে। আমি এতটা ভাবতেই পারিনি। আমি জীবনে ভাবিনি এত লোক আমার জন্য আসবে।”
পাক্কা এগারো মাস পরে বাড়ি ফিরলেন স্বপ্না। আগামী রবিবার তাঁর ফিরে যাওয়ার কথা কলকাতায়। বাড়ি ফিরে প্রথমেই দৌড়ে গিয়েছিলেন বাবার কাছে। অসুস্থতার জন্য বাবা রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াতে পারেননি। মায়ের সঙ্গে ঢুকলের বাড়ির কালী মন্দিরেও। আগামী দু’দিন পরের পর সংবর্ধনা রয়েছে। আজ শনিবার সকালে শিলিগুড়িও যাওয়ার কথা রয়েছে। যতগুলি সংগঠন সংবর্ধনা দিতে চেয়ে স্বপ্নাকে প্রস্তাব দিয়েছে, তা মানতে হলে পুরো সপ্তাহ থাকতে হবে শহরে। যদিও স্বপ্নার লক্ষ্যে আরও বড় জয়ের স্বপ্ন ভাসছে। বলছেন, ‘‘দু’দিন পরেই ফিরে যাব।’’
ফের প্র্যাকটিস শুরু হবে কলকাতায়। তাই পুজো উদ্বোধনের শত অনুরোধ হলেও তা নিয়ে এখনই ভাবছেন না। কয়েক মিনিটের রাস্তা পার হতে লেগেছে ঘণ্টাখানেক। স্বপ্না যখন বাড়িতে যখন পৌঁছলেন তখন ঘড়িতে সাড়ে সাত। ছবি তুলতে উঠোনে দাঁড়ালেন। বললেন, “মার সঙ্গে অনেক গল্প রয়েছে। এখন ঘরে যাই।” এ ক’দিনে অনেক ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে হয়েছে। অনেকরটাই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন ক্যামেরা, সাক্ষাৎকারে।
কিন্তু বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে ক্যামেরার সামনেই ফের কেঁদে ফেললেন তিনি। প্রশ্ন ছিল বাড়ি ফিরে কেমন লাগছে? স্বপ্না বলল, “এত মানুষ আমাকে ভালবাসে!’’ দু’হাতে মুখ ঢেকে ফেললেন স্বপ্না, চোখের জলে বেরিয়ে এল আঙুল ঠেলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Swapna Barman Athletics Gold Medalist Olympic
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE