রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী।—ফাইল চিত্র।
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়নের দাপটের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। বৃহস্পতিবার রাজভবনে রাজ্যের সাত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে নিয়ে বৈঠক করেন তিনি। সেখানেই শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সামনে ‘ইউনিয়নবাজি’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজ্যপাল জানান, ছাত্র ইউনিয়ন সমস্যার কারণ। উত্তরপ্রদেশের পূর্বতন মুখ্যমন্ত্রী চৌধুরী চরণ সিংহের ছাত্র ইউনিয়ন নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের উদাহরণ টানলেও তাঁর মন্তব্য, এ রাজ্যে অবশ্য ছাত্র ইউনিয়নের কাজকর্ম বন্ধ করা হবে না।
এ দিনের বৈঠকে যাদবপুর এবং প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের প্রসঙ্গ ওঠে। সেই সময় রাজ্যপাল মনে করিয়ে দেন, উত্তরপ্রদেশে চৌধুরী চরণ সিংহ মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ছাত্র ইউনিয়নের কাজকর্ম বন্ধ করে বিরোধিতার মুখে পড়লেও সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। শিক্ষামন্ত্রী রাজ্যপালকে জানান, রাজ্যে তাঁরা অরাজনৈতিক ছাত্র কাউন্সিল গঠনের সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই নিয়েছেন। প্রসঙ্গত, অরাজনৈতিক ছাত্র কাউন্সিলের মাথায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বে একজন শিক্ষকের থাকার কথা। কিন্তু যাদবপুর এবং প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন। গত শিক্ষাবর্ষে এ রাজ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনই হয়নি।
এ দিনের বৈঠকে ছাত্র আন্দোলন ঘিরে প্রশ্নের মুখে পড়েন প্রেসিডেন্সি এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। রাজ্যপাল হিন্দু হস্টেল ঘিরে ছাত্র আন্দোলনের প্রসঙ্গ তোলার পর কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন শিক্ষামন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্সির উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া। হিন্দু হস্টেলের সংস্কার কত দিনে শেষ হবে, রাজ্যপাল তা জানতে চান উপাচার্যের কাছে। রাজভবন সূত্রের খবর, অনুরাধাদেবী বিষয়টি বোঝাতে গিয়ে মন্তব্য করেন, পূর্ত দফতরের কারণে দেরি হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী জানান, এই দেরির পিছনে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষের গাফিলতি রয়েছে। এই সময় উপাচার্য এবং শিক্ষামন্ত্রী কিছুটা উচ্চগ্রামে কথা বলতে থাকেন। শিক্ষামন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, উপাচার্য কি তাঁকে ছাত্র ভাবছেন? উপাচার্যও বলতে থাকেন, ছ’মাসের আগে হিন্দু হস্টেল বাসযোগ্য করে তোলা যাবে না। তাঁকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক। রাজ্যপালের প্রশ্ন, তা হলে এই ছ’মাস ধরেই কি ছাত্র আন্দোলন চলবে? পুরো বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রীকে দেখতে বলেন রাজ্যপাল। বৈঠক শেষে অনুরাধাদেবীও শিক্ষামন্ত্রীকে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপের অনুরোধ করেন।
এ দিন যাদবপুরের প্রবেশিকা ঘিরে অশান্তির প্রসঙ্গও তোলেন রাজ্যপাল। উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে তিনি শক্ত হাতে প্রশাসন সামলানোর নির্দেশ দেন। আইনজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া, কর্মসমিতির বৈঠক বারবার ডাকা, পড়ুয়া, শিক্ষকদের অসন্তোষ—এসব যে তিনি পছন্দ করেননি, তা উপাচার্যকে বুঝিয়ে দেন রাজ্যপাল। পড়ুয়াদের হাতে বারবার তাঁর ঘেরাওয়ের প্রসঙ্গ তোলেন সুরঞ্জনবাবু। যাদবপুর এবং প্রেসিডেন্সির উপাচার্যদের সমস্যা ঘনীভূত হওয়ার আগেই তা মিটিয়ে ফেলতে ‘সক্রিয়’ হওয়ার পরামর্শ দেন রাজ্যপাল। প্রেসিডেন্সির সমাবর্তন নিয়ে এ বার যা হয়েছে, সে প্রসঙ্গও তোলেন তিনি। আচার্য জানান, ছাত্র আন্দোলনের আবহে সমাবর্তন আদৌ ওই সময় করা যাবে কি না, তা নিয়ে আগেই ভাবার প্রয়োজন ছিল।
এ দিনের বৈঠকে ছিলেন কলকাতা, বারাসত রাষ্ট্রীয়, রবীন্দ্রভারতী, কল্যাণী এবং বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যেরাও। রাজ্যপাল শিক্ষক এবং ছাত্রদের ঘাটতি যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে না থাকে, সে ব্যাপারে নজর দিতে বলেন। তাঁর মতে, শিক্ষকদেরও আচরণবিধি চালু হওয়া উচিত। রাজ্যপাল প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রতিষ্ঠা দিবসে সমাবর্তন অনুষ্ঠান করার পরামর্শ দেন। গাঁধী জয়ন্তী যথাযথ মর্যাদায় করারও নির্দেশ তিনি উপাচার্যদের দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy