Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

সরকারি অনলাইনের পাসওয়ার্ডই বেহাত!

শিক্ষা দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ২০১৬ সালে সেপ্টেম্বরে জানানো হয়, জেলায় শিক্ষকের শূন্য পদের তালিকা তৈরি করে স্কুল সার্ভিস কমিশনে পাঠাতে হবে।  নির্দেশ মতো উত্তর দিনাজপুরের তৎকালীন ডিআই নারায়ণ সরকার ২০১৭-র মার্চে তালিকা পাঠান।

সুব্রত বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:৪২
Share: Save:

কোথাও শূন্য পদের থেকে চারগুণ বেশি নিয়োগ, কোথাও পদ-ই ‘ভ্যানিশ’। কোথাও আবার কোনও বিষয়ে শিক্ষক দরকার নবম-দশম শ্রেণির জন্য। কিন্তু ওই বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে। উত্তর দিনাজপুরের শিক্ষক নিয়োগের এই ভুলে ভরা তালিকার জেরেই যে দাড়িভিট কাণ্ড— তা সামনে এসেছে। কিন্তু কেন এ রকম একটি তালিকা তৈরি করা হল?

শিক্ষা দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ২০১৬ সালে সেপ্টেম্বরে জানানো হয়, জেলায় শিক্ষকের শূন্য পদের তালিকা তৈরি করে স্কুল সার্ভিস কমিশনে পাঠাতে হবে। নির্দেশ মতো উত্তর দিনাজপুরের তৎকালীন ডিআই নারায়ণ সরকার ২০১৭-র মার্চে তালিকা পাঠান। তালিকা মেনেই স্কুল সার্ভিস কমিশন তাদের ওয়েবসাইটে শূন্য পদ ঘোষণা করে। সেই মতো পরীক্ষা নিয়ে শুরু হয় নিয়োগ।

কিন্তু কী পদ্ধতিতে ওই তালিকা তৈরি হল, তা জানতে গিয়ে এক বিচিত্র তথ্য সামনে এসেছে। ২০১৭ সালের ওই সময়ে উত্তর দিনাজপুরের শিক্ষা দফতরের সরকারি ই-মেল এবং কম্পিউটারের ‘ইন্টিগ্রেটেড অনলাইন স্যালারি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ (আইওএসএমএস)-এর যাবতীয় নিয়ন্ত্রণ ওই দফতরের ডিআই-এর হাতেই ছিল না। কোনও এক ‘তৃতীয় ব্যক্তি’ নিয়ন্ত্রণ করতেন জেলার প্রায় সাড়ে ৪ হাজার শিক্ষকের বেতন-সহ দফতরের যাবতীয় কাজকর্ম। ওই ব্যক্তির হাতেই ছিল পাসওয়ার্ড। তাঁর ব্যক্তিগত মোবাইল এবং ই-মেল সরকারি সিস্টেমের সঙ্গে ‘লিঙ্কড’ করা ছিল, যাতে কম্পিউটারে ওই সিস্টেম খুলতে হলে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) চলে যায় তাঁর মোবাইল (নম্বর XXXXXX2403) এবং ব্যক্তিগত ই-মেলে (gourh11@gmail.com)। অর্থাৎ, দফতরের কর্তা (ডিআই) নন, এক মাত্র ওই ব্যক্তিই কম্পিউটারে খুলতে পারতেন এই সরকারি ‘সিস্টেম’। যে ‘সিস্টেম’ খোলা এবং ব্যবহার করার সরকারি অধিকার এক মাত্র দেওয়া রয়েছে জেলার ডিআই-এর হাতে, তা সম্পূর্ণ নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছিলেন যে ব্যক্তি, তাঁর পরিচয় কী?

মোবাইল এবং ই-মেল থেকে জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তির নাম গৌরহরি দাস। এই নামে সত্যিই এক করণিক প্রায় তিন দশক ধরে কাজ করছেন জেলা শিক্ষা দফতরে। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমাকে তৎকালীন ডিআই-সাহেব এই দায়িত্ব দিয়েছিলেন।’’ কিন্তু দায়িত্ব দেওয়ার জন্য তো পাসওয়ার্ডটি তাঁর ব্যক্তিগত মোবাইল বা ই-মেলের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়ার দরকার হয় না। ডিআই নিজের মোবাইল বা ই-মেলে ওটিপি আনিয়ে তা দিয়ে কম্পিউটার খুলে দিলেই পারতেন। এ ক্ষেত্রে তা কেন করা হয় হয়নি? জবাব দেননি গৌরহরি। তবে তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষক নিয়োগের ভুল তালিকা আমি করিনি। এর দায় ওই সময়ের ডিআই-য়ের।’’ তৎকালীন ডিআই নারায়ণ সরকার এখন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার দায়িত্বে। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, কার চাপে তিনি এই কাজ করেছিলেন? সদুত্তর নেই নারায়ণবাবুর কাছে। তিনি শুধু বলেন, ‘‘এ নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না।’’

জেলার এক প্রধান শিক্ষক জানান, ২০১৭ সালে শিক্ষক নিয়োগের গোটা তালিকাটাই বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে নিজেদের মতো করে তৈরি করা হয়েছিল। এই তালিকা তৈরি করার সময়ে প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘এর পিছনে রয়েছে একটা বড় চক্র।’’ শিক্ষা দফতরের একাংশও বলেছে, ‘‘রাজ্যের শিক্ষায় সব থেকে পিছিয়ে পড়া জেলার শিক্ষক নিয়োগের পিছনে রয়েছে শিক্ষকনেতাদের একটি অংশ। ওই সময়ে বকলমে তাঁরাই চালিয়েছেন ডিআই অফিস। ওঁদের তুষ্ট করতে গিয়েই ঘটে গিয়েছে এত বড় ঘটনা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Website Password OTP Islampur DI SSC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE