Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভাতপাতের সুরভি রক্ষাতেও হাতিয়ার জিআই

‘বাংলার রসগোল্লা’র স্বীকৃতির আগে গত অক্টোবরেই গোবিন্দভোগ ও তুলাইপাঞ্জি চালের জিআই-ভাগ্যে শিকে ছিঁড়েছিল। চাল দু’টির এই স্বীকৃতির চিহ্ন বা লোগোতে ‘বেঙ্গল অ্যারোমেটিক রাইস’ বা বাংলার সুগন্ধী চাল পরিচয়টুকুও এখন নথিভুক্ত।

রাঁধুনিপাগল ও কালো নুনিয়া চাল

রাঁধুনিপাগল ও কালো নুনিয়া চাল

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৫৩
Share: Save:

চেষ্টাটা শুরু হয়েছিল গোবিন্দভোগকে দিয়েই। সেই পথ ধরে জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন বা জিআই-তকমাকে হাতিয়ার করে বাংলার বিভিন্ন সুগন্ধী চালকে বাঁচাতে এ বার উদ্যোগী হচ্ছে রাজ্য।

‘বাংলার রসগোল্লা’র স্বীকৃতির আগে গত অক্টোবরেই গোবিন্দভোগ ও তুলাইপাঞ্জি চালের জিআই-ভাগ্যে শিকে ছিঁড়েছিল। চাল দু’টির এই স্বীকৃতির চিহ্ন বা লোগোতে ‘বেঙ্গল অ্যারোমেটিক রাইস’ বা বাংলার সুগন্ধী চাল পরিচয়টুকুও এখন নথিভুক্ত। আরও কয়েকটি সুগন্ধী চালকে চিহ্নিত করার কাজও জোরকদমে চলছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। এ রাজ্যের বিভিন্ন উৎকর্ষ জিআই-নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়ায় জড়িত বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিভাগের কর্তাদের দাবি, রাঁধুনিপাগল ও কালো নুনিয়ার মতো আরও দু’টি সুগন্ধী চালের ঠিকুজি-কোষ্ঠীর সবিস্তার নথি এখন কার্যত তৈরি। এর ভিত্তিতে দ্রুত জিআই-এর আবেদন করা হবে।

কিন্তু কী কাজে আসবে এই স্বীকৃতি?

জিআই-তকমার মানে এই চালগুলি শুধু বাংলাতেই উৎপাদিত হয়। রাঁধুনিপাগল, কালো নুনিয়ার মতো ঐতিহ্যশালী চাল-কে জিআই-এর মাধ্যমে পরিচয় করিয়ে বিশ্ববাজারে মেলে ধরার কথা বলছেন কৃষিমন্ত্রী। উচ্চ ফলনশীল ধানের চাপে কোণঠাসা বহু সাবেক ধানের চালের সঙ্গেই জড়িয়ে সাংস্কৃতিক গরিমাও। মন্ত্রীর দাবি, ৪১টি ধানের বীজ নিয়ে তার বিস্তারের চেষ্টা চলছে রাজ্যে।

রাঁধুনিপাগল

কালো নুনিয়া

• সাকিন: বীরভূম, বর্ধমান, হুগলি, বাঁকুড়া

• ফলন: হেক্টরপিছু ২.৩-২.৫ টন

• ছোট দানা

• পায়েস, খিচুড়িভোগের উপযোগী

• সাকিন: জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিংয়ের জেলার সমতল এলাকা

• ফলন: হেক্টরপিছু ২.২-২.৪ টন

• মাঝারি দানা, আতপ বা সেদ্ধ

• ভাত, পায়েস-পিঠে, পুজোর ভোগের উপযোগী

‘‘বাংলার সুগন্ধী চালের জন্য জিআই জরুরি কারণ, ভিন্ রাজ্যে বা এখানেও অন্য ধরনের চালকে গোবিন্দভোগ অথবা তুলাইপাঞ্জির নামে বিক্রির প্রবণতা আছে। আবার কখনও গোবিন্দভোগকে দক্ষিণ ভারতে অন্য নামে বিক্রি করা হচ্ছে। জিআই-তকমা ও লোগোর মাধ্যমে এ সব অপচেষ্টা আটকানো যাবে।’’— বলছেন বিজ্ঞান-প্রযু্ক্তি দফতরের বিজ্ঞান-প্রযুক্তি কাউন্সিলের অন্তর্গত পেটেন্ট ইনফর্মেশন সেন্টার (পিআইও)-এর সিনিয়র সায়েন্টিস্ট মহুয়া হোমচৌধুরী। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে তথ্যপ্রমাণ-ইতিহাস জড়ো করে জিআই অর্জনের কাজটা তাঁরা করেছেন। মহুয়ার মতে, ‘‘জিআই-প্রাপ্তির পরে লোগো বসিয়ে প্যাকেজিং করে, সুগন্ধী চালকে সবার সামনে পরিচয় করাতে সুবিধা হবে। ভেজালের কারবারও ঠেকানো যাবে!’’ তবে কড়া তদারকিও দরকার বলে মানছেন কৃষি দফতরের কর্তারা।

‘‘সব চালের ঐতিহাসিক তথ্যপ্রমাণ পাওয়া কিন্তু মুশকিল’’, —বলছেন বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শস্য বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মৃত্যুঞ্জয় ঘোষ। তাঁর দাবি, রান্নার সময় থেকেই সৌরভে পাড়ামাতানো রাঁধুনিপাগল চালের কথা ১৮৯১ সালে এ দেশের কৃষিপণ্য সংক্রান্ত বইয়েও মিলেছে। সাবেক উত্তরবঙ্গের বহু জমিদার ঘরের স্মৃতি জুড়ে থাকা কালো নুনিয়ার কথা রয়েছে ১৮৭৬-৭৭ সালের দার্জিলিং জেলার সমীক্ষা রিপোর্টেও। গোবিন্দভোগ ও তুলাইপাঞ্জির ক্ষেত্রে নরেন্দ্রপুরের কৃষি তালিম সংক্রান্ত একটি সংস্থা ‘সমিতি’ ও কৃষি বিদ্যালয়গুলি মিলে জিআই-এর আবেদন করেছিল। রাঁধুনিপাগল ও কালো নুনিয়ার জন্য আবেদনও শীঘ্রই সারা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE