—প্রতীকী ছবি
শুধু ‘নিয়োগ বিভ্রাট’ই নয়, উত্তর দিনাজপুরের শিক্ষা দফতরের একটি সিদ্ধান্তে সরকারি কোষাগারের কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জেলার প্রধান শিক্ষকদের ফোরামের অভিযোগ। ‘পাস গ্র্যাজুয়েট’দের উচ্চতর বেতন স্কেল দেওয়ার এই সিদ্ধান্তের জের সরকারকে বহু বছর ধরেও টানতে হবে। ফোরামের দাবি, গত কয়েক বছরে শ’খানেক শিক্ষককে এ ভাবে উচ্চতর স্কেল দেওয়া হয়েছে। ২০১৭ সালে নতুন ডিআই এসে এই কাজ একেবারে বন্ধ করে দেন।
শিক্ষা দফতরের নির্দেশ (২০০৫ সালের দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল স্কুলস, কন্ট্রোল অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার-১৪/২ ধারা) অনুযায়ী, ‘গ্র্যাজুয়েট টিচার’ শ্রেণিতে যাঁদের নিয়োগ করা হবে, তাঁরা শিক্ষাগত যোগ্যতা বাড়ালেও কখনই উচ্চতর বেতন কাঠামো দাবি করতে পারবেন না। শুধুমাত্র পাস কোর্সের গ্র্যাজুয়েটদের জন্যই এই নিয়ম করা হয়েছে। কিন্তু তা না মেনে উত্তর দিনাজপুরের শিক্ষা দফতর বহু শিক্ষককে উচ্চতর বেতনের স্কেল দিয়েছে। এর ফলে শিক্ষক-পিছু বছরে বাড়তি দেড়-দু’লক্ষ টাকা করে ব্যয় হচ্ছে। অবসরের পরেও তিনি বর্ধিত স্কেল অনুযায়ী পেনশনের টাকা পেতে থাকবেন। পে-স্কেল সংশোধিত হলেও তিনি বর্ধিত স্কেলের সুবিধা অনুযায়ী বেশি টাকা পাবেন। জেলার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘সব মিলিয়ে শিক্ষক পিছু সরকারি কোষাগার থেকে বাড়তি আধ কোটি টাকার কাছাকাছি বেরিয়ে যাবে।’’
শিক্ষা দফতরের এক সূত্র জানিয়েছে, ২০১৩-১৪ সাল থেকে বহু পাস কোর্সের ‘গ্র্যাজুয়েট টিচার’ হাইকোর্টে গিয়ে বর্ধিত শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখিয়ে উচ্চতর বেতনের দাবি জানান। আদালত আইন মেনে বিষয়টি বিচার-বিবেচনার জন্য ডিআই-কে শুনানির নির্দেশ দেয়। শুনানিতেই ডিআই বিষয়টির অনুমোদন দেন। আইনজীবী এক্রামুল বারি বলেন, ‘‘যে হেতু আদালত বাধ্যতামূলক ভাবে কোনও শিক্ষককে উচ্চতর স্কেল দেওয়ার কথা বলেনি, তাই সংশ্লিষ্ট ডিআই-য়ের উচিত ছিল, ‘কন্ট্রোল অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার অ্যাক্ট’ মোতাবেক তা বাতিল করা। অনেক ডিআই তা-ই করেছেন। কিন্তু উত্তর দিনাজপুরের তৎকালীন ডিআই বিবেচনার সময়ে এই আইন মানেননি।’’ হাইকোর্টের একটি রায় উদ্ধৃত করে এক্রামুল বলেন, ‘‘সংশ্লিষ্ট বিচারপতি ডিআই-কে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন, কোনও শিক্ষক যদি আইন মোতাবেক উচ্চতর স্কেল পাওয়ার যোগ্য হন, তবেই তাঁকে বর্ধিত বেতন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এই আইন মানেননি সংশ্লিষ্ট ডিআই।’’
এ ভাবে বর্ধিত পে-স্কেল পাওয়ার বিষয়টি যে আদালতের অনুমোদন পায়নি, তা-ও জানিয়েছেন আইনজীবীরা। এক্রামুল বলেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, কোনও ডিআই-য়ের উচ্চতর স্কেল দেওয়ার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে স্কুলের পরিচালন সমিতি ফের আদালতে মামলা করেছে। সে ক্ষেত্রে আদালত শিক্ষা দফতরের আইন মেনে ওই উচ্চতর স্কেল দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করে দিয়েছে।’’
এ ব্যাপারে তৎকালীন ডিআই নারায়ণ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএসেরও উত্তর দেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy