গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ
খোদ মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারেই মতবিরোধ। জল্পনা অন্তত তেমনই। একটা হ্যান্ড-আউটকে কেন্দ্র করে ছড়িয়েছে জল্পনা। রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের অভিযোগে আচমকা সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাইয়ের নেতৃত্বাধীন সংগঠন। আর মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপোর ঘনিষ্ঠ বৃত্ত মন্তব্য করতে চাইছে না। বলছে, এমন কোনও হ্যান্ড-আউটের বিষয়ে কিছুই জানা নেই।
তৃণমূলের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে সদ্য তুলে ধরা হয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তৃণমূলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরেই অভিষেকের স্থান— সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সি এবং মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় সম্প্রতি এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে এই বার্তা শুনিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তার কয়েক দিনের মধ্যেই উল্টো সুর যেন পরিবারের মধ্যে থেকেই। তৃণমূলনেত্রীর ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংস্থা ‘বিবেক’-এর তরফ থেকে সম্প্রতি বিতর্ক উস্কে দেওয়া হয়েছে পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ তুলে। ‘‘গতকাল যাকে রাজনীতির ময়দানে দেখা যায়নি, আজ সে রাজনীতির শীর্ষস্থানে চলে গেছে।’’ লেখা হয়েছে ‘বিবেক’ প্রকাশিত একটি হ্যান্ড-আউটে।
কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সংস্থা ‘বিবেক’ আসলে একটি বিতর্ক সভার আয়োজন করেছিল। বিতর্কের বিষয় হল, ‘পরিবারতন্ত্র না গণতন্ত্র— কোথায় দাঁড়িয়ে আমরা’। সেই বিতর্ক সভাতেই হ্যান্ড-আউটটি প্রকাশ করা হয়। তাতে কী লেখা হয়েছে? রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের প্রবল নিন্দা করে তাতে লেখা হয়েছে, ‘‘স্বাধীনতার অন্যতম শর্ত ছিল, আমরা রাজন্য প্রথা থেকে গণতান্ত্রিক পথে যাব, অর্থাৎ সামন্ততান্ত্রিক প্রথা থেকে গণতান্ত্রিক প্রথায় ফিরব। সেটাই আমাদের উদ্দেশ্য ছিল, কিন্তু দেখা গেল আবার সেই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বিভিন্ন অছিলায় আমাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে একটা ফ্যাসিস্ট ও পারিবারিক শাসনের মধ্যে।’’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তৃণমূলও এই আক্রমণের বাইরে থাকছে না।
আরও খবর: ফেসবুক লাইভ করে আত্মঘাতী ছাত্রী, সোনারপুরে
পুরুলিয়ার জঙ্গলে পাখি থেকে হরিণ খেয়ে সাফ, সৌজন্যে নাগা পুলিশ
‘বিবেক’-এর হ্যান্ড-আউটটি একটি নিবন্ধের আকারে প্রকাশিত। লেখক বিবেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কে এই বিবেক বন্দ্যোপাধ্যায়? কেউই ঠিক জানেন না। বিবেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিবন্ধে কি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নাম করে আক্রমণ করা হয়েছে? না, তা-ও করা হয়নি। পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ তুলে কংগ্রেসকে আক্রমণ করা হয়েছে হ্যান্ড-আউটটিতে। বিহার, উত্তরপ্রদেশেও রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র চলছে বলে লালু এবং মুলায়মের পরিবারকে নাম না করে আক্রমণ করা হয়েছে। হ্যান্ড-আউটে বাংলার নাম একবারও আসেনি। তৃণমূল, মমতা,অভিষেক— এ সব শব্দও সেখানে নেই। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেককে দলের একেবারে প্রথম সারিতে তুলে আনার প্রক্রিয়া যখন প্রায় ঘোষিত ভাবেই শুরু হয়ে গিয়েছে, ঠিক তখনই পরিবারতন্ত্রের সমালোচনা করে কার্তিকের নেতৃত্বাধীন সংস্থা ‘বিবেক’ হ্যান্ড-আউট প্রকাশ করছে, একে নেহাৎ কাকতালীয় বলে ভাবতে রাজি নয় রাজনৈতিক শিবির।
সেই বিতর্কিত হ্যান্ডআউটের কিয়দংশ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
‘বিবেক’ প্রকাশিত নিবন্ধটির বক্তব্য হল— রাজনৈতিক নেতারা এখন ব্যক্তিস্বার্থে বা পরিবারের স্বার্থে রাজনীতি করেন, সমষ্টির স্বার্থে নয়। মাঝে-মধ্যে এই নেতারা সমষ্টির স্বার্থের কথা বলেন, ‘‘কারণ তাদের ক্ষমতায় থাকার জন্য মানুষকে ভোলানোর জন্য একটা জনদরদী মুখোশ দরকার হয়’’— এমন কথাও লেখা হয়েছে সেখানে। পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতিকে দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এই সব পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতিকদের কেন ভোট দেন সাধারণ মানুষ? সে প্রশ্নও তোলা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রীর ভাই সমীর বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে কার্তিক হলেন ‘বিবেক’-এর আহ্বায়ক। আর সংস্থার চেয়ারম্যান হলেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। মমতার ছায়ায় যখন অভিষেকের উত্থান শুরু হয়েছে দলে, তখন কার্তিকের সংগঠন পরিবারতন্ত্র নিয়ে বিতর্ক সভা আয়োজন করল কেন, কেনই বা কঠোর বয়ানের হ্যান্ড-আউট প্রকাশ করল, তা নিয়েই জল্পনা জোরদার এখন।
হ্যান্ড-আউটে যা লেখা হয়েছে, তার সঙ্গে তিনি সম্পূর্ণ সহমত বলে কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি বাংলা সংবাদমাধ্যমের একাংশে মন্তব্য করেছেন বলে খবর। কিন্তু ওই পর্যন্তই। আরও বিশদ ব্যাখ্যার জন্য সোমবার সকাল থেকে বার বার ফোন করা চেষ্টা হয়েছিল কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। যোগাযোগ করা যায়নি।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এখন কলকাতায় নেই। তিনি চিকিৎসার জন্য বাইরে রয়েছেন। হ্যান্ড-আউট যে দিন প্রকাশিত হয়েছিল, সে দিন অবশ্য অভিষেক কলকাতাতেই ছিলেন। কিন্তু তাঁর তরফ থেকে কোনও মন্তব্য সে সময় মেলেনি। সোমবার অভিষেকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিগত সহায়ক জানিয়ে দেন, এমন কোনও হ্যান্ড-আউটের বিষয়ে তাঁদের কিছুই জানা নেই। বিষয়টা জেনে নিয়েই যা বলার বলা হবে, জানানো হয় অভিষেকের অফিসের তরফে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy