Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘গণ’ধর্ষণ নিয়ে বিতর্ক, ধূপগুড়ির বধূ আশঙ্কাজনক

আদিবাসী বধূকে নির্যাতনের তদন্তে নেমে আঁতকে উঠেছেন পুলিশের অফিসাররা। নির্যাতনে প্রধান অভিযুক্তকে সোমবার দু’দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:১১
Share: Save:

আদিবাসী বধূকে নির্যাতনের তদন্তে নেমে আঁতকে উঠেছেন পুলিশের অফিসাররা। নির্যাতনে প্রধান অভিযুক্তকে সোমবার দু’দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। তার পরে জেরা করতে গিয়ে জানা গিয়েছে, ওই মহিলাকে ধর্ষণ করে তাঁর শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল মাথায় কাঁটা লাগানো লোহার তীক্ষ্ণ ফলা। এমন ফলা এই এলাকায় মাছ ধরতে ব্যবহার করেন অনেকে। জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই বধূর অস্ত্রোপচার হয়েছে রবিবার গভীর রাতে। তার পরেও তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। আঘাত ও রক্তক্ষরণে অবসন্ন হয়ে পড়েছেন তিন সন্তানের জননী ওই বধূ। ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে রেখে তাঁর চিকিৎসা চলছে। তাঁর সাত মাসের মেয়েকেও হাসপাতালেই রাখা হয়েছে। সে মাকে ছেড়ে থাকতে পারে না।

শনিবার সন্ধেয় বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে তাঁরই এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ওই বধূকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। বধূর ওই আত্মীয়ের সঙ্গে ছিল তাঁর প্রতিবেশী আর এক যুবকও। পুলিশ দু’জনকেই রবিবার দুপুরে গ্রেফতার করে। তখন জেলা পুলিশ জানিয়েছিল, ওই বধূকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। তবে রাজ্য পুলিশের এডিজি অনুজ শর্মা তার পরপরই বিবৃতি দেন, ওই মহিলাকে তাঁর প্রতিবেশী এক যুবকই ব্যক্তিগত বিদ্বেষ থেকে ধর্ষণ করেছে। তাই শুধু তার বিরুদ্ধেই ধর্ষণের মামলা দেওয়া হয়েছে। এর পরেই জেলা পুলিশও তাদের বক্তব্য বদলে দেয়। জেলার পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি বলেন, ‘‘আমরা দু’জনকে গ্রেফতার করেছি। প্রথমে গণধর্ষণই ভাবা হয়েছিল। তবে ধৃতদের এক জন জেরায় অপরাধ কবুল করে নিয়েছে। তদন্তে জানতে পেরেছি, অন্য জন মহিলাকে নির্যাতন করেনি। তাই তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আপাতত তুলে নেওয়া হয়েছে।’’ জলপাইগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অভিজিৎ সরকার বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের রায় রয়েছে, ধর্ষণের সময় উপস্থিত সকলের বিরুদ্ধেই ধর্ষণের অভিযোগে আনতে হবে। সে ক্ষেত্রে তা গণধর্ষণ বলেই মামলা করতে হবে।’’ এই প্রসঙ্গে অমিতাভবাবুর জবাব, ‘‘দ্বিতীয় ব্যক্তি ঘটনার সময় উপস্থিত ছিল। সুপ্রিম কোর্টের রায় খতিয়ে দেখছি। প্রয়োজনে দ্বিতীয় ব্যক্তির বিরুদ্ধেও ফের ধর্ষণের অভিযোগ যুক্ত করা হবে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, ধর্ষণের অভিযোগ আপাতত তুলে নেওয়া হলেও ওই যুবকের বিরুদ্ধে একই উদ্দেশ্যে ঘটনাস্থলে হাজির থাকার অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

গণধর্ষণ: আইন কী বলে

ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬(২)(জি) ধারা

• ব্যাখ্যা: যদি একটি দলের এক বা একাধিক ব্যক্তি একই উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে কোনও নারীকে ধর্ষণ করে তবে দলের প্রত্যেকে গণধর্ষণ করেছে বলে মনে করা হবে।

• শাস্তি: দশ বছর থেকে শুরু করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড।

তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই বধূর পরিবারের সঙ্গে আত্মীয়দের জমি নিয়ে বিবাদ ছিল। তা ছাড়াও, ধর্ষণে অভিযুক্ত যুবকের বিরুদ্ধে ২০১১ সালে পাড়ারই এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল। সেই ঘটনার অন্যতম সাক্ষী ছিলেন নির্যাতিতা বধূ। এসপি অমিতাভবাবু বলেন, ‘‘বুধবার ওই বধূর গোপন জবানবন্দি নেওয়া হতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Controversy Woman Health Condition Poor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE