Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বিধি বদল ন্যাকো-র, বাতিল রক্ত নষ্টের সিদ্ধান্তও

যৌনপল্লি থেকে সংগ্রহ করা ২২২ ইউনিট রক্ত নষ্ট করার সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটল স্বাস্থ্য দফতর। সোনাগাছি ও হাড়কাটা গলিতে আয়োজিত রক্তদান শিবির থেকে সংগ্রহ করা রক্ত ফেলে দেওয়া হবে বলে গত বৃহস্পতিবার লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।

সোমা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৫ ০৩:২৩
Share: Save:

যৌনপল্লি থেকে সংগ্রহ করা ২২২ ইউনিট রক্ত নষ্ট করার সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটল স্বাস্থ্য দফতর। সোনাগাছি ও হাড়কাটা গলিতে আয়োজিত রক্তদান শিবির থেকে সংগ্রহ করা রক্ত ফেলে দেওয়া হবে বলে গত বৃহস্পতিবার লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু চার দিনের মাথাতেই সোমবার স্বাস্থ্য দফতর জানিয়ে দিল, রক্ত নষ্ট করার প্রশ্নই নেই।

কেন নিজেদের অবস্থান থেকে এ ভাবে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যাওয়া হল? স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, ন্যাশনাল এডস কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (ন্যাকো)-এর সঙ্গে তাঁদের কথা হয়েছে। ন্যাকো তাঁদের জানিয়েছে, যৌনপল্লির দু’কিলোমিটারের মধ্যে রক্তদান শিবির করার ক্ষেত্রে কোনও বিধিনিষেধ থাকছে না। আর বিধিনিষেধ যদি না-ই থাকে, তা হলে রক্ত নষ্ট করারও কোনও প্রশ্ন ওঠে না।

কেন বিধিনিষেধ থাকছে না? ন্যাকো সূত্রে খবর, এ রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা তাঁদের জানিয়েছেন, দু’কিলোমিটারের যুক্তি মানতে গেলে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, এসএসকেএম-সহ আরও একাধিক মেডিক্যাল কলেজের নিজস্ব ব্লাড ব্যাঙ্কই তুলে দিতে হবে। কারণ ওই কলেজগুলিও যৌনপল্লির দু’কিলোমিটারের মধ্যেই পড়ছে। তা ছাড়া, দু’কিলোমিটারের যুক্তি মানতে গিয়ে গত কয়েক দিনে বিভিন্ন সংস্থা তাদের ক্যাম্প বাতিল করেছে। ফলে রক্ত সংগ্রহ কমে গিয়েছে।

ন্যাকো-র এক কর্তা বলেন, ‘‘এই কারণেই দু’কিলোমিটারের বিধিনিষেধ অযৌক্তিক বলে মনে করছি আমরাও। কিন্তু রক্তসুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য যৌনপল্লির মধ্যে শিবির করার ব্যাপারে এখনও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পেশাদার যৌনকর্মী, একাধিক যৌন সঙ্গী রয়েছে যাঁদের কিংবা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে মাদক নেন যাঁরা তাঁদের কাছে থেকে রক্ত নেওয়া যাবে না।’’

এই যুক্তিকে অবশ্য মানতে চাননি চিকিৎসকদের একটা বড় অংশই। তাঁদের মতে, এমনিতেই রক্তসুরক্ষার কোনও বালাই নেই রাজ্যে। ফলে থ্যালাসেমিয়া, হিমোফিলিয়া বা অন্য যে রোগীদের নিয়মিত রক্ত নিতে হয়, তাদের অনেকেই হেপাটাইটিস বি, সি কিংবা এইচআইভি সংক্রমণের শিকার হয়। রাশ আলগা করা হলে এ বার সে নিয়ে আরও যথেচ্ছাচার চলবে।

গত ১১ ও ১৬ জুলাই কিন্তু যৌনপল্লির অদূরে নয়, রক্তদান শিবির হয়েছিল যৌনপল্লির ভিতরেই। প্রথমটি সোনাগাছিতে এবং দ্বিতীয়টি হাড়কাটা গলিতে। সোনাগাছিতে সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্ক এবং হাড়কাটা গলিতে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাঙ্ক রক্ত সংগ্রহ করে। এই খবর আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পরেই বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। বিজেপি-র রাজ্য সহ সভাপতি, চিকিৎসক সুভাষ সরকার গত বৃহস্পতিবার সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্ক এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। দুই ব্যাঙ্কের অধিকর্তাই লিখিত ভাবে জানিয়ে দেন, দুই শিবির থেকে সংগ্রহ করা রক্তই নষ্ট করে ফেলা হবে। পাশাপাশি, ভবিষ্যতে ওই ধরনের এলাকায় শিবির না করারই চেষ্টা করবেন তাঁরা।

এ দিন অবশ্য স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ কর্তারা সম্পূর্ণ ভিন্ন সুরে কথা বলেছেন। রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘রক্ত নেওয়ার আগে দাতার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হবে। আর রক্ত নেওয়ার পরে ম্যালেরিয়া, হেপাটাইটিস বি, সি, এইচআইভি, সিফিলিস-এর পরীক্ষা করে নেওয়া হবে। এ ছাড়া যেখানে রক্তদান শিবির হবে, সেই জায়গাটা যেন পরিচ্ছন্ন হয়, ব্যস, এটা মেনে চলাই যথেষ্ট।’’

রাজ্যের এই মনোভাবের পরিণতি সাধারণের পক্ষে ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছে রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নানা সংগঠন। রক্তদান আন্দোলনের কর্মী অপূর্ব ঘোষ বলেন, ‘‘রক্তগ্রহিতার স্বার্থ উপলব্ধি না করে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া একেবারেই ঠিক নয়।’’ একই বক্তব্য রক্তদান আন্দোলনের কর্মী দীপঙ্কর মিত্রের। তিনি বলেন, ‘‘ন্যাকো তো কোনও কিছুর বিনিময়ে রক্ত দেওয়ার বিষয়টি নিষিদ্ধ করেছে। সেটাও তো এ রাজ্যে মানা হয় না। তার উপরে এলাকাগত বিধিনিষেধও যদি শিথিল হয়, তা হলে সমস্যা জটিল হবে।’’

স্বাস্থ্য দফতরের এ দিনের সিদ্ধান্তে স্তম্ভিত সুভাষবাবুও। তিনি বলেন, ‘‘এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’’ বিষয়টি নিয়ে তিনি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE