অবশেষে জামিন পেলেন হাবরার স্কুলের প্রধান শিক্ষক।
দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগে শুক্রবার রাত আড়াইটের সময়ে বিরাটির বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করেছিল হাবরা পুলিশ। পর দিন হাতকড়া পরিয়ে আনা হয় বারাসত আদালতে। যা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
প্রধান শিক্ষককে গ্রেফতারের ঘটনায় পুলিশের অতিসক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। মঙ্গলবার বারাসত আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করায় সেই প্রশ্নগুলিই আরও জোরদার হল বলে মনে করছেন অনেকে।
বারাসত আদালতের দ্বিতীয় জেলা ও দায়রা বিচারক দুলালচন্দ্র করের এজলাসে তোলা হয়েছিল অভিযুক্ত শিক্ষককে। এ দিন অবশ্য হাতকড়া পরানো হয়নি। শিক্ষকের সঙ্গে ছিলেন তাঁর পরিবার ও সহকর্মীদের একাংশ। এজলাসে একটি টুলের উপরে চুপচাপ বসেছিলেন প্রধান শিক্ষক।
জামিন পাওয়ার পরে তাঁর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘‘এ সব নিয়ে কিছুই জানি না। কেন এমন ঘটল, বলতে পারব না।’’ ওই স্কুলের এক শিক্ষক ছিলেন স্যারের সঙ্গে। তিনি অবশ্য বলেন, ‘‘আমরা খুশি। স্যার নির্দোষ প্রমাণ হলে শান্তি পাব।’’
সরকারি কৌঁসুলি শান্তময় বসু এবং মৃণালকান্তি দাস জানান, বিচারক ওই প্রধান শিক্ষকের অন্তবর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেছেন। বিরোধিতা করেননি সরকারি আইনজীবীরা।
রণজিৎ সাহার নেতৃত্বে কয়েকজন আইনজীবী প্রধান শিক্ষকের হয়ে সওয়াল করেন। বিচারকের সামনে পুলিশি তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে নানা অসঙ্গতির কথা উল্লেখ করেন তাঁরা।
কী সেই অসঙ্গতি?
• ছাত্রটির দাবি, ২৪ অক্টোবর স্কুলের একটি ঘরে তাকে যৌন হেনস্থা করেন ওই প্রধান শিক্ষক। কিন্তু তার বেশ কিছু দিন পরে, ৪ নভেম্বর কেন অভিযোগ দায়ের হল থানায়, আইনজীবীরা সেই প্রশ্ন তোলেন। ছেলেটির ডাক্তারি পরীক্ষায় শ্লীলতাহানি সম্পর্কে কোনও প্রমাণ দাখিল করতে পারেনি পুলিশ, সে কথাও জানান তাঁরা।
• আইনজীবীরা আদালতকে জানান, মামলা দায়ের হওয়ার পরে ভিসেরা পরীক্ষার জন্য যে সব নমুনা (মূলত জামাকাপড়) ফরেন্সিকে পাঠানোর দরকার ছিল, তা-ও পাঠায়নি পুলিশ। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি ফরেন্সিক পরীক্ষায় কিছু মিলবে না জেনেই উচ্চবাচ্য করেনি পুলিশ?
• হাবরার পুলিশ রাতবিরেতে ব্যারাকপুর কমিশনারেট এলাকায় গিয়ে প্রধান শিক্ষককে গ্রেফতার করলেও সংশ্লিষ্ট বেলঘরিয়া থানা বা কমিশনারেটকে কেন কিছু জানায়নি, সে কথাও উল্লেখ করেন আইনজীবীরা।
• গ্রেফতারের পরে ‘অ্যারেস্ট মেমো’তে পরিবার বা প্রতিবেশীদের সাক্ষ্য নেই। শুধুমাত্র এক জন কেয়ারটেকারের সই আছে। তা-ই বা কেন, সেই নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে আদালতে।
এ সব ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের নিয়ম লঙ্ঘিত হয়েছে বলে আদালতে দাবি করেন প্রধান শিক্ষকের আইনজীবীরা। কেন প্রধান শিক্ষককে থানা থেকে আদালতে হাজির করানোর সময়ে হাতকড়া পরানো হয়েছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। একমাত্র জঙ্গি বা দাগি অপরাধীদের ক্ষেত্রেই হাতকড়া পরানো যেতে পারে। সে ক্ষেত্রেও কেন হাতকড়া পরানো হল, তার কারণ দর্শিয়ে জেনারেল ডায়েরি করার কথা পুলিশের।
এ ক্ষেত্রে ওই শিক্ষকের সম্মানহানি করাই উদ্দেশ্য ছিল কি না, উঠেছে সে প্রশ্ন। আইনজীবীদের সমস্ত যুক্তি শোনার পরে শিক্ষকের জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক।
তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে বা প্রধান শিক্ষকের জামিন মঞ্জুর হওয়া প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করেননি উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়।
গোটা ঘটনায় অবশ্য চক্রান্তের গন্ধ পাচ্ছেন বিরোধীরা।
এ দিন ওই দ্বাদশ শ্রেণির স্কুলে এসে টেস্ট পরীক্ষা দিয়েছে। শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, সে স্বাভাবিক ছিল। বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলেছে। তবে প্রধান শিক্ষক কবে কাজে যোগ দিচ্ছেন, তা নিয়ে পরিবারের তরফে কোনও মম্তব্য করা হয়নি।
পরিচালন সমিতির তাতে কোনও আপত্তি নেই তো?
সমিতির সম্পাদক বলরাম পাল বলেন, ‘‘এটা কোনও ব্যক্তিগত বিষয় নয়। আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy