Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

বন্‌ধের আগে পিকনিক ফিরল অফিসে

আয়োজনের ত্রুটি নেই! মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকেই বড় বড় পেটিতে চাল, ডাল, মাছ, ডিম নিয়ে মুটেরা ঢুকছেন খাদ্য ভবনে। সঙ্গে গ্যাস ওভেন ও একাধিক সিলিন্ডার।

কর্মীরাই হাত লাগিয়েছেন রান্নাবান্নায়। সল্টলেকের জলসম্পদ ভবনে। মঙ্গলবার রাতে। ছবি: শৌভিক দে

কর্মীরাই হাত লাগিয়েছেন রান্নাবান্নায়। সল্টলেকের জলসম্পদ ভবনে। মঙ্গলবার রাতে। ছবি: শৌভিক দে

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:০৭
Share: Save:

আয়োজনের ত্রুটি নেই!

মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকেই বড় বড় পেটিতে চাল, ডাল, মাছ, ডিম নিয়ে মুটেরা ঢুকছেন খাদ্য ভবনে। সঙ্গে গ্যাস ওভেন ও একাধিক সিলিন্ডার। বারান্দার ডাঁই করে রাখা কাঁচা আনাজ, মশলাপাতি। পৌঁছে গিয়েছেন রাঁধুনিরাও। অফিসের দাওয়ায় লম্বা শেডের নীচে রান্না শুরু হল রাত ৮টার পর। সকাল সকাল খেয়ে শুয়ে পড়তে হবে। কারণ, কাকভোরেই অফিসের হাতে গোনা শৌচাগারের সামনে লম্বা লাইন পড়বে যে!

বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ডাকা বুধবারের সাধারণ ধর্মঘট ব্যর্থ করার আহ্বান জানিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই সরকারি অফিসগুলোতে আরও এক বার নৈশ পিকনিক! বন্‌ধের আগের রাতে যেনতেন প্রকারেণ যত বেশি সম্ভব সরকারি কর্মচারীকে অফিসে রেখে দেওয়ার চেষ্টায় কসুর নেই তৃণমূল পরিচালিত কর্মী ইউনিয়নগুলির। তার ব্যতিক্রম নয় খাদ্য ভবনও। খাদ্য দফতরে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের সম্পাদক সমীরণ রায় বলেন, ‘‘আমাদের অফিস ও পাশেই ক্রেতা সুরক্ষা দফতর মিলিয়ে পাঁচশোরও বেশি কর্মী মঙ্গলবার রাতে থাকবেন।’’

মঙ্গলবার রাতের মেনু ডাল-ভাত আর মাছ। আজ, বুধবার সোনা মুগের ডাল, আলুভাজা, মাছের মাথা দিয়ে পাঁচমিশেলি তরকারি ও ডিমের ঝোল। সকাল ১০টার মধ্যেই ব্যাচ বসে যাবে। তাই রাত থাকতেই উঠবেন রাধুঁনিরা। সমীরণবাবু জানান, তোষক, বালিশ, চাদর সব ভাড়া করা হয়েছে। ঢালাও বিছানা করা হবে। মঙ্গলবার রাতে খাদ্য ভবনে গিয়ে দেখা যায়, ক্যারম ও তাসের আসর বসেছে। চলছে ঘরোয়া জলসাও। তারই ফাঁকে ‘রান্না কত দূর এগোলো’ বলে হাঁক মারছেন কেউ কেউ।

রাঁধুনি ডেকে রান্নার সুযোগ অবশ্য নেই পুলিশি নিরাপত্তায় মোড়া নবান্নে। রোজকার দু’টো ক্যান্টিনই সেখানকার ভরসা। ক্যান্টিনের তরফে সোমবারেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, মঙ্গলবার রাতে ও বুধবার সকালে কারা খাবেন তাঁদের নাম মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যে জানিয়ে দিতে হবে। সেই মতো এ দিন ক্যান্টিনে নাম লেখানোর লাইন পড়ে। মঙ্গলবার রাতে পুলিশ ও সরকারি কর্মী মিলিয়ে প্রায় দেড়শো লোক খাবে নবান্নের ক্যান্টিনে। তবে ক্যান্টিন মালিকেরা জানিয়ে দিয়েছেন, অন্যান্য দিনের মতো বুধবার পাঁচ পদ মিলবে না। কেবল ডিমের ঝোল ও ডাল-সব্জি। শুনে অনেকেরই ব্যাজার মুখ।

এ বারই প্রথম ধর্মঘটের আগের রাতে মহিলা কর্মীদের সরকারি ভবনে থাকার ‘অনুমতি’ দিয়েছে প্রশাসন। যদিও মহিলাদের অনেকেই এই প্রস্তাবে রাজি নন। তাঁরা বলেছেন, দরকারে বুধবার খুব সকালে ট্রেন-বাস ধরে অফিসে আসবেন। একান্তই না পারলে বাড়ি ফিরে যাবেন। নবান্নের খবর, আট-দশ জন মহিলা কর্মী থাকবেন মঙ্গলবার রাতে। তবে খাদ্য ভবনে জনা চল্লিশেক মহিলা থাকবেন বলে জানান সেখানকার তৃণমূল নেতারা। জলসম্পদ ভবনে অবশ্য মহিলা কর্মীদেরই রান্নায় হাত লাগাতে দেখা গিয়েছে।

নবান্নে অর্থ দফতরের এক কর্মী বলেন, ‘‘আগের বন্‌ধে আমাদের ঘরে ২০-২২ জন ছিলাম। এ বার সাকুল্যে ১১ জন।’’ কৃষি দফতরের এক কর্মীও মোটামুটি একই পরিসংখ্যান দিলেন। এমনকী পুলিশও বলছে, মঙ্গলবার গোটা নবান্নেই রাত-হাজিরার সংখ্যা অন্য বারের চেয়ে কম। তবে সেই সংখ্যাটা জানানো হয়নি। নবান্নে ছবি তোলাও ছিল বারণ।

সল্টলেকের অফিসপাড়ায় বিকাশ ভবন, পূর্ত ভবন বা বিদ্যুৎ ভবনে হরেদরে একই ছবি। সন্ধেবেলায় কেউ অফিসের পোশাক ছেড়ে চেয়ারে গা এলিয়ে ফোনে আড্ডা দিচ্ছিলেন, কেউ হাঁটতে বেরিয়েছিলেন, কেউ খাবারদাবার কিনতে। কেউ তখনই টেবিল জোড়া লাগিয়ে ঘুমোনোর তোড়জোড়ে ব্যস্ত। বাইরে তখন চপের দোকানগুলোয় মারাকাটারি ভিড়। মশার ধূপ লাগাতে লাগাতে বিকাশ ভবনে শিক্ষা দফতরের এক কর্মী বললেন, ‘‘ভালই লাগছে। সহকর্মীদের সঙ্গে তো আর রাতে থাকা হয় না। গল্পগুজব করেই কেটে যাবে।’’ তৃণমূলের কর্মচারী সংগঠনের নেতা মনোজ চক্রবর্তীর দাবি, সরকারি ব্যবস্থাপনা ছাড়াই তাঁরা চাঁদা তুলে রাতের খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। যদিও সরকারি সাহায্যের হাত স্পষ্টই। এ দিন পূর্ত দফতরকে চিঠি দিয়ে নবান্ন, মহাকরণ, তোদি ম্যানসন ও বিকাশ ভবনে তাঁদের কর্মীদের থাকার ব্যবস্থা করতে বলেছে অর্থ দফতর। পুলিশ সূত্র অবশ্য বলছে, সল্টলেকের বহু কর্মীই রাতে অফিসে থাকতে রাজি হননি।

সন্ধেয় কলকাতা পুরসভায় গিয়ে দেখা গেল, দেড়শো-দু’শো কর্মীর রাত্রিযাপনের জন্য খোলা রাখা হয়েছে স্বাস্থ্য, জঞ্জাল অপসারণ, রেকর্ড সেকশনের মতো ঘরগুলি। পুরভবনের গা়ড়ি রাখার জায়গায় দল বেঁধে রা ন্না হচ্ছে। একটা প্রশ্ন কেউ কেউ তুলছিলেন। সরকারি অফিসে এমনিতেই দলিল-দস্তাবেজ, কাঠের আসবাব-পার্টিশনের মতো দাহ্য বস্তুর পাহাড় জমে থাকে। ‘বৃহত্তর স্বার্থে’ অফিসে গ্যাস জ্বেলে রান্নাবান্না কি অগ্নিবিধির ব্যাপারটাকে কিঞ্চিৎ লঘু করে দিল না? উপরন্তু প্রশাসনের একাংশেরই আশঙ্কা— হাজিরাটুকুর জন্যই যত তোড়জোড়। আজ বুধবার, কে কতক্ষণ অফিসে থাকবেন, সে সংশয় কিন্তু থেকেই গেল।

সেক্টর ফাইভে অবশ্য সংশয় নেই। অধিকাংশ সংস্থাই কর্মীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করেছে। ফলে ধর্মঘটের ছায়া সেখানে পড়বে না বলেই দাবি তথ্যপ্রযুক্তি কর্তাদের।

চলবে উবের

ধর্মঘটের দিন জনজীবন সচল রাখতে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেবে না উবের। সংস্থাটি জানিয়েছে, কলকাতায় উবের-এর ট্যাক্সিতে চাপলে এ বার নগদেও ভাড়া দেওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে মোবাইল অ্যাপে মাধ্যমে ট্যাক্সি বুক করার সময় ভাড়া মেটানোর পদ্ধতি হিসেবে ‘ওয়ালেট’-এর বদলে ‘ক্যাশ’ বেছে নিতে হবে। এবং নামার সময় যে ভাড়া উঠবে, তা নগদে দিতে হবে। বুধবার থেকেই ২৪ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ট্যাক্সিমালিক ও চালকদের ছ’টি সংগঠনও। এই অবস্থায় বাজার ধরতেই উবেরের এমন ঘোষণা বলে মনে করা হচ্ছে। এ দিনই দেশ জুড়ে ‘কারপুল’ পরিষেবা চালু করল মেরু। এক সওয়ারি পিছু একটি গাড়ির রাস্তায় নামা কমাতেই এই উদ্যোগ। সংস্থার দাবি, একই দিকের বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছেন এমন ব্যাক্তিরা এই পরিষেবার আওতায় চাইলে একসঙ্গে মেরুর একটি ট্যাক্সিতে চেপে যাত্রা করতে পারবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Government before strike Office fish egg
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE