Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কার্নিভালে ‘অসম্মান’, ক্ষুব্ধ রাজ্যপালের তোপ

রেড রোডে দুর্গা প্রতিমা নিয়ে কার্নিভালের আসরে তাঁকে ‘অসম্মান’ করা হয়েছিল বলে এ বার মুখ খুললেন রাজ্যপাল।

জাতীয় গ্রন্থাগারে সস্ত্রীক রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

জাতীয় গ্রন্থাগারে সস্ত্রীক রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৪৯
Share: Save:

অনুষ্ঠানের দিন তাঁর প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল, তিনি ‘মুগ্ধ’। কয়েক দিন পরে সে দিনের ঘটনায় তিনি আসলে ‘ক্ষুব্ধ’। জানালেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় নিজেই।

রেড রোডে দুর্গা প্রতিমা নিয়ে কার্নিভালের আসরে তাঁকে ‘অসম্মান’ করা হয়েছিল বলে এ বার মুখ খুললেন রাজ্যপাল। মূল মঞ্চের ধারে যেখানে তাঁর বসার ব্যবস্থা ছিল, সেখান থেকে ভাল করে তিনি কিছুই দেখতে পাননি। চার ঘণ্টার অনুষ্ঠান টিভি চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার হলেও তাঁকে এক বারও দেখানো হয়নি বলেও ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল। সংবাদমাধ্যম থেকে রাজ্যের প্রথম নাগরিককে এ ভাবে ‘ব্ল্যাক আউট’ করা রাজ্যপালকে ‘জরুরি অবস্থার কালো দিন’ মনে করিয়ে দিয়েছে।

রাজ্যপালের এমন ক্ষোভের প্রেক্ষিতে সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি তৃণমূলের মহাসচিব ও মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তবে তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যপাল কিছু বললেই কি তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে হবে? উনি বলছেন, ওঁকে বলতে দিন। এত গুরুত্ব দেওয়ার কী আছে! উনি সাংবিধানিক প্রধানের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করলেই ভাল।’’ প্রশাসনিক সূত্রে অবশ্য বলা হয়েছে, প্রথা মেনে রাজ্যপালের জন্য যাবতীয় বন্দোবস্তই কার্নিভালের দিন করা হয়েছিল। কয়েক দিন পরে রাজ্যপাল যে ভাবে অব্যবস্থা এবং অসম্মানের অভিযোগ করছেন, তা শুনে প্রশাসনিক শীর্ষ কর্তারা স্তম্ভিত!

রাজ্যপাল ধনখড় মঙ্গলবার বলেছেন, কার্নিভালে যেখানে তাঁর বসার আসন ছিল, তার সামনে অন্তত ২০-২৫ জন থাকায় তিনি ঠিকমতো অনুষ্ঠান দেখতে পাননি। রাজ্যপালের কথায়, ‘‘আমি বেশ কয়েক বার আসনের জায়গা বদলেছি। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা ধরে লাগাতার লোকজন দৃষ্টিপথে বাধা তৈরি করছিল। সব কি নিছক ঘটনাচক্র!’’ গোটা ঘটনা সর্বসমক্ষে ঘটেছে। কিন্তু তার পরেও সংবাদমাধ্যম এই বিষয়ে নীরব থাকায় তিনি স্তম্ভিত বলে মন্তব্য করেছেন রাজ্যপাল। নীরবতা দেখেই তিনি নিজে মুখ খুলছেন বলে রাজ্যপালের ব্যাখ্যা।

রাজ্যপালের আরও দাবি, গোটা অনুষ্ঠানটাই নিজের পরিবারকে নিয়ে ‘বিচ্ছিন্ন’ হয়ে তিনি বসেছিলেন। কেউ চাইলেও তাঁর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে আসতে পারেননি। কার্নিভালে উপস্থিতি জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্যদের কেউ কেউ পরে তাঁর কাছে দুঃখপ্রকাশ করেছেন বলেও রাজ্যপালের দাবি।

তবে নবান্ন সূত্রের ব্যাখ্যা, কার্নিভালে রাজ্যপালের মঞ্চ লাগোয়া ‘অ্যান্টি চেম্বার’ তৈরি করা হয়েছিল। এমনকি, রাখা ছিল তাঁর জন্য নির্দিষ্ট ‘প্যান্ট্রি’র ব্যবস্থা। রাজ্যপালকে অনুষ্ঠান-স্থলে স্বাগত জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে। মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ তাঁকে নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিলেন। অনুষ্ঠানের শেষে মুখ্যমন্ত্রীই বিদায় জানান রাজ্যপালকে। প্রোটোকল বা প্রথামাফিক যা যা করণীয়, তা-ই করেছিল রাজ্য সরকার। প্রশাসনের আর একটি মহলের ব্যাখ্যা, সকলের সঙ্গে এক মঞ্চে রাজ্যপালকে বসানো শোভন নয় বলেই তাঁর জন্য পৃথক মঞ্চের ব্যবস্থা হয়েছিল।

রাজ্যপালও মেনে নিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে স্বাগত ও বিদায় জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার বাইরে আর যা যা হয়েছে, তা ‘অসহিষ্ণুতা’র বহিঃপ্রকাশ। প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা এর জন্য আত্মানুসন্ধান করবেন বলেও তাঁর আশা।

বিজেপি অবশ্য মনে করছে, রাজ্যপালের ক্ষোভ সঙ্গত। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘রাজ্যপালকে লোকচক্ষুর আড়ালে বসানো হয়েছিল। সাংবিধানিক প্রধানের পক্ষে এটা অপমানজনক। সত্য কথা বলেছেন বলেই হয়তো উনি সরকারের পক্ষে অস্বস্তিকর। উনি চোখ দিয়ে দেখেন, কান দিয়ে দেখেন না!’’ কার্নিভালে উপস্থিত বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানেরও বক্তব্য, ‘‘অনেকেরই মনে হয়েছে, সে দিন রাজ্যপালকে যথাযথ সম্মান দেখানো হয়নি। রাজ্য সরকারের উচিত এই নিয়ে বিতর্ক না বাড়িয়ে তাঁর কাছে দুঃখপ্রকাশ করে নেওয়া।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Governor Jagdeep Dhankhar Carnival Durga Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE