Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ দেশে এসে ‘বেপাত্তা’, চিনাদের নিয়ে সংশয়

মন্ত্রকের দাবি, জালালউদ্দিন মহম্মদ নামে এক চিনা নাগরিক ২০১৭-র শেষে কলকাতায় নামেন। এ নিয়ে ছ’বার তিনি ভারতে এসেছেন। বাংলাদেশেও যাতায়াত রয়েছে ৮টি জাহাজের এই মালিকের।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:০৯
Share: Save:

কলকাতা হোক বা অন্য শহর, গত কয়েক বছরে এ দেশে চিনাদের আসা বাড়ছে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য কিংবা সাংস্কৃতিক বিনিময়ের সাপেক্ষে তা ইতিবাচক সঙ্কেত বলেই বিদেশ মন্ত্রক মনে করে। কিন্তু গত কয়েক মাসে অন্তত ১৮ জন চিনা নাগরিকের হদিস পাওয়া গিয়েছে, যাঁরা এ দেশে নামার পর ‘উধাও’ হয়ে গিয়েছিলেন। ফলে উদ্বিগ্ন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘বাংলাদেশি বা পাকিস্তানি নাগরিকদের অনেকেই এ দেশে এসে ভিসার শর্ত না মেনে থেকে যান। সেই সংখ্যাও প্রতি বছর বাড়ছে। পাশাপাশি চিনা নাগরিকেরাও যে ভাবে এ দেশে নেমেই উধাও হয়ে যাচ্ছেন, তা চিন্তার।’’ রহস্যজনক চিনা নাগরিকদের তালিকা তৈরি করছে মন্ত্রক। ভিসার শর্ত অনুযায়ী কেন এ দেশে তাঁদের গতিবিধি সরকারকে জানানো হয়নি, তা-ও ‘উপযুক্ত স্থানে’ জানানো হবে বলে মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে।

মন্ত্রকের দাবি, জালালউদ্দিন মহম্মদ নামে এক চিনা নাগরিক ২০১৭-র শেষে কলকাতায় নামেন। এ নিয়ে ছ’বার তিনি ভারতে এসেছেন। বাংলাদেশেও যাতায়াত রয়েছে ৮টি জাহাজের এই মালিকের। কিন্তু তিনি আসার পর থেকে আর খোঁজ মেলেনি। পরে জাকার্তা চলে যান। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, মানিকতলায় তিনি বেশ কিছু দিন ছিলেন। ফান গুওলিয়ান নামে আর এক চিনা নাগরিকও পর্যটক ভিসা নিয়ে এসেছিলেন। তার পরে তিনি আমদাবাদে একটি পলিমার কারখানায় কাজ শুরু করেন। ঘুরে বেড়ান পশ্চিম ভারত। এর আগে ফান দু’বার পাকিস্তান এবং চার বার বাংলাদেশ গিয়েছিলেন। তার পরে তিনি কুনমিং চলে যান। তাঁর ঘোরাঘুরির কথাও নিরাপত্তা সংস্থাগুলি পরে জেনেছে।

মন্ত্রকের কাছে খবর, কুইংবিন মিয়াও নামে এক জন ২০১২ সাল থেকে বছরে অন্তত চার বার করে কলকাতা এসেছেন। প্রতি বার মাস দুয়েকের বেশি থেকেছেন। কিন্তু যে হোটেলে তাঁর থাকার কথা ছিল, সেখানে তিনি ছিলেন না। জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরে বেনোডিয়া গ্রামে একটি বাড়িতে তিনি ছিলেন। চুলের ব্যবসা করতে তিনি এসেছেন বলে জানালেও মিয়াও-এর গতিবিধি গোয়েন্দাদের অজানা থেকে গিয়েছে।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে বিশেষ রিপোর্টও জমা পড়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বিজনেস ভিসা (বি-১, বি-২) নিয়ে এ দেশে ঢুকছেন চিনারা। এই ধরনের ভিসা সর্বোচ্চ ১৮০ দিনের জন্য দেওয়া হয় এবং পঞ্জিকরণ করাতে হয় না। সেই সুযোগ নিয়ে চিনারা ১৮০ দিনের মধ্যে দেশ ছাড়ছেন, আবার কিছু দিনের মধ্যে ফিরে আসছেন। ‘বিজনেস ভিসা’ নিয়ে অনেকে চাকরিও করছেন বিভিন্ন সংস্থায়। ঝাড়খণ্ড, ওড়িশায় বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ প্রকল্পে চিনারা কাজ করছেন। উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে তাঁদের যাতায়াতও বাড়ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৭-এ অসমে ২৪১, সিকিমে ৩২০ জন চিনা এসেছিলেন। চলতি বছরে এর
মধ্যেই অসমে ১৩৮ জন এবং সিকিমে ৭৯ জন চিনা এসেছেন। অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম বা মণিপুরে বিশেষ অনুমতি ছাড়া বিদেশিদের প্রবেশ নিষেধ। কিন্তু অসমে পৌঁছনো চিনারা অরুণাচল প্রদেশ বা অন্যত্র যাচ্ছেন কি না, তা নিয়েও সংশয়ে গোয়েন্দারা।

চিনা সাংবাদিকদের আগমনও উল্লেখযোগ্য। ২০১৬ সালে ১২ জন সাংবাদিক এ রাজ্যে এলেও গত বছর এসেছিলেন ২৮ জন। এ বছর এখনও পর্যন্ত এক জন সাংবাদিক এ রাজ্যে এসেছেন। চিনের সাংবাদিকেরা মূলত শাসক দলের অধীনে সরকারি মাধ্যমে কাজ করেন। কেন তাঁরা ঘনঘন কলকাতায় আসছেন, তা নিয়েও সংশয়ে নিরাপত্তা সংস্থাগুলি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chinese Missing India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE